Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Artist

আর এক লজের কর্মীদের ব্যবহারে আপ্লুত তৌসিফ-জয়ন্তী

মুসলিম যুবকের স্ত্রী হিন্দু হওয়ায় ওই দম্পতিক ঘর পাননি বলে অভিযোগ।

চিত্রশিল্পী তৌসিফ হক। ছবি: সংগৃহীত।

চিত্রশিল্পী তৌসিফ হক। ছবি: সংগৃহীত।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৫২
Share: Save:

হুগলিতে বনভোজন করতে এসে শুধু ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ সঞ্চয় করেছেন, এমনটা মনে করেন না বর্ধমানের বাসিন্দা তৌসিফ হক ও তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাস। হুগলি ছাড়ার আগে ‘সেলাম’ জানিয়েছেন চুঁচুড়া বাসস্ট্যান্ডের অদূরে অবস্থিত একটি লজের কর্মীদের, যাঁরা অসহায় তৌসিফ ও তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে রবিবার আশ্রয় দিয়েছিলেন তাঁদের পরিচয়পত্র না দেখেই।

মঙ্গলবার তৌসিফ বলেন, ‘‘ধর্ম ভিন্ন হওয়ায় একটি লজের কর্তৃপক্ষ আমাদের ঘর দেননি। তবে শুধু এইটুকু বলে থেমে গেলে হবে না। ওই লজ থেকে বেরিয়ে সেই রাতে আমি আমার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে আর একটি লজে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রবীণ এক কর্মী আমার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখে দ্রুত ঘরের ব্যবস্থা করেন। আগে আমাদের ঘরে নিয়ে যান। তারপর নথি দেখতে চান। পিতৃসম ওই মানুষটি আমার স্ত্রীকে ‘মামনি’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। লজের অন্য এক কর্মীকে তিনি বলেছিলেন, ‘আগে মামনিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে যাও। ওর বিশ্রাম প্রয়োজন। তারপর বাকি কাজ (পরিচয়পত্র জমা নেওয়া) হবে।’’ ওই লজের কর্মীদের ব্যবহারে আপ্লুত তৌসিফ এবং তাঁর স্ত্রী। তৌসিফের কথায়, ‘‘আমার অভিজ্ঞতা তিক্ত নয়, মধুরও বটে। তাই সবটা এক সঙ্গে না-দেখলে গোটা চিত্রটা তুলে ধরা যাবে না।’’

রবিবার হুগলিতে বনভোজনে এসেছিলেন সস্ত্রীক তৌসিফ। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জয়ন্তীদেবী। দম্পতি সেই রাতটা হুগলিতেই কাটিয়ে যাবেন বলে স্থির করেন। হুগলি মোড়ে একটি লজে গিয়ে তাঁরা ঘর ভাড়া চান। কিন্তু মুসলিম যুবকের স্ত্রী হিন্দু হওয়ায় ওই দম্পতিক ঘর পাননি বলে অভিযোগ। সম্পর্কের সত্যতা প্রমাণে বিবাহের শংসাপত্রও দেখিয়েছিলেন তৌসিফ। তারপরেও ঘর জোটেনি।

তৌসিফ বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী বিশেষ একটি অসুখে আক্রান্ত। তাঁর পেটে মাঝেমধ্যেই ‘ক্র্যাম্প’ (টান) ধরে। যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন একটি ইঞ্জেকশন দিতে হয়। আধ ঘণ্টার মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে যান। শুধু ওই ইঞ্জেকশনটুকু দেওয়ার জন্য আমার একটি ঘরের প্রয়োজন ছিল।’’

হুগলি মোড়ের ওই লজে ঘর না-পেয়ে বেরিয়ে আসেন দম্পতি। তৌসিফ বলেন, ‘‘স্ত্রীর যন্ত্রণা বাড়ছিল। ওই অবস্থায় তাঁকে ধরে ধরে কোনওরকমে একটি টোটোয় তুলে ঘড়ির মোড়ের কাছে আর একটি লজে যাই। সেখানের কর্মীদের থেকে যে ব্যবহার ও ভালবাসা পেয়েছি, তা ভুলব না।’’

হুগলিতে এসে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁদের হয়েছে, তা দ্রুত ভুলতে চান ওই দম্পতি। তবে প্রশাসন বা অন্য কারও কাছে তাঁরা কোনও অভিযোগও জানাতে চান না। তৌসিফ বলেন, ‘‘আমি কারও কাছে কোনও অভিযোগ করতে চাই না। এর আগেও হোটেল বা লজে ঘর চাইতে গিয়ে বিয়ের শংসাপত্র দেখাতে হয়েছে। সেই কারণেই আমি মোবাইলে বিয়ের শংসাপত্রের ছবি রেখে দিই। কিন্তু সেই নথি দেখিয়েও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনা আগে কোথাও ঘটেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Communalism artist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE