Advertisement
E-Paper

আইইডি তৈরি তৃণমূল অফিসের উপরে বসে, হতভম্ব এলাকাবাসী

পাড়ার মোড়ের বাড়িটার দোতলায় মাস তিনেক আগে নতুন ভাড়াটে এসেছে, জানতেন এলাকার লোকজন। নতুন ভাড়াটেরা কাপড়ের ব্যবসা করেন, এমনটাও শোনা ছিল। কিন্তু ঘরের মধ্যেই তারা ‘আইইডি’ (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরি করছে, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বর্ধমানের খাগড়াগড়ের মানুষজন।

উদিত সিংহ

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২০
খাগড়াগড়ের সেই বাড়ির মালিক হাসান চৌধুরী।  নিজস্ব চিত্র

খাগড়াগড়ের সেই বাড়ির মালিক হাসান চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

পাড়ার মোড়ের বাড়িটার দোতলায় মাস তিনেক আগে নতুন ভাড়াটে এসেছে, জানতেন এলাকার লোকজন। নতুন ভাড়াটেরা কাপড়ের ব্যবসা করেন, এমনটাও শোনা ছিল। কিন্তু ঘরের মধ্যেই তারা ‘আইইডি’ (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরি করছে, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বর্ধমানের খাগড়াগড়ের মানুষজন। যে বাড়ির একতলায় তৃণমূলের কার্যালয়, ঠিক তার উপরে বসেই নাশকতার বন্দোবস্ত হচ্ছেতা ভাবতেই পারেননি বলে দাবি তাঁদের। দোতলার বাসিন্দাদের কাজকর্ম একতলায় বসে বিন্দুবিসর্গ টের পাননি বলে দাবি শাসক দলের স্থানীয় কর্মীদেরও। তবে তৃণমূলের তরফে আপাতত ওই কার্যালয়ের সঙ্গে দলের সম্পর্ক মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িটির মালিক হাসান চৌধুরী বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। প্লাস্টার করা তিন কোণা বাড়িটির দোতলায় ওঠার মুখে নীল রঙের গ্রিলের দরজায় আপাতত তালা ঝুলছে। আশপাশে যথেষ্ট ঘনবসতি। একতলার এক দিকে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারখানা, সেটি বৃহস্পতিবার থেকেই বন্ধ। অন্য দিকে তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভায় এই অফিস থেকেই এলাকার নির্বাচনী কাজকর্ম পরিচালনা করেছিল শাসক দল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা মেহবুব রহমান ও তাঁর অনুগামীদের এই কার্যালয়ে হামেশাই বসতে দেখা যেত। রবিবার বন্ধ থাকলেও ঘটনার পরেও কার্যালয়ের দরজা এক-দু’বার খুলতে দেখেছেন এলাকাবাসী। তৃণমূলের এই অফিসের পাশ দিয়ে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি।

দোতলার ঘরভাড়া নিয়েছিলেন দুই দম্পতি ও তাদের একটি করে শিশুসন্তান। কেউই পাড়ার লোকজনের সঙ্গে মিশতেন না। পাড়ার দোকান থেকে কিছু কেনাকাটাও করতেন না। মহিলাদের দেখা যেত খুব কম। বোরখা ছাড়া তাদের কেউ কখনও দেখেনি। বাড়ির সামনে সারা দিন একটি মোটরবাইক দাঁড়িয়ে থাকত। মাঝেমধ্যে পুরুষ সদস্যদের বড় কাপড়ের পুঁটুলি নিয়ে ওই মোটরবাইকে করে বেরিয়ে যেতে দেখা যেত। কখনওসখনও কিছু অচেনা লোকজনও আসা-যাওয়া করত বলে আশপাশের লোকজন জানান। অনেক সময়ে সেই সব লোকজনের সঙ্গেও পুঁটুলি থাকত।

ভাড়াটেদের কোনও পরিচয়পত্র রাখেননি বাড়ির মালিক হাসান। পুলিশ তাঁকে ডেকে জেরা করেছে। হাসান বলেন, “দোতলাটা ফাঁকা ছিল। ওরা এসে থাকতে চাওয়ায় ভাড়া দিয়েছিলাম। সন্তান নিয়ে থাকতে এসে এই সব কাণ্ড করবে, কী করে বুঝব!” আশপাশের বাসিন্দারা জানান, কাছে বর্ধমান শহরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ থাকায় অনেকেই ঘরভাড়া নেন। অনেক বাড়ির মালিকই ভাড়াটেদের পরিচয়পত্র রাখেন না। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।

পাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ খোকন, শেখ সাদ্দামরা বলেন, “আমরা হতভম্ব। অনেকেই ঘরভাড়া নিয়ে নিজেদের মতো থাকেন। সন্দেহ হয় না। এই ঘটনাটা চিন্তায় ফেলে দিল।” তাঁরা জানান, ঘটনার পরে পাড়ার লোকেরা ছুটে গেলে উপর থেকে মহিলারা জানান, তাঁরা ঠিক আছেন, কাউকে ভিতরে ঢুকতে হবে না। পরে পুলিশ ভিতরে ঢোকে।

ঘটনার পরপরই তৃণমূলের কার্যালয় থেকে দলের পরিচয় লেখা সাইনবোর্ড খুলে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, দরজা খুলে অনেক ফ্লেক্স, কাট-আউটও বের করে নেওয়া হয়েছে। এমনকী, দেওয়ালে থাকা ঘাসফুলের ছবিও মুছে ফেলা হয়েছে চুনকাম করে। তবে অফিসের সামনে এখনও উড়ছে তৃণমূলের পতাকা। ঘটনার পর থেকে খোঁজ নেই তৃণমূল নেতা মেহবুব রহমানের। দলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশ মানছেন, “মেহবুবদা ওই অফিসে যেতেন। কিন্তু আমাদের পার্টি অফিসের দোতলায় বসে যে এমন কাণ্ড করা হচ্ছে, তা একেবারেই জানা ছিল না।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলেন, “ওই বাড়ির নীচে যে তৃণমূলের অফিস ছিল, তা এই প্রথম শুনলাম। খোঁজ না নিয়ে এ ব্যাপারে বিশদে বলতে পারব না।”

(সহ-প্রতিবেদন: রানা সেনগুপ্ত)

burdwan blast nia khagragadh al jihad udit singha hasan chowdhury tmc party office IED state news online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy