Advertisement
E-Paper

চুপ প্রশাসন, মাটি-মাফিয়া রাজ শাসনে

খাতায়-কলমে যা কৃষিজমি, আদতে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাটি-মাফিয়াদের মৃগয়া ক্ষেত্র! নিয়মের তোয়াক্কা না করে পেল্লাই যন্ত্রে মাটি কাটা চলছে। ডাম্পার-ট্রাকে সেই মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায় বা নিচু জমি ভরাটের কাজে। দেখার কেউ নেই!

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:১৪
অবাধ: শাসনে চলছে মাটি কাটা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অবাধ: শাসনে চলছে মাটি কাটা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

খাতায়-কলমে যা কৃষিজমি, আদতে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাটি-মাফিয়াদের মৃগয়া ক্ষেত্র! নিয়মের তোয়াক্কা না করে পেল্লাই যন্ত্রে মাটি কাটা চলছে। ডাম্পার-ট্রাকে সেই মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায় বা নিচু জমি ভরাটের কাজে। দেখার কেউ নেই!

এ ছবি বারাসত-২ ব্লকের শাসন-খড়িবাড়ি এলাকার। ভূ-বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিয়ম না-মেনে যথেচ্ছ মাটি কাটার জন্য ভূগর্ভের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর জন্য জেল ও জরিমানা— দুই শাস্তিরই সংস্থান রয়েছে। তবু শাসনের কৃষিজমি ও মেছোভেড়ির জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে কই! মাটি বোঝাই ট্রাক-ডাম্পারের ধাক্কায় এ পর্যন্ত অনেক প্রাণ গিয়েছে। এই কারবারের বিরুদ্ধে জনরোষও প্রকাশ্যে এসেছে আগে। তবু মাটি-মাফিয়াদের লাগাম পরানো যায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন সব জেনেও ব্যবস্থা নেয় না। ওই ব্লকের শাসন, ফলতি-বেলিয়াঘাটা, দাদপুর, কীর্তিপুর-১ ও ২ এবং রোহান্ডা— মূলত এই ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই বেআইনি ভাবে দিনরাত মাটি কাটা চলে। রবিবার শাসনের খসুরহাটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ৬৫ বিঘা কৃষিজমিতে ৫টি পেল্লাই যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কাটা চলছে। সেই মাটি তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাজির ডাম্পার ও ট্রাক। গ্রামবাসীরা জানান, কিছু জমি ব্যক্তি-মালিকানাধীন। বাদবাকি বেশিটাই খাসজমি।

মাটি কারবারিরাই জানাচ্ছে, এই এলাকায় অন্তত ৫০০টি গাড়িতে মাটি বহন হয়। এক-একটি গাড়ি প্রতিদিন গড়ে ১০ বার করে মাটি নামিয়ে আসে। একটি ট্রাকে প্রায় ২৫০ ঘনফুট মাটি ধরে। এক বিঘে জমি থেকে ৬ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হলে প্রায় ৪০০ ট্রাক মাটি মেলে। এক ট্রাক মাটি ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসেবে এখানে প্রতিদিন মাটি কাটা বাবদ ৫০-৬০ লক্ষের লেনদেন হয়। অথচ, সরকারি নিয়ম বলছে— কৃষিজমির চরিত্র বদল দূরস্থান, অনুমতি ছাড়া জমি থেকে মাটি কাটা যায় না। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যের কথায়, “কৃষিজমির মাটি কাটা যায় না। অন্য জমির ক্ষেত্রে কত মাটি কাটা হবে সে তথ্য জানিয়ে, রাজস্ব দিয়ে তবে মাটি কাটার অনুমতি পাওয়া যায়।”

তা হলে কী ভাবে চোখের সামনে অবাধে মাটি কাটা চলছে? অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও নেতাদের মদতেই কাজ চলছে। পুলিশের সঙ্গে মাটি কারবারিদের অলিখিত চুক্তিও হয়। জেলার পুলিশ সুপার জানান, বামেরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন সিপিএমের স্থানীয় নেতারা কারবারে মদত দিতেন, সিপিএমের স্থানীয় নেতা কুতুবউদ্দিন আহমেদের পাল্টা অভিযোগ, “কোটি টাকার মাটি কাটার কাজ করছেন তৃণমূলের নেতারা। দলের উপরমহলের নেতা থেকে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর, পুলিশ সবাই টাকার ভাগ পাচ্ছে।” অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা মেহেদি হাসান।

Soil Mafia Shasan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy