Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বিধি না-মানায় বিপাকে উলুবেড়িয়া পুরসভা 

আট বছরে হাতছাড়া প্রায় ২২ কোটি টাকা

উলুবেড়িয়া পুরসভা।—ছবি সংগৃহীত।

উলুবেড়িয়া পুরসভা।—ছবি সংগৃহীত।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

বছরভর উলুবেড়িয়া শহরের নানা প্রান্তে, খালে-নালায় আবর্জনা জমে থাকে। পরিষ্কার হয় নামেই। কারণ, ন’বছর আগে ওই খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করে ফেলেছিল উলুবেড়িয়া পুরসভা। তার জন্য ভুগতে হচ্ছে এখনও। বছরে সাফাইয়ের কাজে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর যে আড়াই কোটি টাকা করে দিত, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব আয় থেকে কোনও মতে শহর সাফাইয়ের কাজ চালাচ্ছেন।

এক পুরকর্তা জানান, পুরসভার নিজস্ব আয় এত বেশি নয় যে তা দিয়ে গোটা শহরকে ভাল ভাবে আবর্জনামুক্ত করা যায়। ফলে, সাফাইকাজ ব্যাহত হচ্ছে। কোনও মতে সামাল দেওয়া দেওয়া হচ্ছে। পুরপ্রধান অভয় দাস বলেন, ‘‘ক’দিন আগে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে অনুরোধ করেছি, কী ভাবে আইনি জট কাটিয়ে ফের আমাদের টাকা দেওয়া শুরু করা যায়, সেই বিষয়টি বিবেচনা করতে।’’

কিন্তু সাফাই খাতের টাকা কোন খাতে খরচ করেছিল পুরসভা?

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে সাফাই খাতের প্রায় দেড় কোটি টাকায় বাউড়িয়ায় ডাম্পি গ্রাউন্ড তৈরির জন্য বিঘাখানেক জমি কেনা হয়। বাণীতবলায় একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড থাকলেও তখন পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বাউড়িয়ার জমিতে আরও একটি তৈরি করা হবে। যেখানে বাউড়িয়া এবং চেঙ্গাইল এলাকার বর্জ্য ফেলা হবে। ওই টাকায় প্রচুর বালতিও কিনে বাড়ি বাড়ি বিলি করা হয়েছিল। যাতে বাসিন্দাদের জমা করা বাড়ির বর্জ্য পুরসভার সাফাইকর্মীরা নিয়ে গিয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে রেখে আসতে পারেন।

কিন্তু পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর দু’টি কাজই অনুমোদন করেনি। দফতর জানিয়ে দেয়, জমি বা বালতি কেনার জন্য এই টাকা দেওয়া হয়নি। পুরসভার কাছ থেকে নিয়মের বাইরে খরচ করা দেড় কোটি টাকা ফেরতও চায় তারা। কিন্তু তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অক্ষমতার কথা জানিয়ে দেন। ফলে, ২০১১ সাল থেকে নিকাশি নালা পরিষ্কার ও জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর বছরে যে আড়াই কোটি টাকা করে দিত, তা বন্ধ করে দেয়। বাউড়িয়ার ওই জমি বিক্রি করে দেড় কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিল পুরসভা। কিন্তু নানা কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ কোটিরও বেশি টাকা হাতছাড়া হয়েছে পুরসভার।

কেন এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করেছিল পুরসভা?

তৎকালীন পুরপ্রধান সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘আমি যখন চেয়ারম্যান হই, দেখি ওই খাতে অনেক টাকা অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। তখনই বাউড়িয়াতে অতিরিক্ত ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য জমিটি কিনি। তখন কিন্তু পুরসভা বা প্রশাসনের তরফে কেউ বলেননি এই টাকা জমি কেনার খাতে খরচ করা যাবে না। পদস্থ আধিকারিক এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের সম্মতিতেই জমিটি কেনা হয়েছিল। এখন জমিটির কী অবস্থা বলতে পারব না।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে জমিটিতে বাউড়িয়া এবং চেঙ্গাইল এলাকার বর্জ্য এনে জমা করা হচ্ছে। এখান থেকে ফের গাড়িতে করে সেই বর্জ্য আনা হচ্ছে বাণীতবলার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। বর্তমান পুরপ্রধান বলেন, ‘‘হয়তো এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু জমিটি তো আমাদের স্থায়ী সম্পদ। আপাতত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় কাজে ওই জমি কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia Municipality PWD Firhad Hakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE