‘সবুজ’ বঙ্গে যে ক’টি এলাকায় এখনও বিরোধী পতাকা উড়ছে, তার মধ্যে একটা আমতা। কিন্তু উলুবেড়িয়া উপ-নির্বাচনে নিজেদের সেই ‘গড়’ রক্ষাতেও ব্যর্থ হল কংগ্রেস।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও আমতা বিধানসভা কেন্দ্র ছিল কংগ্রেসের দখলে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে ফের এই কেন্দ্রে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখে শতাব্দীপ্রাচীন দলটি। কিন্তু এ বার ছবিটা আলাদা। উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে আমতা কেন্দ্র থেকে তারা ধুয়েমুছে সাফ!
এ বার আমতায় কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৭১৬০টি ভোট। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। যা থেকে স্পষ্ট, কংগ্রেসের ভোটাররা সরে যাচ্ছেন। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। প্রার্থী মুদস্সর ওয়ারসিকে অনেকেই যে চেনেন না, তা-ও খোলাখুলি জানিয়েছিলেন। ভোটের ফলে তার ছাপ পড়েছে বলেও মনে করছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ।
যদিও এ কথা মানতে চাননি আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা জেতার জন্য ভোটে লড়িনি। লড়াইটা ছিল কংগ্রেসের আদর্শ রক্ষার।’’
লোকসভা উপ-নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক পরিসংখ্যান
তৃণমূল বিজেপি সিপিএম কংগ্রেস
• উলুবেড়িয়া পূর্ব ৮৭,৭৬৯ ৫২,৭৮৮ ২০,২১১ ৪,১০৭
• উলুবেড়িয়া উত্তর ৯০,২৭৭ ৪৫,৪৮৭ ২০,৩১৫ ২,৩৯৪
• উলুবেড়িয়া দক্ষিণ ৯৪,১৪১ ৫৬,১১৮ ১৮,১৯৬ ১,৬১০
• শ্যামপুর ১,১৩,৯৯৭ ৪২,২৬২ ২৬,৫২৯ ৩,৭২৭
• বাগনান ১,২২,৮৫৬ ৩৭,১৮ ১৫,২৮৪ ২,২৭৩
• আমতা ১,১৭,১৩২ ৩৩,৬৪৮ ২৫,৫৩৯ ৭,১৬০
• উদয়নারায়ণপুর ১,৪১,০৫৭ ২৫,৫৩০ ১২,৭১৮ ১,৮৩৭
কিন্তু এই কেন্দ্রে এত কম ভোট কেন পেল তাঁর দল?
অসিতবাবুর জবাব, ‘‘লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি মনে করি না, কংগ্রেস বিধায়ক হিসাবে আমতায় আমার পায়ের তলার মাটি আলগা হয়েছে।’’
একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেন, ‘‘উলুবেড়িয়ায় আমাদের জেতার আশা ছিল না। আমরা লড়েছিলাম নিজেদের জনসমর্থন এবং সংগঠন কী অবস্থায় আছে, দেখার জন্য।’’
বিজেপি অবশ্য শুধু আমতায় নয়, উপ-নির্বাচনে এই লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই দ্বিতীয় হয়েছে তারা। তবে, তাদের ভোট সর্বত্র সমান ভাবে বাড়েনি। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, শহরঘেঁষা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে তাদের ভোট ২০১৪ সালের লোকসভার ফলের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। উলুবেড়িয়া পূর্ব এবং উলুবেড়িয়া দক্ষিণ— এই দু’টি শহরঘেঁষা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ভোট পেয়েছে যথাক্রমে ৫২, ১৮৬ এবং ৫৬, ১১৫টি। ‘গ্রামাঞ্চল’ বলে পরিচিত উলুবেড়িয়া উত্তর, শ্যামপুর, বাগনান, আমতা এবং উদয়নারায়ণপুরে তাদের ভোট ৫০ হাজার ছুঁতে পারেনি।
বিজেপির এই বৃদ্ধিকে সিপিএম ‘মেরুকরণের রাজনীতির ফল’ বলে মনে করছে। সিপিএম নেতারা খোলাখুলি স্বীকার করছেন, তাদের ভোটারদের এখটা বড় অংশ বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতিতে প্রভাবিত হয়েছেন। তৃণমূলের ব্যাখ্যা অবশ্য আলাদা। বিজেপির দ্বিতীয় হওয়ার পিছনে তারা সিপিএমের বিরুদ্ধে ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ’-এর তত্ত্ব সামনে আনছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপিকে তলে তলে মদত দিয়েছে সিপিএম।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, এই ফলাফল তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। বস্তুত, সাংসদ সুলতান আহমেদের মৃত্যুর পর থেকেই বিজেপি এই নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করেছিল। বাড়ি বাড়ি প্রচার, বিস্তারকদের বৈঠক বা বুথওয়াড়ি প্রচার চলেছে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে। কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষের মতো নেতারা উলুবেড়িয়ায় কার্যত ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন। প্রচারে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও।
বিজেপি প্রার্থী অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘মেরুকরণের অভিযোগ ঠিক নয়। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা। এটা তারই ফল। মানুষ আমাদের প্রকৃত বিরোধী হিসাবে বেছে নিতে ভুল করেননি। বহু জায়গায় আমাদের এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। বুথ ক্যাম্প করতে দেওয়া হয়নি। এই সব না হলে এই কেন্দ্রে আমরাই জিততাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy