Advertisement
E-Paper

জালন্ধরের খারাপ বীজে বিপাকে চন্দ্রমুখীও

পশ্চিম মেদিনীপুরে কে-২২ বীজের পরে এ বার হুগলিতে চন্দ্রমুখী আলুর বীজ নিয়ে জেরবার চাষিরা। জালন্ধরের নামী সংস্থার বীজ বেশি দাম দিয়ে কিনে চাষ করে বিপাকে এ রাজ্যের চাষিরা। তার উপরে জালন্ধরের যে বড় খামার থেকে রাজ্যের ব্যবসায়ীরা বীজ কিনে এনেছিলেন, সেই সংস্থা এখন দায় অস্বীকার করছে বলে অভিযোগ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫

পশ্চিম মেদিনীপুরে কে-২২ বীজের পরে এ বার হুগলিতে চন্দ্রমুখী আলুর বীজ নিয়ে জেরবার চাষিরা। জালন্ধরের নামী সংস্থার বীজ বেশি দাম দিয়ে কিনে চাষ করে বিপাকে এ রাজ্যের চাষিরা। তার উপরে জালন্ধরের যে বড় খামার থেকে রাজ্যের ব্যবসায়ীরা বীজ কিনে এনেছিলেন, সেই সংস্থা এখন দায় অস্বীকার করছে বলে অভিযোগ।

চাষিরা জানান, ভাল ফলনের আশায় জালন্ধর থেকে চড়া দামে বীজ কিনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আলু গাছের কল বেরোচ্ছে না। ফলে, আলুর ভরা মরসুমে চন্দ্রমুখীর বীজ নিয়ে তাঁরা বড় বিপদে পড়েছেন। তার জেরে আলুবীজ ব্যবসায়ীদের উপরে চড়াও হচ্ছেন ক্ষিপ্ত চাষিরা। কোথাও-কোথাও ব্যবসায়ীরা বিকল্প অন্য প্রজাতির বীজ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সার্বিক ভাবে কী করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন, সেই চিন্তায় ব্যবসায়ীরাও দিশেহারা।

চন্দ্রমুখী আলুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে এ রাজ্যের এক শ্রেণির ক্রেতাদের মধ্যে। মূলত শহরাঞ্চলের ক্রেতারা কিছুটা বেশি দামে হলেও চন্দ্রমুখী আলু বছরভর খেতে অভ্যস্ত। মূলত এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই হুগলির পাঁচটি এবং বর্ধমানের কয়েকটি ব্লকে ব্যাপক হারে চন্দ্রমুখীর চাষ হয়। তার জন্য কেসিএম প্রজাতির আলুবীজ জালন্ধরের একটি সংস্থা থেকে রাজ্যে আমদানি করেন বীজ ব্যবসায়ীরা।

হুগলির তারকেশ্বর, পুড়শুড়া, হরিপাল, ধনেখালি এবং সিঙ্গুর ব্লকে ব্যাপক হারে চন্দ্রমুখী আলুর চাষ হয়। পাশেই বর্ধমানের জামালপুর ব্লকেও চন্দ্রমুখী চাষ হয়। আলু ব্যবসায়ী সমিতির তরফে সমস্যার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার এবং জালন্ধরের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সমিতি সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে জালন্ধর থেকে মোট ৪৮ হাজার প্যাকেট চন্দ্রমুখী বীজ এ রাজ্যে আমদানি করা হয়েছিল। ওই সমস্ত বীজ সঠিক মানের না হওয়ায় অন্তত ২০ হাজার বিঘে জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হরিপাল ব্লকের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চাষি মদন কোলে বলেন, “বেশি দাম দিয়ে আলুবীজ কিনে চাষ করলাম। কিন্তু বীজের যা হাল তাতে আলুর কল বের হল না। গাছ হবে কী করে?” প্রায় একই অভিজ্ঞতা ধনেখালির শিবাইচণ্ডী গ্রামের প্রশান্ত সামন্তের। তিনি বলেন, “আমাদের বীজ দেওয়ার সময়ে বলা হয়েছিল, চাষের আগে বীজে কোনও ওষুধ দিতে হবে না। প্রয়োজনীয় সব ওষুধ দেওয়া আছে। এখন মনে হচ্ছে বীজ সংস্থা বাড়তি ওষুধ দেওয়াতেই এই হাল।”

আলুবীজ খারাপ হওয়ায় বহু ক্ষেত্রে চাষিরা ক্ষতিপূরণের দাবিও তুলেছেন। তারকেশ্বরের ভঞ্জিপুরের চাষি বিকাশ খেটো এবং হরেকৃষ্ণ ভৌমিক এ বার বেশি টাকা দিয়ে আলুবীজ কিনেছিলেন। চন্দ্রমুখী চাষ করতে গিয়ে তাঁরা কার্যত পথে বসেছেন। তাঁদের দাবি, “জালন্ধরের একটি সংস্থার বীজের খারাপ মানের জন্যই আমাদের এই হাল। ওই সংস্থাকেই ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের রাজ্যে ওঁরা কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা করছেন। বীজ খারাপ হলে ওঁদের দায় তো থাকেই।”

প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আলুবীজ সংস্থাগুলিকে কেন মান নিয়ে আগে থেকে সতর্ক করা হয়নি। রাজ্যের আলুবীজ ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা স্বপন সামন্তের বক্তব্য, “আমরা চলতি মরসুমে বীজ আমদানি করার আগে বারবার পঞ্জাবে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করি। ওঁরা বীজের মান সম্পর্কে নিশ্চিত করার পরেই তা সরবরাহের কথা বলি। বীজ যাতে জাল না হয় বা অন্য কোনও সমস্যা না হয়, সেই লক্ষ্যে এ বার নানা পদক্ষেপ করার কথাও ওঁরা বলেন। কিন্তু তার পরেও বীজ খারাপ হল!”

জালন্ধরের ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এই বিপর্যয় নিয়ে তাদের কোনও কর্তা মুখ খোলেননি। ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তাদের বক্তব্য, “আমরা সংশ্লিষ্ট বীজ সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। সংগঠনগত ভাবে আমরা ঠিক করেছি, এই দাবি মানা না হলে ভবিষ্যতে ওই সংস্থার সঙ্গে কোনও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা হবে না।”

কিন্তু সে তো ভবিষ্যতের কথা। এ বার চড়া দামে বীজ কেনা ভুক্তভোগী চাষিদের কী হবে সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর কারও কাছেই মেলেনি।

potato jalandhar seed gautam bandyopadhyay southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy