নিখেঁাজ ব্যাঙ্ককর্মী রক্ষা
বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে দুই বছরের শিশুটি। পাশে পড়ে রয়েছে দুটি চিরকুট। তার একটিতে স্বামীর উদ্দেশে ইংরেজিতে লেখা ‘জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমায় ক্ষমা করো।’ আর একটিতে ছোট শিশুটির প্রতি লেখা রয়েছে, ‘বেটা, মাম্মি অফিস গিয়েছে। তুমি ভাল থাকবে।’
তিন দিন আগে অর্থাৎ ৩ মে মঙ্গলবার কাকভোরে এমন ভাবেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বালি রাসবাড়ি এলাকার মহেন্দ্র বাগচী রোডের বাসিন্দা বছর তিরিশের গৃহবধূ রক্ষা সিংহ। তিনি কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহকারী ম্যানেজার। তাঁর স্বামী সঞ্জয় সিংহ দুর্গাপুরের একটি ইস্পাত সংস্থায় চাকরি করেন। তাই বালিতে শ্বশুর, শ্বাশুড়ির সঙ্গেই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন রক্ষা।
ওই দিন ঘটনার পরই তরুণীর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘুমন্ত ছেলের পাশে ওই তরুণীর রেখে যাওয়া দুটি চিরকুটই এখন চিন্তায় ফেলেছে তদন্তকারীদের। মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বারাণসী থেকে বালিতে এসেছেন রক্ষার মা, ভাই ও আত্মীয়েরা। তাঁরা এ দিন বিকেলে বালি থানায় জামাই সঞ্জয় ও তাঁর বাবা মায়ের বিরুদ্ধে রক্ষার উপর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগ পাওয়ার পরই বালি থানায় ডেকে পাঠানো হয় সঞ্জয় এবং তাঁর বাবা বিজয়নারায়ণ সিংহ ও মা জয়শ্রী সিংহকে। তাঁদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পেয়েই রক্ষার শ্বশুরবাড়ির লোকেদের জেরা করা হচ্ছে। অন্যান্য দিকও দেখা হচ্ছে।’’
রক্ষার শ্বশুর বিজয়নারায়ণ সিংহ পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই দিন সকালে তাঁরা ঘুম থেকে উঠে দেখেন বাড়ির সদর দরজা হাট করে খোলা। রক্ষার ঘরের দরজাও খোলা। সেখানে একাই ঘুমোচ্ছে নাতি কুলদীপ। মোবাইল ফোন, টাকা রাখার ব্যাগ, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড-সহ অন্যান্য সব কিছুই পড়ে রয়েছে। কিন্তু কোথাও খোঁজ নেই রক্ষার। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলেও পূত্রবধূর খোঁজ না পেয়ে ছেলে সঞ্জয়কে ফোন করেন বিজয়নারায়ণ। এর পরেই সঞ্জয় ঘটনাটি বারাণসীতে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে জানান। ওই দিনই দুর্গাপুর থেকে বালিতে ফিরে আসেন সঞ্জয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন জায়গার রাস্তায় লাগানো সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করেই তরুণীর গতিবিধি বা সম্ভাব্য অবস্থান জানতে তদন্ত চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বেলুড় ও লিলুয়ার দুটি নামকরা শপিংমল ও মাল্টিপ্লেক্সের সিসিটিভি ফুটেজও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সূত্র মেলেনি বলেই দাবি সিটি পুলিশের কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy