স্তূপ: খোয়াই বনের হাটে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র
আন্তর্জাতিক ভাবে পর্যটনের তালিকায় অনেক দিন আগেই ঠাঁই পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে এখানকার আকর্ষণ শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক পরিবেশ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়াও শান্তিনিকেতনের গ্রামাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী জঙ্গল সহ কোপাই-খোয়াই শহুরে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। পৌষমেলা বা বসন্ত উৎসব ছাড়াও বছরভর পর্যটকদের আনাগোণা সেখানে লেগেই থাকে। শীতকালে সেই সংখ্যা বেড়ে যায়।
শীত পড়ার আগেই তাই খোয়াই নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, ক্রমশ আবর্জনার স্তূপে পরিণত হচ্ছে খোয়াই পার্শ্ববর্তী এলাকা। খোয়াই বাঁচাতে জেলা প্রশাসন, বন দফতর এবং পঞ্চায়েতের কড়া পদক্ষেপের আশা করছেন সাধারণ মানুষ।
বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্রী, প্রয়াত শ্যামলী খাস্তগিরের উদ্যোগে ওই হাট প্রায় ১৮ বছর আগে ‘শনিবারের হাট’ বলে এলাকায় পরিচিতি পায়। কারণ হাট বসতো শনিবার বিকেলে। তখন হাট শুরু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এলাকার পার্শ্ববর্তী মানুষ বিশেষ করে মহিলাদের তৈরি নানা হস্তশিল্প, বাড়িতে তৈরি খাবারের বিক্রি। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কেনাবেচা। এক সময় হাতেগোণা কয়েক জন শিল্পী, ব্যবসায়ী বসতেন এই হাটে। এখন এক দিকে যেমন হাটে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫০০ জনের কাছাকাছি হয়েছে। তেমনই সপ্তাহের প্রায় প্রতি দিনই হাটে কিছু ব্যবসায়ী বসেন। এর ফলে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। অভিযোগ, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দূষণও। যেখানে ব্যবসায়ীরা বসেন তার চারপাশ পরিষ্কার থাকলেও খোয়াইয়ের বিভিন্ন অংশে জমছে প্লাস্টিক, জলের বোতল। ক্যানালের পাশেও একই ছবি নজরে আসছে।
২০১৭ সালের মে মাসে বীরভূম জেলা সফরে এসে শান্তিনিকেতনের খোয়াই নতুন করে সাজানোর কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খোয়াইয়ে একটি ‘ইকো ট্যুরিজম পার্ক’ করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে খোয়াই অঞ্চলে পর্যটকদের কিছু সুবিধা দেওয়া দরকার। সে কারণে সেখানে রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কিছু ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, জলের ব্যবস্থা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই এলাকা পরিদর্শন করেন তৎকালীন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। এর পরেই গত বছর পৌষমেলায় সেজে উঠেছিল ‘খোয়াই বনের অন্য হাট’।
রাজ্য পর্যটন দফতর, জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল পরিবেশবান্ধব বাঁশের মাচা। কোথাও ইউক্যালিপ্টাস, কোথাও আবার সোনাঝুরি গাছ ঘিরে বাঁশের মাচা, বাঁশের ছাউনি দিয়ে তৈরি হয়েছে পর্যটকদের বসার জায়গা। সে সবের নিচেও জমেছে প্লাস্টিক। ওই অংশ সমতলের থেকে কিছুটা নিচু হওয়ায় এক বার হাওয়া দিলেই যাবতীয় প্লাস্টিক উড়ে এসে জমছে মাচার নিচের অংশে। যে সব জায়গায় ঝোঁপের আকারে গাছ রয়েছে, সেই সব এলাকাও প্লাস্টিকে ভরে গিয়েছে। এর ফলে হাটের সৌন্দর্যায়নের থেকে বেশি পরিবেশ দূষণ এবং দৃশ্যদূষণ হচ্ছে বলেই মনে করছেন পর্যটকেরা।
অন্য দিকে খোয়াইয়ের আশেপাশে তৈরি হওয়া রিসোর্ট প্রসঙ্গেও কথা তুলছেন পর্যটকেরা। মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যটক আপ্যায়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ছাত্রজীবনে দেখা খোয়াই আর এই খোয়াইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। কৃত্রিম ভাবে সুন্দর করতে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে এই এলাকার।’’ আর এক পর্যটক শেফালি মাইতির কথায়, ‘‘আগের থেকে গাছের সংখ্যাও অনেক কমে গিয়েছে। এখন পর্যটকদের আধিক্য বেড়েছে। রিসর্ট বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃতি হারিয়ে গিয়েছে।’’
খোয়াই রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রণেন্দ্রনাথ সরকার জানান, দুর্গাপুজোর পরে খোয়াইয়ের এ রকম অবস্থা হয়ে যায়। তাঁদের দফতর ইতিমধ্যেই খুলেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি চোখে পড়েছে বন দফতরেরও। তাঁরাও এই দূষণ নিয়ে চিন্তিত। বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যেই এ কথা জেলা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছেন। এই সপ্তাহেই খোয়াই নিয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে। সেখানে বিভিন্ন সমস্যার বিষয় তুলে ধরে সমাধানসূত্র বের করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy