Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দিন তিনেক শীতের ব্যাটে চার-ছয়ের আশা

রাস্তা জুড়ে ছিল হরেক বাধা। সেগুলো ডিঙিয়ে শেষ-পৌষে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ধাঁচেই দেদার ছয়-চার হাঁকানোর আশ্বাস দিচ্ছে শীতের ব্যাট।হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে তুষারপাত চলছে বেশ কয়েক দিন ধরে। সেই তুষার-সৌজন্যে উত্তর ভারত জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে শৈত্যপ্রবাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৯
Share: Save:

রাস্তা জুড়ে ছিল হরেক বাধা। সেগুলো ডিঙিয়ে শেষ-পৌষে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ধাঁচেই দেদার ছয়-চার হাঁকানোর আশ্বাস দিচ্ছে শীতের ব্যাট।

হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে তুষারপাত চলছে বেশ কয়েক দিন ধরে। সেই তুষার-সৌজন্যে উত্তর ভারত জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস নেমে আসছে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় হয়ে বিহার-ঝাড়খণ্ডেও। হাওয়া অফিসের খবর, সেই বাতাস বাঁকুড়া, বীরভূম হয়ে ঢুকতে শুরু করেছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। আজ, শুক্রবার থেকে অন্তত তিন দিন দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে জমিয়ে শীত থাকবে বলেই আশা করছেন আবহবিদেরা। অর্থাৎ পৌষ-সংক্রান্তিতে (শনিবার) কাঁপন ধরানোর ঐতিহ্য বজায় রাখারই ইঙ্গিত মিলছে।

ধাঁধা অবশ্য থাকছেই। বুধবার রাতে কলকাতায় উত্তুরে হাওয়া যে-ভাবে বইতে শুরু করেছিল, তাতে অনেকে ভেবেছিলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যাবে। কিন্তু উত্তুরে বাতাস মাঝরাতের পরে হঠাৎই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা সে-ভাবে নামতে পারেনি। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণাবর্তের জেরেই এ দিন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রির নীচে নামতে পারেনি। তবে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা নেমেছে অনেকটা। বীরভূমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নীচে নেমে গিয়েছে। পারদের ভাল রকম পতন হয়েছে নদিয়া, বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল, বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকাতেও।

পারদ নিম্নমুখী

কোথায় বৃহস্পতি আজ (পূর্বাভাস)

• কলকাতা ১৬.১ ১৩

• আসানসোল ১১.৫ ৯

• কৃষ্ণনগর ১২.৬ ১০

• বর্ধমান ১৩.১ ১০

• শ্রীনিকেতন ১১.০ ৯

• বাঁকুড়া ১২.৫ ১০

(সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, ডিগ্রি সেলসিয়াসে)

আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিহার-ঝাড়খণ্ডে শীতের দাপটের প্রভাব আজ, শুক্রবার থেকেই মালুম হবে এ রাজ্যে। পশ্চিমের জেলাগুলির কিছু জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে নেমে যেতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, ‘‘শুক্রবার কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই নামবে। কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকতে পারে।’’

আর এই সব কিছুরই মূলে আছে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের শৈত্যপ্রবাহ। শীতকালে কোনও এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সেখানকার সেই সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেলে সেই পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ বলে। এই পরিস্থিতর সৃষ্টি হয়েছে পঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, উত্তর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিদর্ভের অধিকাংশ এলাকায়। দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে ওই সব অঞ্চল। আবহবিদদের অনেকে বলছেন, যে-ভাবে কনকনে উত্তুরে হাওয়া আসছে, তাতে কয়েক দিনের মধ্যে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কিছু কিছু এলাকাতেও শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এ বার মরসুমের গো়ড়া থেকেই বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে শীত। তার পিছনে আবহবিদেরা দায়ী করছিলেন পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া) এবং কনকনে উত্তুরে হাওয়ার অভাবকেই। পৌষের শেষে এসে ঝঞ্ঝার আকাল মিটেছে। জোর পেয়েছে উত্তুরে হাওয়াও। কিন্তু এ-সব দেখেও শীত-উপোসী বাঙালির চিন্তা কাটছে না। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এমন শীত কি স্থায়ী হবে?

আবহবিদেরা বলছেন, তাপমাত্রার পতন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ধাপে ধাপে কিছুটা নামার পরে প্রাকৃতিক কারণেই ফের তাপমাত্রা বাড়ে। সেটাই শীতের স্বাভাবিক ছন্দ। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তার মতে, এখন শীতের অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। তাই এ বার তাপমাত্রার পতন হলে শীত কিছু দিন থিতু হবে।

মাঘের শুরুতে সেটুকুই স্বস্তি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter January Cold
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE