Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
State news

‘আমার স্ত্রীর ব্যাগে ২ গ্রাম সোনা ছিল দেখাতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব’

পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ শুল্ক দফতর প্রকাশ্যে নিয়ে আসুক। দু’কিলোগ্রাম কেন, প্রমাণ করুক দু’গ্রাম সোনা ছিল। আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।”

সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ১৭:৫১
Share: Save:

রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে, তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ভ্রান্ত খবর ছড়িয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ আনলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্ত্রী সোনা নিয়ে বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরের হাতে ধরা পড়েছিলেন—— এমন খবরের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই বলে দাবি করলেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ। পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ শুল্ক দফতর প্রকাশ্যে নিয়ে আসুক। দু’কিলোগ্রাম কেন, প্রমাণ করুক দু’গ্রাম সোনা ছিল। আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।”

গত কয়েক দিন ধরেই কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত বা প্রকাশিত একটি খবরের প্রসঙ্গ টেনে, রবিবার আমতলায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন অভিষেক। অভিষেক এ দিন বলেন, “যদি আমার স্ত্রীর কাছে সোনা পাওয়া গিয়ে থাকে, তা হলে সেই সোনা শুল্ক দফতরের কর্মীরা কেন বাজেয়াপ্ত করলেন না? তা হলে চৌকিদার কি ঘুমোচ্ছিলেন।”

কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে দেখানো কাস্টমসের একটি অভিযোগ পত্রের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “ওই অভিযোগ পত্রে কাস্টমস দাবি করেছে, তাঁদের কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমার প্রশ্ন, বিমানবন্দর তো রাজ্য পুলিশের এক্তিয়ারে নয়। সেখানের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী (সিআইএসএফ)-র। শুল্ক দফতরের কর্মীরা তা হলে সিআইএসএফ কর্মীদের কেন ডাকলেন না?”

আরও পড়ুন: এই চৌকিদার শুধু ধনীদের পাহারা দেন, মোদীকে তীব্র আক্রমণ প্রিয়ঙ্কার

অভিষেক অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রী হওয়ার জন্যই বেছে বেছে রুজিরা নারুলাকে হেনস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রীর কাছে শুল্ক দফতর গ্রিন চ্যানেলে টাকা চায়। এমন তোলাবাজি অনেক সাধারণ যাত্রীর সঙ্গেই করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ অভিষেকের। দাবি, সেই টাকা দিতে না চাওয়াতেই তাঁর স্ত্রীকে রেড চ্যানেলে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা হয়। “পরের দিনই সেই হেনস্থার কথা জানিয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন আমার স্ত্রী”— জানান অভিষেক।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কাস্টমসের অভিযোগ পত্র দেখিয়ে অভিযোগ করেন, “ওই অভিযোগ পত্রের সঙ্গে একটি কভারিং লেটার আছে। সেই চিঠিটা লিখছেন কাস্টমসের কলকাতা জোনের কমিশনার মণীশ চন্দ্র। সেখানে পরিষ্কার লেখা, ওই এফআইআর করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমসের নির্দেশে। অর্থাৎ দিল্লির নির্দেশেই ওই অভিযোগ করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, গোটাটাই বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের চক্রান্ত। ভোটের মুখে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে ফায়দা তোলার চেষ্টা চলছে। অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘আমার স্ত্রী হওয়া কী কোনও অপরাধ! সেই কারণেই কি তাঁকে হেনস্থা হতে হচ্ছে!”

অভিষেক দাবি করেন, ‘‘গত ১৫ মার্চ রাত ১২টা ৪০-এ ব্যাঙ্কক থেকে বিমান কলকাতায় পৌঁছেছে। সেই সময় থেকে ১টা ৫৫ পর্যন্ত বিমানবন্দরের সমস্ত ফুটেজ খতিয়ে দেখা হোক। শুল্ক দফতর সমস্ত ফুটেজ সামনে আনুক। আমি চ্যালেঞ্জ করছি যে ভগ্নাংশের ফুটেজেও যদি দেখা যায় আমার স্ত্রী হিসাবে তিনি কোনও বাড়তি সুবিধে পেয়েছেন, তা হলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।”

আরও পড়ুন: বাবার জেতা কেন্দ্রে লড়ছেন অখিলেশ, তবে এসপির প্রচার তালিকায় নেই মুলায়ম

তিনি বলেন, ‘‘আমি অমিত শাহ-র বিরুদ্ধে মামলা করেছি, সেই কারণেই কি গাত্রদাহ?” অভিষেকের কথায়, রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে এই ব্যক্তিগত আক্রমণ করা বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের সংস্কৃতি। তৃণমূল সাংসদ এ দিন কাস্টমসের পুলিশের বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “শুল্ক দফতর কি সিসিটিভি ফুটেজে দেখাতে পারবেন, যে আমার স্ত্রী তাঁর ব্যাগ তল্লাশি করতে দেননি, অথবা তিনি জোর করে বেরিয়ে এসেছেন?”

অভিষেক এ দিন বলেন, তাঁর স্ত্রী দু’দিনের জন্য ব্যাঙ্ককে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। তাঁর জন্ম ব্যাঙ্ককে এবং সেই সূত্রে তাঁর পাসপোর্ট তাইল্যান্ডের। যে বা যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রচার চালিয়েছিলেন এই কয়েক দিন ধরে, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান অভিষেক।

অভিষেকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের পরপরই একই ইস্যুতে পাল্টা একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। কয়েক দিন আগে তিনি এই ইস্যুতে একটি টুইট করেছিলেন। যদিও অভিষেকের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিতে আমল দিতে রাজি নন তিনি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে আমার টুইট মুছতে। আমি আমার অবস্থান বদল করব না।” অন্য দিকে বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, “শুল্ক দফতরের নির্দিষ্ট ক্ষমতা এবং ভূমিকা রয়েছে। তৃণমূল খুব পরিকল্পিত ভাবে সেই পরিকাঠামোটাই ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE