Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালাও, জল্পনা মতুয়া ভোট নিয়ে

ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েই ছিল মতুয়া মহাসঙ্ঘ। বুধবার সেই ভাঙন চূড়ান্ত হল। মতুয়াবাড়ির বড়মা বীণাপাণিদেবী সঙ্ঘাধিপতি হিসাবে প্রয়াত সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালার নাম মনোনীত করলেন। গত ৬ নভেম্বর গাইঘাটার ঠাকুরনগরে ওই ঠাকুরবাড়ির নাটমঞ্চ থেকেই ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণের নাম সঙ্ঘাধিপতি পদে ঘোষণা করেছিলেন বড়মা। মতুয়াদের ইতিহাসে দুই সঙ্ঘাধিপতি এই প্রথম।

মমতাবালা ও বড়মা। ছবি : নির্মাল্য প্রামাণিক।

মমতাবালা ও বড়মা। ছবি : নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৪
Share: Save:

ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েই ছিল মতুয়া মহাসঙ্ঘ। বুধবার সেই ভাঙন চূড়ান্ত হল। মতুয়াবাড়ির বড়মা বীণাপাণিদেবী সঙ্ঘাধিপতি হিসাবে প্রয়াত সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালার নাম মনোনীত করলেন। গত ৬ নভেম্বর গাইঘাটার ঠাকুরনগরে ওই ঠাকুরবাড়ির নাটমঞ্চ থেকেই ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণের নাম সঙ্ঘাধিপতি পদে ঘোষণা করেছিলেন বড়মা। মতুয়াদের ইতিহাসে দুই সঙ্ঘাধিপতি এই প্রথম।

ক্ষুব্ধ মঞ্জুল বলেন, “আমাদের পরিবারে মেয়েদের সঙ্ঘাধিপতি হওয়ার প্রথা নেই।” অন্য দিকে মমতাবালার বক্তব্য, “ভক্তরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি আগে জানতামই না, সঙ্ঘাধিপতি হব।”

এখন প্রশ্ন, বৌদি-দেওরের এই বিবাদে মতুয়া ভোটেও কি ফাটল ধরবে? তৃণমূলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন ধরে মতুয়াদের উন্নয়নে তাদের পাশে থেকেছেন। মতুয়াবাড়ির পারিবারিক বিভাজন তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরাবে। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের জেলা নেতৃত্বের একটি প্রভাবশালী অংশ মনে করে, মতুয়াদের বড় অংশ মমতাবালার পাশেই আছে।

অন্য দিকে বিজেপি-র অভিযোগ, মমতাবালার পৃথক কমিটি গড়ার পিছনে তৃণমূলের প্রচ্ছন্ন মদত আছে। উত্তর ২৪ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার বলেন, “রাজনৈতিক চক্রান্ত করে মতুয়াদের মধ্যে বিভাজন করতে চাইছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে এর ফল তারা হাতেনাতে পাবে।” তৃণমূলের উপর মতুয়া সদস্যদের ক্ষোভের সুফল বিজেপি-ই পাবে, মনে করছে বিজেপি-র জেলা নেতারা।

মমতাবালা ১৫১ জনের যে কমিটি গড়েছেন, তাতে নাম নেই বিজেপি নেতা তথা গত লোকসভা ভোটে বনগাঁয় দলের প্রার্থী কেডি বিশ্বাসের। বরং ওই কমিটিতে মতুয়া মহাসঙ্ঘের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে নাম আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ-সহ অনেকের। অন্য দিকে, মঞ্জুলকৃষ্ণ গাইঘাটা থেকে তৃণমূলের বিধায়ক। কেডি বিশ্বাস এ দিন বলেন, “পরিবারের দু’পক্ষই তৃণমূলের সঙ্গে আছে। দলের নেতৃত্ব চাইলে দু’টো কমিটি গঠনই হত না। মতুয়ারা এটা ভাল ভাবে নেবেন না।”

পরিবারের বিভাজনে দলের ইন্ধনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বিজেপি নিজেদের নিয়ে ভাবুক। ঠাকুরবাড়ি নিয়ে ভাববেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বহু দিন ধরেই মতুয়াদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন।” তাঁর দাবি, মতুয়াদের বিভাজনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

জেলার রাজনৈতিক মহল অবশ্য দুই গোষ্ঠীর তৈরি কমিটির সদস্য তালিকা থেকে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। কেডি-র নাম আছে মঞ্জুলকৃষ্ণ ও তাঁর পুত্র সুব্রত ঠাকুরদের তৈরি করা কমিটিতে। কেডি-র সঙ্গে মঞ্জুলদের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘ দিনের। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, যদি উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট না পান সুব্রত, তাহলে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দৌত্যের পথ খোলা রাখতেই কেডি-র সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছেন মঞ্জুল-সুব্রত। সুব্রত বলেন, “পরিবারে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ মতুয়াদের দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা করছে। তারা মতুয়াদের ভাল চায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE