Advertisement
E-Paper

‘আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়, অথচ পিসির টাকায় ফ্ল্যাট কিনছিল’! ট্রলি-কাণ্ড শুনে বিস্মিত ফাল্গুনীর স্বামী

শুভঙ্করের পিসি সুমিতা ঘোষের দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে ট্রলি ব্যাগে ভরে গঙ্গায় ভাসাতে যান স্ত্রী ফাল্গুনী এবং শাশুড়ি আরতি ঘোষ। কুমোরটুলি গঙ্গার ঘাটের কাছে তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৬
Madhyamgram Incident

ট্রলি-কাণ্ডে ধৃত ফাল্গুনী ঘোষ (বাঁ দিকে) এবং তাঁর মা আরতি ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বাবার পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করেছিলেন অসমের শুভঙ্কর ঘোষ। ঘটকালির ওয়েবসাইটে কয়েকশো মেয়ের মধ্যে থেকে কলকাতার দমদমের বাসিন্দা ফাল্গুনী ঘোষকে পুত্রবধূ হিসাবে বেছেছিলেন যোরহাটের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী সুবল ঘোষ। কিন্তু ছেলের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। শুভঙ্করের স্ত্রী এবং শাশুড়ি তাঁরই এক পিসিকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে। স্ত্রী-শাশুড়ির জেল হেফাজত হওয়ার পরদিন, শুক্রবার নিজেদের দাম্পত্যের কাহিনি শোনালেন ফাল্গুনীর স্বামী। তাঁর অভিযোগ, স্ত্রীর ‘ব্যভিচারী জীবনযাত্রা’র কথা জেনেও তিনি চুপ ছিলেন। পারিবারিক সম্মানহানির ভয়ে কখনও কাউকে কিছু বলতে পারেননি। কিন্তু স্ত্রী যে টাকার জন্য তাঁর বিধবা পিসিকে খুন করতেও পিছপা হবেন না, সেটা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি।

গত মঙ্গলবার শুভঙ্করের পিসি সুমিতা ঘোষকে খুন করে দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে ট্রলি ব্যাগে ভরে গঙ্গায় ভাসাতে গিয়েছিলেন স্ত্রী ফাল্গুনী এবং শাশুড়ি আরতি ঘোষ। কুমোরটুলি গঙ্গার ঘাটের কাছে তাঁদের ধরে ফেলেন স্থানীয়েরা। গ্রেফতার হন মা-মেয়ে। শুভঙ্করের দাবি, বিয়ে করে তিনি ঠকেছেন। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে ওই যুবক বলেন, ‘‘ম্যাট্রিমনি সাইটে আমার বিয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন বাবা। অনেককে দেখার পরে ফাল্গুনীর সঙ্গে আমার বিয়ে ‘ফাইনাল’ করেছিলেন উনি।’’ শুভঙ্কর বলে চলেন, ‘‘ফাল্গুনীর বাবা প্রয়াত। পিতৃহারা মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে টিউশন পড়িয়ে সংসার চালায়। এই সব শুনে বাবার ভাল লেগেছিল। আমাদের বিয়ের সময়ে ফাল্গুনী আর ওর মা থাকত দমদমের পূর্ব সিঁথি এলাকায়। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে কলকাতা যাওয়ার জেদ শুরু করে ও। অনেক বুঝিয়েছি। অসমে আমাদের আর একটি বাড়িতে ওকে নিয়ে থাকা শুরু করি। কিন্তু তার পরেও গন্ডগোল!’’ কী রকম?

শুভঙ্করের দাবি, যোরহাটে থাকাকালীন ফাল্গুনীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ তৈরি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ও আমার সামনেই ওর পুরুষবন্ধুদের সঙ্গে অশালীন আলোচনা করত। ওদের গল্পের বিষয়ে আমার আপত্তি ছিল। নিষেধ করলেই চিৎকার-চেঁচামেচি, বাড়িতে অশান্তি। তার পর ওর নিয়মিত মদ্যপান এবং সিগারেট খাওয়ার বদভ্যাস ভাল লাগেনি আমার। তবে পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে কাউকে কিছু বলিনি।’’ বছর ছয় আগের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন শুভঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘যোরহাটে আমাদের পাড়ার দুর্গাপুজো ছিল সে বার। ও মদ খেয়ে নাচানাচি করে জ্ঞান হারিয়ে মণ্ডপে পড়ে যায়। প্রতিবেশীরা ওকে বাড়ি দিয়ে গিয়েছিল।’’ তিনি জানান, বছর তিনেক আগে চিকিৎসার জন্য তাঁর বাবা কলকাতা গিয়েছিলেন। ফাল্গুনীও তখন বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতা আসেন। দিন দশেক পরে সকলের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু স্ত্রী না ফিরে মধ্যমগ্রামে বাপের বাড়ি থেকে ডিভোর্স চেয়ে বসেন। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘হঠাৎ খোরপোশ চেয়ে মামলা করল। আদালতের নোটিস পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম।’’

মামলা চলছিল। ফাল্গুনী ছিলেন বাপের বাড়িতেই। কিছু দিন আগে বিধবা এবং নিঃসন্তান পিসিশাশুড়ি তাঁদের বাড়িতে উঠেছিলেন। অভিযোগ, বিধবার টাকা এবং গয়নার জন্য তাঁকে খুন করেছেন ফাল্গুনী। তাঁকে সাহায্য করেন আরতি। আরও কেউ জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ পুলিশের। শুভঙ্কর দাবি করেছেন, নতুন একটি ফ্ল্যাট কিনতে চেয়েছিলেন ফাল্গুনী। সে জন্য পিসির ১৮ ভরি সোনার গয়না এবং ব্যাঙ্কে থাকা ছ’লক্ষ টাকার উপর নজর পড়েছিল তাঁর। শুভঙ্করের আরও দাবি, ফ্ল্যাট কিনতে ছ’লক্ষ টাকা ‘ডাউন পেমেন্ট’ লাগত। ওই টাকা জোগাড় করতে এতটাই মরিয়া ছিলেন ফাল্গুনী, খুন করতেও পিছপা হননি।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, পিসিশাশুড়িকে খুনের আগের দিন এবং খুনের দিন তাঁর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে দুই দফায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা তুলেছিলেন ফাল্গুনী। সেই টাকা কোন কাজে লাগিয়েছিলেন, সেটাও তদন্তসাপেক্ষ।

Trolley case Murder Case madhyamgram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy