Advertisement
২৫ মে ২০২৪

আলু নিয়ে কর্মবিরতিতে সাড়া দিল না সিঙ্গুরের ব্যবসায়ীরা

একতরফা সরকারি ‘দমন নীতি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সোমবার রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। হুগলির সিঙ্গুর বাদে এই বন্ধের প্রভাব জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কমবেশি পড়েছে। যদিও সংগঠনের কর্তাদের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, কর্মবিরতি সার্বিকভাবে সফল হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সারাদিন ধরে আড়ত খোলা থাকলেও জেলার কোথাও কোনও হিমঘর থেকে আলু বের হয়নি।

চলছে আলু বাছাই। সিঙ্গুরের রতনপুরে। ছবি: দীপঙ্কর দে

চলছে আলু বাছাই। সিঙ্গুরের রতনপুরে। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদাদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৬
Share: Save:

একতরফা সরকারি ‘দমন নীতি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সোমবার রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। হুগলির সিঙ্গুর বাদে এই বন্ধের প্রভাব জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কমবেশি পড়েছে।

যদিও সংগঠনের কর্তাদের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, কর্মবিরতি সার্বিকভাবে সফল হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সারাদিন ধরে আড়ত খোলা থাকলেও জেলার কোথাও কোনও হিমঘর থেকে আলু বের হয়নি। পাইকারি বাজারে আলু বিক্রিও হয়নি। রাজ্যের কৃষি দফতরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না অবশ্য দাবি করেছেন, “সিঙ্গুর-সহ জেলার সর্বত্রই আলুর আড়তে কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়েছে। সিঙ্গুরের আলুর আড়তই কলকাতার আলুর মূল জোগানদার। অন্যদিনের মতোই সোমবার সারাদিন আলু স্বাভাবিক ভাবে ট্রাক বোঝাই হয়ে কলকাতা ও অন্যত্র গিয়েছে।”

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে রাজ্য সরকার আচমকা ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাজ্য সরকারের এই নিষেধাজ্ঞায় প্রমাদ গোনেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর তাঁদের বড় অঙ্কের ব্যবসায়িক লেনদেন জড়িত। ব্যবসায়ীদের তরফে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ন্ত্রিত টাস্ক ফোর্সের কাছে বার বার বিষয়টি ফের বিবেচনার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। যদিও ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর সরকারি বিধি আরোপ করা হলেও দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী টাস্ক ফোর্সের কাজে ক্ষুব্ধ হন।

রাজ্যে সরকার আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ফল উল্টো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা পাল্টা সরকারের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, “হঠকারির মতো আলু বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা কোনও সরকারের কাজ হতে পারে না। সরকার বাজারের স্বাভাবিক গতিতে একতরফা দাঁড়ি টানাতেই ফল উল্টো হয়েছে।” যদিও বাবসায়ীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মতও আছে। অভিযোগ, “পুজোর মুখে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের পকেট কাটতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা আলুর মজুতদারি করাতেই রাজ্যের হিমঘরগুলিতে আলু যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও জোগান এবং চাহিদার মধ্যে সমতা রক্ষিত না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।”

গত মরশুমে আলুর ফলন রাজ্যে ভাল হয়েছে। রাজ্যের হিমঘরগুলিতে যে পরিমাণ আলু এখন মজুত আছে তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত জলদি আলু ওঠার আগে দিব্যি চলে যাবে। বীজ আলুও যথেষ্ট পরিমাণে মজুত আছে হিমঘরে। হিমঘর মালিকদের একাংশের অভিযোগ, আলুর কেন দাম বাড়ছে সরকার সেই দিকে নজর না দিয়ে অযথা ব্যবসায়ীদের উপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে। তাঁদের দাবি, এতে ভিন রাজ্যে তাঁদের ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষতি হচ্ছে।

অন্য দিকে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়া ট্রাকগুলি ফেরত নিয়ে আসতে দু’ তিন দিন সময় লেগে যাবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। আদ্রতার কারণে আলু পচে যাচ্ছে।

প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রের খবর, রাজ্যে ফি বছর যে আলুর উৎপাদন হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। তাই ভিন রাজ্যে আলু পাঠাতেই হয়। সেই কারণে, চলতি বছরের মার্চ মাস নাগাদ হিমঘরে আলু মজুত করার সময়ে সমিতির পক্ষ থেকে ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর ব্যাপারে নির্দেশিকার জন্য বলা হয়েছিল। কবে কোথায় কত পরিমাণ আলু পাঠানো হবে তার জন্য তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছিল। অভিযোগ, সরকার তখন কোনও গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টিতে। ব্যবসায়ীরা তাই নিজেদের মতো করে বাইরে আলু পাঠাচ্ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

strike potato singur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE