গত প্রায় তিন মাসে (১ জুন থেকে ৭ অগস্ট) নতুন ভোটার কার্ডের জন্য আবেদনের সংখ্যা তার আগের তিন মাসের তুলনায় প্রায় চার গুণের বেশি বেড়েছে। যা ওই সময়ে পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে। গত দু’মাসে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে যত আবেদন জমা পড়েছে, তা ওই সময়ে গোটা রাজ্যের মোট আবেদনের অন্তত ৫৮ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানে কার্যত ‘অবাক’ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের নির্দেশ, বছর তিরিশের বেশি বয়সের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে শুনানি করতেই হবে।
গত ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত যে তথ্য, তাতে গোটা রাজ্যে আবেদনের সংখ্যা মোটের উপর ‘স্বাভাবিক’ বলেই জানাচ্ছেন কমিশন কর্তাদের একাংশ। কিন্তু ১ জুন থেকে ৭ অগস্ট পর্যন্ত সীমান্তবর্তী জেলাগুলি-সহ গোটা রাজ্যে লাফিয়ে বেড়েছে আবেদনের সংখ্যা। গত জুনেই বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘোষণা হয়েছিল। এবং কমিশন তখনই জানায়, পরে তা হবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশেই। কমিশন-কর্তাদের একাংশের মতে, ২০১১ সালে শেষ বার জনগণনা হয়েছিল দেশে। তাতে এ রাজ্যের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১৪%। তার পর থেকে এখনও জনসুমারি হয়নি। ফলে অনুমান করা যায়, এ পর্যন্ত তেমন হারেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে থাকতে পারে রাজ্যে। কিন্তু এলাকাভিত্তিক ভাবে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশের মতো। তাই তাঁদের দাবি, এখন ভোটার-আবেদন যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা ‘অভূতপূর্ব’ (তথ্য সবিস্তার সারণিতে)।
এক কর্তার কথায়, “এটা হতেই পারে, এসআইআর বা নাগরিকত্ব বিতর্কের আবহে যোগ্য ব্যক্তিরা দ্রুত ভোটার তালিকায় নাম তোলাতে চাইছেন। তবে গোটা বছর ধরে এখন সে কাজ হয়। তাই আবেদনের সংখ্যা চালু গতিকে ছাপিয়ে গেলে সন্দেহ স্বাভাবিক। তালিকায় বেনোজল ঠেকাতে সতর্ক থাকা জরুরি।” বিশেষত এ রাজ্যে যখন ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কয়েক জনআধিকারিকের বিরুদ্ধে।
কমিশনের তথ্য বলছে, ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত গোটা রাজ্যে মোট জমা পড়া ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৩০টি আবেদনের মধ্যে বাদ গিয়েছে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৬৪১টি। অনুমোদিত হয়েছে (অর্থাৎ, ভোটার তালিকায় সংযুক্ত) ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৩২৯টি আবেদন। আর ১ জুন থেকে ৭ অগস্ট পর্যন্ত জমা পড়া ১০ লক্ষ ৪ হাজার ৬৬৬টি আবেদনের মধ্যে এখনই বাদ গিয়েছে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৮৭টি আবেদন। এখনও প্রায় ২.৬৮ লক্ষ আবেদন যাচাই পর্যায়েই রয়েছে।
কমিশনের নির্দেশ, বছর ত্রিশের বেশি বয়সের আবেদনকারীদের শুনানি করতেই হবে। কমিশনের প্রতিনিধির কাছে আবেদনকারীকে সশরীর হাজির হতে হবে। ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলাতে তিনি যোগ্য কি না, তা খতিয়ে দেখবেন কমিশন-আধিকারিক। কমিশন কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, ১৮-৩০ বছর বয়সের মধ্যে থাকা আবেদনকারীদের নিয়ে সন্দেহ তেমন নেই। কারণ, প্রথম ভোটার হিসেবে ওই বয়স সীমার মধ্যে নতুন আবেদন আসতেই পারে। কিন্তু চল্লিশ বা পঞ্চাশোর্ধ্ব কোনও ব্যক্তি আবেদন করলে, সেটা সন্দেহজনক। কারণ, গোটা বছর জুড়ে নাম তোলার কাজ হয়। ফলে বেশি বয়সের কেউ এত দিনে কেন আবেদন করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। যদিও মহারাষ্ট্রে ভোটের আগে এক বছরে রাতারাতি ৪০ বছর বা ৫০ বছর বেশি বয়সিদের বিপুলসংখ্যক নাম তালিকায় উঠেছে এবং তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাহুল গান্ধী।
এর সঙ্গে ঠিকানায় না পৌঁছনো ভোটার কার্ডগুলির তথ্যও বার করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সব জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের উদ্দেশে কমিশনের বার্তা, ডাক বিভাগ কতগুলি ভোটার কার্ড আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে দিতে পারেনি, সেই তথ্যও জমা করতে হবে। সাধারণত, ভোটার কার্ড ঠিকানায় না পৌঁছলে, তা সংশ্লিষ্ট জেলার এসডিও বা বিডিও কার্যালয়ে পড়ে থাকে। কমিশনের নির্দেশে গত এক বছরে যত আবেদন (ফর্ম-৬, যা ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলার জন্য) অনুমোদিত হয়েছে, সেগুলির নমুনা যাচাই করতে হবে জেলার সিনিয়র আধিকারিকদের। পাশাপাশি, যত ডেটা-এন্ট্রি-অপারেটর নিয়োগ হয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে, তাঁদের পূর্ণাঙ্গ তথ্যও চাইছে কমিশন। ১৪ অগস্টের মধ্যে জেলাশাসকদের এই সব রিপোর্ট জমা করতে হবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কার্যালয়ে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)