Advertisement
E-Paper

বাউড়িয়া জুটমিল খুলল, অশান্তিতে কাজ হল না

কর্তৃপক্ষ ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ নোটিস প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু শ্রমিকদের একাংশের বিরোধিতায় বুধবারও উৎপাদন শুরু হল না বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার জুটমিলে। মঙ্গলবার রাতেই জুটমিল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ দিন সকাল থেকে কারখানা খুলে যাবে। কিন্তু ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া তিন ভাঙচুরে অভিযুক্ত শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে সকালে শ্রমিকদের একাংশ কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের তাঁরা ঢুকতে দেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫০
বুধবার মিল খোলার পরে গেটে পাহারায় পুলিশ। ছবি: সুব্রত জানা।

বুধবার মিল খোলার পরে গেটে পাহারায় পুলিশ। ছবি: সুব্রত জানা।

কর্তৃপক্ষ ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ নোটিস প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু শ্রমিকদের একাংশের বিরোধিতায় বুধবারও উৎপাদন শুরু হল না বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার জুটমিলে।

মঙ্গলবার রাতেই জুটমিল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ দিন সকাল থেকে কারখানা খুলে যাবে। কিন্তু ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া তিন ভাঙচুরে অভিযুক্ত শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে সকালে শ্রমিকদের একাংশ কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের তাঁরা ঢুকতে দেননি।

জুটমিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টটর ডি সি বাইতি বলেন, “কারখানা খুলে রেখেছি। আমরা চাই, শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিন।” আজ, বৃহস্পতিবারই সেখানে শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার কথা। তবে তাঁরা নিতে পারবেন কি না, এ দিনের গোলমালে তা-ও কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

হাওড়ার ওই জুটমিলে গোলমালের সূত্রপাত হয়েছিল গত ১৮ সেপ্টেম্বর। বোনাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগে শ্রমিকদের একাংশ বিক্ষোভ করেন। অফিসঘরে ভাঙচুর এবং কারখানার পদস্থ আধিকারিকদের মারধর করারও অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে ২৫ জন শ্রমিককে চিহ্নিত করেন। ওই দিনই তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কারখানার যে সব আধিকারিক মার খেয়েছেন, পুলিশের কাছে পৃথক ভাবে অভিযোগ জানান তাঁরাও। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বুধবার ভোরে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে।

এ দিন সকালের শিফ্ট চালু হওয়ার আগেই কারখানার সামনে হাজির হয়ে যান এক দল শ্রমিক। তাঁরা দাবি করেন, যে তিন জনকে ধরা হয়েছে, তাঁদের ছাড়া না হলে কারখানায় উৎপাদন চালু হতে দেওয়া হবে না। বিক্ষোভের জেরে সকালে ‘এ শিফট’-এর কাজ শুরু হয়নি। দুপুরে ‘বি শিফট’-এর কাজও একই কারণে বন্ধ । অশান্তির আশঙ্কায় হাজির ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনীও। কারখানার এক পদস্থ কর্তা জানান, ভাঙচুর এবং মারধরের ঘটনায় পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে। বহু লক্ষ টাকার জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়েছে, কারখানার পদস্থ আধিকারিকদের প্রাণ সংশয় হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, এই অন্যায়ের প্রতিকার না হলে কারখানায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হবে। পুলিশ জানায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তিন জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।

ভাঙচুর ও মারধরের ওই ঘটনার পরেই রাতে কারখানায় ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। পরের দিন উলুবেড়িয়া মহকুমাশাসকের দফতরে কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক সংগঠন এবং প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। তাতেই সিদ্ধান্ত হয়, ২২ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন মেটানো হবে। কিন্তু সে দিন বেতন দেওয়া হয়নি। তা দেওয়া হয় পরের দিন। ২২ সেপ্টেম্বরই শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন কর্তৃপক্ষ। তাতে বোনাসের সমস্যাটিও মিটে যায়। সে কারণেই ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।

এ দিন যে সব শ্রমিক বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তাঁরা কোনও সংগঠনের সদস্য নন বলে নিজেরাই দাবি করেছেন। তবে সিটু এবং ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ তাঁদের দাবি সমর্থন করেছে। বিএমএসের তরফে রুদ্রপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য , “কয়েক জন শ্রমিক আবেগের বশে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সেই অপরাধে তাঁদের তড়িঘড়ি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া ভুল হয়েছে।” সিটু নেতা তথা স্থানীয় সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক মোহন মণ্ডলের মতে, “কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অন্যায়ের ফলেই সে দিনের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কারণ তলিয়ে না দেখে শ্রমিকদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে কর্তৃপক্ষ জুলুমবাজি শুরু করেছেন। সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আইএনটিটিইউসি।”

আইএনটিটিইউসি-র তরফে তৃণমূল নেতা বেণু সেনের বক্তব্য, “কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ করেছেন। পুলিশ তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা ওই দু’পক্ষের ব্যাপার। তবে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি, ওই ২৫ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে যখন তাঁরা বিভাগীয় তদন্ত করবেন, তাতে যেন নিরপেক্ষতা থাকে। কেউ যেন কর্তৃপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার না হন।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কারখানাটি ভালো চলছে। সিটু, বিএমএস এবং আইএনটিইউসি-র তা সহ্য হচ্ছে না। যেন তেন প্রকারণে কারখানা বন্ধ করাতে তারা শ্রমিকদের পিছন থেকে উস্কানি দিচ্ছে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিটু এবং ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ। আইএনটিইউসি-র কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

bauria jute mill southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy