E-Paper

বাড়ি লাগোয়া দোকানঘরে ঠাসা বাজি, যে কোনও দিন ঢোলাহাট হতে পারে হাড়ালও

বাসিন্দাদের একাংশ জানান, কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশের নজরদারি বাড়ে। ধরপাকড় চলে। তখন কিছু দিন বন্ধ থাকে বাজি তৈরির কাজ। তার পরেই আবার পরিস্থিতি যে কে সে-ই।

সমীরণ দাস

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫১
বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হওয়া শব্দবাজি। বুধবার, হাড়ালে।

বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হওয়া শব্দবাজি। বুধবার, হাড়ালে। —নিজস্ব চিত্র।

একের পর এক দুর্ঘটনাতেও নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরিতে ছেদ পড়েনি চম্পাহাটির হাড়ালে। পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাটে বাজি বিস্ফোরণে আট জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে বুধবার হাড়ালের বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর শব্দবাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, তল্লাশির সময়ে প্রায় প্রতিটি বাড়ি, বাড়ি লাগোয়া দোকান অথবা কারখানা থেকে নিষিদ্ধ বাজি মিলেছে। কিছু বৈধ বাজিও ছিল। এ দিন অবশ্য এলাকায় ঘুরে অন্যান্য দিনের মতো বাজি তৈরির ছবি চোখে পড়েনি। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশের নজরদারি বাড়ে। ধরপাকড় চলে। তখন কিছু দিন বন্ধ থাকে বাজি তৈরির কাজ। তার পরেই আবার পরিস্থিতি যে কে সে-ই।

বাজি তৈরি ও বিক্রির জন্য বিখ্যাত হাড়াল। ওই এলাকায় কয়েকশো বাজির দোকান রয়েছে। বাইরে থেকে বাজি এনে বিক্রি করা হয় সেখানে। পাশাপাশি, এলাকা জুড়েও বাজি তৈরি হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, বাজি তৈরির বৈধ লাইসেন্স রয়েছে এলাকার ১৯ জন ব্যবসায়ীর। কিন্তু এলাকা জুড়ে কার্যত ঘরে ঘরে বাজি তৈরি হয়। বেআইনি শব্দবাজিই তৈরি হয় বেশি। কালীপুজোর আগে তো বটেই, অন্যান্য পুজো এবং উৎসবের মরসুমেও বাজি তৈরির পরিমাণ বাড়ে। এলাকার মহিলারা বিভিন্ন কারখানায় দৈনিক মজুরিতে বাজি তৈরির কাজ করেন। গত ডিসেম্বরে হাড়ালের একটি বাড়িতে বাজি তৈরির সময়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুই মহিলার। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এখনও ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে সেই বাড়ি।

ওই দুর্ঘটনার পরে কিছু দিন এলাকা জুড়ে কাজ বন্ধ থাকলেও পরে আবার তা চালু হয়। মাস দুয়েক আগেও এলাকায় গিয়ে একাধিক জায়গায় প্রকাশ্যে শব্দবাজি তৈরি হতে দেখা গিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, ইদের আগে প্রতি বারের মতো এ বারও বাজির বিক্রি বেড়েছিল। ফলে, রমরমিয়ে বাজি তৈরি ও বিক্রি হয়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বহু বাড়ির পাশেই দোকান তৈরি করে বাজি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে দোকান বন্ধ থাকলেও ভিতরে মজুত রয়েছে প্রচুর বাজি। এমনকি, বাড়ি লাগোয়া ছোট কারখানায় বাজি তৈরি করা হয় বলেও অভিযোগ। বহু মহিলা শব্দবাজির বরাত নিয়ে এসে বাড়ির বারান্দা বা ঘরে বসেই তা তৈরি করেন। বাজি তৈরির বারুদ বা তৈরি হওয়া বাজি শুকোতে দেওয়া হয় বাড়ির উঠোন বা সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও দিন ঢোলাহাটের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা। অভিযোগ, সচেতনতার ছিটেফোঁটাও নেই এলাকার মানুষের।

বাজি তৈরির অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী অর্জুন মণ্ডল বললেন, “এটা ঠিকই যে, এলাকায় অনেকেই নিয়ম না মেনে বাড়িতে বা কারখানায় বাজি বানাচ্ছেন। এর একমাত্র সমাধান বাজি ক্লাস্টার। সেখানে নিয়ম মেনে ফাঁকা জায়গায় বাজি তৈরি হবে। বিপদের আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু, সরকার উদ্যোগী হয়েও এত দিনে ক্লাস্টার তৈরি করে উঠতে পারল না। সেটা না হলে এ ভাবেই লুকিয়ে-চুরিয়ে কাজ চলবে। কোথাও কিছু হলেই পুলিশ আসবে। বৈধ লাইসেন্স নিয়েও আমাদের চোরের মতো থাকতে হবে।” প্রশাসন জানিয়েছে, ক্লাস্টারের কাজ এগোচ্ছে। তবে, ব্যবসায়ীদেরই একাংশের মতে, ক্লাস্টার হলে বৈধ ব্যবসায়ীরাই সেখানে জায়গা পাবেন। অবৈধ ব্যবসায় রাশ টানা যাবে না। তার জন্য কড়া হতে হবে প্রশাসনকে।

পুলিশ জানিয়েছে, বেআইনি বাজি রুখতে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। মাঝেমধ্যে অভিযানেও নামে পুলিশ। মানুষকে সতর্ক ও সচেতন করার চেষ্টা হয় বলেও দাবি পুলিশের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firecrackers Dholahat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy