জমিয়ে রাখা ছুটি চেয়ে না পাওয়াতেই আরপিএফ-এর এক জওয়ান উত্তেজিত হয়ে তাঁর হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন দুই সহকর্মীকে। পরে নিজেও আত্মঘাতী হন। বুধবার রাতে হাওড়া বাসস্ট্যান্ডের উল্টো দিকে মুখরাম কানোরিয়া রোডে আরপিএফ-এর একটি ডিপোয় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন আরপিএফ কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের কাছে এই তথ্যই উঠে এসেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মুখরাম কানোরিয়া রোডে পূর্ব রেলের নিজস্ব একটি ছাপাখানা রয়েছে। এস আর মেটিরিয়ালস্ ডিপো নামে ওই ছাপাখানার নিরাপত্তার জন্য আরপিএফ-এর একটি পোস্ট রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বুধবার রাত ১০টা নাগাদ ওই পোস্টে এলোপাথাড়ি গুলি চলার শব্দ পাওয়া যায়। কী হয়েছে বুঝতে না পেরে গোলাবাড়ি থানায় খবর দেন এলাকার আতঙ্কিত বাসিন্দারা। ঘটনার প্রায় আধঘণ্টা পরে পুলিশ গিয়ে ওই পোস্টের ভিতর থেকে তিন জনের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত দেহ হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিত্সকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরপিএফ সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনায় মৃতেরা হলেন আরপিএফ-এর এএসআই জওহররাম হরিজন (৫৬), কনস্টেবল দিলীপ সিংহ (৫০) এবং হেড কনস্টেবল ভগবত্ চৌধুরী (৫৮)। এই ঘটনার পরে রেল ও আরপিএফ-এর পদস্থ কর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ঘটনাস্থল যেহেতু গোলাবাড়ি থানা এলাকায়, তাই ঘটনার তদন্ত শুরু করে হাওড়া সিটি পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, বর্ষশেষে পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে সময় কাটানোর জন্য চার দিন ছুটি চেয়েছিলেন মালদহের বাসিন্দা হেড কনস্টেবল ভগবত্ চৌধুরী। এ জন্য তিনি টানা ২৪ দিন ছুটি নেননি। আরপিএফ-এর নিয়ম অনুযায়ী টানা ৬ দিন কাজ করার পরে এক দিন ছুটি মেলে। সেই হিসেবে ২৪ দিন ছুটি না নেওয়ায় চারটি ছুটি জমে গিয়েছিল ভগবতের। কিন্তু অভিযোগ, এএসআই জওহররাম ভগবতের চার দিনের ছুটি অনুমোদন না করে তিন দিনের ছুটি দেন। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিলই।
পুলিশ জানায়, বুধবার রাতের শিফ্টে (১০টা থেকে সকাল ৬টা) ডিউটি করতে আসেন ভগবত্। ওই সময়ে তাঁর আগের শিফটের ডিউটিতে ছিলেন এএসআই জওহররাম হরিজন ও কনস্টেবল দিলীপ সিংহ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ডিউটিতে যোগ দিতে এসে ছুটি নিয়ে জওহররাম ও ভগবতের মধ্যে বচসা বাধে। এতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেন দিলীপ। তদন্তকারীদের ধারণা, বচসা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, ভগবত্ হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে আচমকাই দু’জনকে লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। গুলি খেয়ে দুই সহকর্মীকে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়তে দেখে ভগবতও আত্মঘাতী হন।
আরপিএফ-এর এক পদস্থ অফিসার এ দিন বলেন, “যে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চলেছিল, তাতে ৩৫ রাউন্ড গুলি থাকে। ঘটনার পরে আগ্নেয়াস্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাতে আর ১৬ রাউন্ড গুলি আছে। ময়না-তদন্তের পরেই বোঝা যাবে বাকি ১৯ রাউন্ডের ক’টি গুলি কার দেহে ঢুকেছে।”
এ দিকে, বুধবার রাতের ঘটনার পরে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন আরপিএফ কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, হাওড়া সিটি পুলিশ তদন্ত করছে। যা বলার পুলিশই বলবে। মৃতদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ঘটনার পরে রাত কেটে গেলেও তাঁদের সরকারি ভাবে খবর দেওয়া হয়নি। চ্যানেলে খবর দেখে ও কাগজ পড়ে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এ নিয়ে আরপিএফ-এর হাওড়া দফতর থেকে কোনও সাহায্য তাঁরা পাচ্ছেন না।
হাওড়া পুলিশ মর্গে দাঁড়িয়ে মৃত এএসআই জওহররামের ছেলে জয়কুমার হরিজন বলেন, “এত বড় ঘটনা ঘটলেও আরপিএফ-এর অফিস থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কেন বাবাকে খুন করা হল, তা এখনও জানি না।”
মৃত কনস্টেবল দিলীপ সিংহের পরিজনেরাও ক্ষুব্ধ আরপিএফ কর্তাদের ব্যবহারে। দিলীপবাবুর ছেলে বলেন, “বুঝতে পারছি না আমাদের কেন খবর দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আরপিএফ-এর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy