Advertisement
E-Paper

ছিনতাইবাজ ধরতে ট্রেন থেকে ঝাঁপ, মৃত্যু যুবকের

শনিবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় মৃতের নাম সুভাষ ঘোষ (২৬)। তাঁর বাড়ি ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের মানগোডিঙা রোডে। মাসতিনেক আগে কলকাতার মুকুন্দপুরে একটি সংস্থায় কাজে যোগ দেন এমবিএ পাশ ওই যুবক। প্রতি শনিবার কলকাতা থেকে তিনি বাড়ি যেতেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:১১
মৃত সৌরভ ঘোষ। ছবি: সুব্রত জানা

মৃত সৌরভ ঘোষ। ছবি: সুব্রত জানা

বেশ কিছু দিন ধরে উলুবেড়িয়া লেভেল ক্রসিং এবং উলুবেড়িয়া স্টেশনের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাটি দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলছিলেন এলাকাবাসী। এ বার সেখানেই এক মোবাইল ছিনতাইবাজকে ধরতে গিয়ে ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হল ভিন‌্ রাজ্যের এক যাত্রীর।

শনিবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় মৃতের নাম সুভাষ ঘোষ (২৬)। তাঁর বাড়ি ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের মানগোডিঙা রোডে। মাসতিনেক আগে কলকাতার মুকুন্দপুরে একটি সংস্থায় কাজে যোগ দেন এমবিএ পাশ ওই যুবক। প্রতি শনিবার কলকাতা থেকে তিনি বাড়ি যেতেন। সোমবার সকালে ফের কলকাতায় আসতেন। কিন্তু এ বার আর বাড়ি ফেরা হল না। পুরো ঘটনার তদন্ত চেয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন তাঁর বাবা সঞ্জয়বাবু। রেল পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। শুরু হয়েছে তল্লাশিও। তবে, রবিবার বিকেল পর্যন্ত দুষ্কৃতী ধরা পড়েনি। উদ্ধার হয়নি সুভাষের মোবাইলটিও। ওই মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের চেষ্টা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

রেল পুলিশ এবং মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি সপ্তাহের মতো শনিবারও হাওড়া স্টেশন থেকে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের আপ কোরাপুট এক্সপ্রেসে ওঠেন সুভাষ। ছিলেন এসই-১ নম্বর কামরার ৩১ নম্বর বার্থ-এ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার উলুবেড়িয়া স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটি থামে রাত ১০ টা ৫ মিনিট নাগাদ। তখন সুভাষ কামরার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছিলেন। তিনি লক্ষাধিক টাকার বিদেশি মোবাইল ব্যবহার করতেন। ট্রেনটি ছাড়ার সময়েও মোবাইলে কথা বলছিলেন সুভাষ। কিন্তু আচমকা প্ল্যাটফর্ম থেকে এক দুষ্কৃতী দৌড়ে এসে তাঁর মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয়। মাত্র কয়েক মুহূর্ত। কিন্তু ততক্ষণে ট্রেন গতি বাড়িয়ে ফেলেছে। সুভাষ খেয়ালও করেননি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে ট্রেন বেরিয়ে গিয়েছে। ছিনতাইবাজকে ধরতে তিনি ঝাঁপ দেন। কিন্তু লাইনে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন।

আরও পড়ুন: ‘এখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে’, ধনখড়ের মুখেও আড়িপাতার কথা

ট্রেনযাত্রীরা তো বটেই, রেললাইনের ধারের বাসিন্দাদের কয়েকজনও ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরাই রেল পুলিশকে খবর দেন। রেল পুলিশ গিয়ে সুভাষকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানেই কিছুক্ষণ পরে তাঁর মৃত্যু হয়। সুভাষ টাটানগরে যে আবাসনে থাকতেন, সেখানকারই এক বাসিন্দা ওই ট্রেনেরই একই কামরায় ছিলেন। তিনিই গোটা ঘটনা সুভাষের পরিবারকে জানান।

সুভাষের বাবা সঞ্জয়বাবু টাটা স্টিল সংস্থায় কর্মরত। খবর পেয়ে রাতেই স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে তিনি উলুবেড়িয়া রওনা দেন। রবিবার দুপুরে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের মর্গে সুভাষের দেহের ময়নাতদন্ত হয়। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘ছেলের যে সহযাত্রী আমায় খবর দিয়েছিলেন, তিনি আমাকে সবই বলেছেন। ঘটনার তদন্ত দাবি করছি। দোষীদের যেন পুলিশ অবিলম্বে গ্রেফতার করে। আর কারও পরিণতি যেন আমার ছেলের মতো না হয়।’’ ওই রাতে পাঁশকুড়া স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছনোর পরে নির্দিষ্ট কামরা থেকে সুভাষের মালপত্র নামিয়ে নেয় রেল পুলিশ। রবিবার সেখানে গিয়ে মালপত্র সংগ্রহ করেন সুভাষের পরিবারের লোকজন।

আরও পড়ুন: কার্নিভাল থেকে ফেস্টিভাল, ডাক না পেয়ে ক্ষোভে মুখর রাজ্যপাল

উলুবেড়িয়ার অনেকেরই অভিযোগ, এখানকার লেভেল ক্রসিং এবং স্টেশনের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাটি দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নির্জন হওয়ায় বিশেষ করে ট্রেনযাত্রীদের মোবাইল ছিনতাই করে এই এলাকায় গা ঢাকা দেওয়া দুষ্কৃতীদের পক্ষে বেশ সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই এলাকায় নজরদারি জোরদার করার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy