Advertisement
E-Paper

একাই একশো, তাই সন্দেহ

বিদায়ী কাউন্সিলর ছিলেন বামফ্রন্টের। তিনি এ বারও প্রার্থী। একটি বুথে তাঁর নামের পাশে পড়েছে সাকুল্যে ৯টি ভোট! ওই বুথেই বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৭টি ভোট, কংগ্রেস প্রার্থী ২টি। আর তৃণমূল? তাদের বাক্সে ভোট ৮৬৩টি! এই উদাহরণ বেলেঘাটায় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বুথের। যে ওয়ার্ড থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের ঝুমা দাসকে ১৪ হাজার ৪৫৯ ভোটে হারিয়েছেন তৃণমূলের অলকানন্দা দাস। শুধু ওই একটি বুথ নয়। ওই ওয়ার্ডের একাধিক বুথে বাম, বিজেপি বা কংগ্রেস প্রার্থীরা ৩, ৬, ৭ বা ৯টি করে ভোট পেয়েছেন!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২১

বিদায়ী কাউন্সিলর ছিলেন বামফ্রন্টের। তিনি এ বারও প্রার্থী। একটি বুথে তাঁর নামের পাশে পড়েছে সাকুল্যে ৯টি ভোট! ওই বুথেই বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৭টি ভোট, কংগ্রেস প্রার্থী ২টি। আর তৃণমূল? তাদের বাক্সে ভোট ৮৬৩টি!

এই উদাহরণ বেলেঘাটায় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বুথের। যে ওয়ার্ড থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের ঝুমা দাসকে ১৪ হাজার ৪৫৯ ভোটে হারিয়েছেন তৃণমূলের অলকানন্দা দাস। শুধু ওই একটি বুথ নয়। ওই ওয়ার্ডের একাধিক বুথে বাম, বিজেপি বা কংগ্রেস প্রার্থীরা ৩, ৬, ৭ বা ৯টি করে ভোট পেয়েছেন!


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

ভোটপ্রাপ্তির এমন বিস্তর ব্যবধানের ছবি ছ়ড়িয়ে আছে উত্তর থেকে দক্ষিণ, মধ্য থেকে পূর্ব কলকাতার আরও অনেক বুথে। উত্তরে ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুষ্পালি সিংহ, ৩ নম্বরের শান্তনু সেন বা পূর্ব কলকাতার ৬৬ নম্বরের ফৈয়াজ আহমেদ খান— ভোট পাওয়ার নিরিখে তৃণমূল প্রার্থীরা অনেকের চোখ কপালে তুলে দিয়েছেন! অলকানন্দা, জীবন সাহা, ফৈয়াজদের এই বিপুল ব্যবধানে জয়কে ‘স্বাভাবিক’ বলে মানতে রাজি নন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, বুথওয়াড়ি ভোট পাওয়ার এমন আসমান-জমিন ফারাকেই লুকিয়ে আছে রহস্য!

তবে কলকাতার যে সব ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীরা জিতেছেন, সর্বত্রই বুথ এমন ‘অস্বাভাবিক’ ফল হয়েছে তা নয়। তেমন অভিযোগও কেউ করেননি। তবে বিরোধীদের দাবি, পুরভোটের দিন লাগামছাড়া সন্ত্রাসের যে অভিযোগ তাঁরা তুলেছিলেন, ভোটপ্রাপ্তির এই বিপুল ব্যবধান সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিচ্ছে। কংগ্রেসের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘এ তো দেখে মনে হচ্ছে, অর্ডার দিয়ে ভোট আনানো হয়েছে জয়ের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য!’’ প্রসঙ্গত, যে সব ওয়ার্ডে তৃণমূল বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছে, তার মধ্যে কোনও কোনও বুথে কংগ্রেস প্রার্থীরা একটি ভোটও পাননি! কিছু ক্ষেত্রে একই দশা বিজেপি প্রার্থীরও। বিরোধী নেতাদের প্রশ্ন, গণতন্ত্রে কখনও এমন হতে পারে? কিছু বুথে ১০৪% থেকে ১৪০% ভোট পড়ার অভিযোগ নির্বাচনের পরেই উঠেছিল। এখন বুথওয়াড়ি পরিসংখ্যান যত হাতে আসছে, বিরোধী নেতারা মনে করছেন তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলছেন, ‘‘এক একটা বুথে তৃণমূল ৮৫, ৯০ বা ৯৫% ভোট পাচ্ছে, এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? বেশ কিছু বুথে এমন ঘটনা ঘটেছে বুঝেই আমরা পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কলকাতায় বিরোধীদের কোনও দাবিই মানা হয়নি।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য গা-জোয়ারি বা ভোটে কারচুপির অভিযোগ মানতে নারাজ। শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, একটি ওয়ার্ডের মধ্যেই এলাকা বা পাড়া ভিত্তিতে আলাদা আলাদা রাজনৈতিক বিন্যাস থাকে। সেই মতোই কিছু বুথে কোনও একটা দল অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেতে পারে। তাতে ‘অস্বাভাবিক’ কিছু নেই। ফলে কয়েকটি ওয়ার্ডের এই পরিসংখ্যান থেকে ‘রিগিং’ প্রমাণিত হয় না! তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সেখানেই কিছু এলাকায় সিপিএমের ভাল প্রভাব আছে। সেই এলাকার বুথের হিসেব নিলে দেখা যাবে, সিপিএমই হয়তো সিংহভাগ ভোট পেয়েছে। তার মানে কি সেখানে কারচুপি হয়েছে?’’ কিন্তু পাড়াওয়াড়ি় পৃথক রাজনৈতিক বিন্যাসের জোরে কি পুরভোটে এক-এক জন প্রার্থী ১৫, ২০, এমনকী ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিততে পারেন? পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘এটা তো সব জায়গার চিত্র নয়। ফৈয়াজের ওয়ার্ডে যেমন ৭৮ হাজার ভোট আছে। সেখানে তিনি যদি ৩০ হাজার ভোটে জেতেন, তাতে বলার কী আছে?’’

বিরোধীরা নিজেরাও বলছেন, সব জায়গা নিয়ে তাঁদের অবশ্যই কিছু বলার নেই। যেমন, বেহালার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড। যেখানে প্রার্থী ছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এখানে ১০ নম্বর বুথে তৃণমূল ২৮৩টি ভোট পেয়েছে, বিজেপি পেয়েছে ১৬৬। আবার ২১ নম্বর বুথে তৃণমূল পেয়েছে ৩৭৪ ভোট। বামফ্রন্ট ১৩৫ এবং বিজেপি ১১৯ ভোট পেয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় শাসক দলের জয় নিয়ে তাঁরা যে সংশয় প্রকাশ করছেন না, সে কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছেন বিরোধী নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন বিরোধীদের কার্যত শূন্য করে দিয়ে জেতা বুথগুলি নিয়েই।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র মঙ্গলবার খোলাখুলিই স্বীকার করেছেন, ‘‘জনসমর্থনের হারের ভিত্তিতে এই সরকার এখনও প্রথম স্থানে। যদি অবাধ ও শন্তিপূর্ণ ভোট হতো, তা হলেও তারা প্রথম স্থানেই থাকত। আর বামেরা দ্বিতীয় স্থানে।’’ কিন্তু তা সত্ত্বেও শাসক দল সন্ত্রাস এবং ভোট লুঠের পথে গিয়েছে বলে অভিযোগ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকার ক্রমেই সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। মূলত সেই কারণেই যেখানে বামেরা রয়েছে, সেখানে হামলা-আক্রমণ করছে।’’

২, ৩, ৩৪, ৩৫, ৫৭, ৫৮, ৬২, ৬৬— এ রকম বেশ কিছু ওয়ার্ডের পরিসংখ্যানে ভোট লুঠের নজির ছড়িয়ে রয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। যেমন, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি বুথে বামফ্রন্ট যথাক্রমে ১৩, ১৩ ও ২০টি ভোট পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ৯, ১৩ ও ২৩। কংগ্রেসের জুটেছে ১৫, ৫ ও ৬টি ভোট। আর তৃণমূল ৩৫৯, ৫২০ ও ৫৬৯। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি বুথে বামেরা পেয়েছে ১০, ১৫, ৩৭টা করে ভোট। বিজেপির বাক্সে ৩, ৪ এবং ১৩! কংগ্রেসের ১, ১ ও ৯। পক্ষান্তরে তৃণমূল পেয়েছে ৩৬২, ৭৩১ ও ৮১৫টি ভোট। বিজেপি নেতা রীতেশ তিওয়ারির কটাক্ষ, ‘‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটে দিদিমণির স্নেহের ভাইয়েরা দয়া করে ১৩টা করে ভোট দিয়ে দিয়েছেন আমাদের!’’

ভোটের আগে কলকাতার সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় চষে বেড়ানো কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান খালেদ এবাদুল্লার মন্তব্য, ‘‘বাম আমলে কেশপুরে এই রকম ভোট হতো! এখন খাস কলকাতা শহরেও হচ্ছে। সংখ্যালঘু এলাকায় সংখ্যালঘুদের এক জনও একটা বুথে কংগ্রেসকে ভোট দিলেন না, এটা অবাস্তব!’’ ভোটের পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, ঘোর বাস্তব!

abpnewsletters trinamool tmc municipal election municipal election result poll CPM congress bjp mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy