পুরনো একটি খুনের মামলার অন্যতম সাক্ষীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে সেই মামলারই অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে খানাকুলের কাবিলপুরের বাসিন্দা সন্দীপ দলুই (৪৫) এক প্রতিবেশী বৃদ্ধার মৃতদেহ সত্কার করে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের একটি কলতলায় পড়ে যান। মাস তিনেক আগে এক গ্রামবাসীকে পিটিয়ে খুনের একটি মামলার তিনি অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। মামলাটিতে অভিযুক্ত বাসুদেব দলুই, বিশু পণ্ডিত, তরুণ দলুই ওরফে ভজা এবং নিখিল দলুই সন্দীপবাবুর প্রতিবেশী। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরাও ওই বৃদ্ধার দেহ সত্কারের জন্য শ্মশানে গিয়েছিলেন। ফেরার সময়ে তাঁরা সন্দীপবাবুকে কলতলায় পড়ে থাকতে দেখে যথেচ্ছ লাথি-ঘুষি মারেন এবং তার জেরেই রাতে তাঁর মৃত্যু হয় বলে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ বাসুদেব এবং বিশুকে গ্রেফতার করে। মৃত্যুর আগে সন্দীপবাবু ওই চার জনের বিরুদ্ধে তাঁর উপরে হামলা চালানোর কথা বলেছিলেন বলে দাবি নিহতের স্ত্রী বিজলিদেবীর।
পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে এবং মৃত্যুর ধরণ দেখে একটি অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুই অভিযুক্ত পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে রাস্তার কলতলায় চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় দুই মহিলা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সন্দীপবাবুকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেন। সেই সময়ে তাঁরা ওই চার জনকে পালাতেও দেখেন। বাড়ি ফিরে সন্দীপবাবুর অবস্থার অবনতি হয়। গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় সন্দীপবাবুর পরিবারের লোকজন গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে এক হাতুড়ে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হন। ভোর চারটে নাগাদ ওই চিকিত্সক এসে সন্দীপবাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।
সন্দীপবাবুর স্ত্রী বিজলিদেবীর অভিযোগ, “স্বামীর বুকে কষ্ট হচ্ছিল। বাসুদেব, বিশুরা পুরনো মামলার কথা তুলে তাঁকে লাথি-ঘুষি মেরেছে বলে জানিয়েছিলেন। পুরনো মামলাটির অন্যতম সাক্ষী হওয়ার জন্যই স্বামীকে খুন করা হল।” বৌদির কথার ভিত্তিতেই থানায় ওই চার জনের নামে লিখিত অভিযোগ জানান সন্দীপবাবুর ভাই ঝড়েশ্বর দলুই। শুক্রবার আরামবাগ আদালতে পুরনো মামলাটির শুনানিতে হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন বাসুদেব এবং বিশু। তখনই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়া সত্ত্বেও কেন সন্দীপবাবুকে বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না?
সন্দীপবাবুর পরিবার এবং গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামে রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, হয় ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, নয়তো হাতুড়ে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হয়। কেননা, খানাকুল-১ ব্লকের অরুণ্ডা-১ পঞ্চায়েতের অধীন কাবিলপুর গ্রামটি দামোদর এবং দামোদরের শাখা দু’টি নদীর মাঝে অবস্থিত। খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতাল বা আরামবাগ হাসপাতাল পৌঁছতে গেলে গ্রাম থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা পাড়ি দিলে কোনও যানবাহন মেলে। সন্দীপবাবুর অবস্থার অবনতি হয় রাত ১২টার পরে। অত রাতে যানবাহন মেলা দুষ্কর ভেবেই কেউ সেই চেষ্টা করেননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে গরুতে ধান খাওয়া নিয়ে অনিল দলুই নামে এক গ্রামবাসীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে বাসুদেব, বিশু, নিখিল এবং তরুণের বিরুদ্ধে। কলকাতার হাসপাতালে কিছুদিন চিকিত্সার পরে অনিলবাবু মারা যান। ওই চার জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগেও মামলা রুজু হয়। সেই মামলারই অন্যতম সাক্ষী ছিলেন সন্দীপবাবু।