Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ঘরবন্দির ডায়েরি
West Bengal Lockdown

ঘরে বসে শুধু বঞ্চনার কথাই কেবল মনে হচ্ছে

ওঁদের সংসার চলে প্রতিদিনের রোজগারে। এক দিন কাজ না থাকলে রোজগারও থাকে না। লকডাউনের এই দীর্ঘ পর্বে কী করছেন ওই সব মানুষেরা? নিজেদের কথা তাঁরা নিজেরাই লিখছেন আনন্দবাজারে। সরকারি কোন সাহায্যও পাইনি আমরা। অথচ যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গেই থাকি।

অবসর: বায়না নেই। তাই ঢাক ঝেড়েমুছে রাখা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

অবসর: বায়না নেই। তাই ঢাক ঝেড়েমুছে রাখা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

বিশ্বনাথ রুইদাস (ঢাক শিল্পী)
গোঘাটের শ্যামবাজার গ্রামের রুইদাস পাড়ার বাসিন্দা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৫:০৫
Share: Save:

এই পাড়ার ৪২ ঘরের আমরা সব ছেলেরা ঢাক বাজিয়ে দিন গুজরান করি। আর স্ত্রীরা পরিচারিকা বা মাঠের কাজ করেন। এমনিতেই দিন আনা দিন খাওয়া সংসার আমাদের। তার উপর এই পরিস্থিতি আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।

আমার ষাট বছর বয়স হল। গোঘাটে অনেক রাজনৈতিক খুনোখুনি মারামারি দেখেছি। এলাকা থমথমে থাকে বটে, কিন্তু এমন অসহায় হয়ে কোনওদিন ঘরে বসে থাকতে হয়নি। ফাল্গুন মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত আমাদের বায়না থাকে গাজন, নানা পুজোতে। প্রত্যেকের ২০-২৫ দিন করে। দিনে রোজগার হয় গড়ে দেড় হাজার টাকা থেকে দু হাজার টাকা করে। সে সব বাতিল হয়েছে। প্রতি শনিবার, মঙ্গলবার বারোয়ারি পুজো বন্ধ। ভিন জেলার পুজোর বায়নাগুলোও এখন থেকেই হয়। সে সবও বন্ধ। পুজোর ৫ দিনের জন্য রোজগার হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার। অন্য কত রাজ্যে বরাত পাই। এ বার তো মনে হচ্ছে, সে সবও হবে না।

সরকারি কোন সাহায্যও পাইনি আমরা। অথচ যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গেই থাকি। সরকারি সাহায্য মানে লোকপ্রসার প্রকল্পের কথা বলছি। পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসন তো বটেই, সারা জেলাও জানে আমাদের রুইদাস পাড়ার সবাই ঢাকি। বছর চারেক আগে রাজ্যস্তরের ঢাক প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম হয়ে পুরস্কারও পাই। অথচ আমাদের কাউকেই ওই প্রকল্পের পরিচয় পত্র দেওয়া হয়নি। এই প্রকল্পে লোকশিল্পীদের ১ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা। ওই ভাতা বাদেও সরকারি বিজ্ঞাপন বা অনুষ্ঠান প্রতি হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। আবার ৬০ বছরের বেশি বয়সের শিল্পীরা ঘরে বসে পাবেন মাসে ১ হাজার টাকা করে পেনশন। এখন ঘরে বসে থেকে, আর আধপেটা খেয়ে খালি এইসব অবহেলার কথাই বেশি মনে হচ্ছে।

রেশন নিয়েও তো ছেলেখেলা হচ্ছে। সরকার মাথাপিছু এক মাসের জন্য ২ কেজি রেশনের চাল ও ৩ কেজি গম দিয়েছে। তা দিয়ে আমাদের মত মানুষের চলে! আমরা স্বামী-স্ত্রী এই বয়সেই দিনে দেড় কেজি চালের খাই। রুটি খাই ৫০০ গ্রাম আটার। জোয়ান ছেলেদের ওই রেশনে কিচ্ছু হবে না। সকলের হাতে থাকা টাকাকড়িও শেষ হতে চলল। একবেলা ভাত আর একবেলা আধপেটা মুড়ি খেয়ে থাকতে হচ্ছে আমাদের।

গ্রামে দু-একজনের দু-পাঁচ কাঠা জমি থাকলেও অধিকাংশের জমি নেই। আমার যেমন এক ছটাকও জমি নেই। সংসারের হাল সামালতে ছেলেদের অষ্টম-নবম শ্রেণির পরেই স্কুল ছাড়িয়ে ঢাক বাজাতে হয়। মেয়েদের কিছুটা পড়িয়ে যেন তেন প্রকারে বিয়ে দিতে হয়। আমাদের জন্য সরকার কিছু একটা ভাবুক।

অনুলিখন: পীযূষ নন্দী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Dhaki
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE