বেসামাল। উত্তর থেকে দক্ষিণ— লাগাতার বৃষ্টিতে নাকাল হলো মহানগর। হাওয়া অফিসের সতর্কতা, ছাতায় বিশেষ ভরসা রাখা ঠিক হবে না আজ, বৃহস্পতিবারেও। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বর্ষণের ঘাটতি মেটার আশা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিল গাঙ্গেয় বঙ্গ। মুশকিল আসানের আশ্বাসও ছিল তার হাবেভাবে। কিন্তু সেই নিম্নচাপ হঠাৎ অন্য মূর্তি ধরায় প্রমাদ গুনছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করায় বৃষ্টি-ঘাটতি মেটার সম্ভাবনা ছাপিয়ে ঘাড়ে এসে চাপছে প্রচণ্ড দুর্ভোগের আশঙ্কা।
যাকে বিপত্তারণ ভাবা হচ্ছিল, তাকে ঘিরে বিপদের ভয় কেন?
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, সুস্পষ্ট নিম্নচাপটি মঙ্গলবার রাতেই নিম্নচাপের চেহারা নিয়েছিল। বেশি রাতে শক্তি বাড়িয়ে সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে দক্ষিণবঙ্গ পেরিয়ে চলে যায় বাংলাদেশে। কিন্তু আবহবিদেরা বুধবার দুপুরে উপগ্রহ-চিত্রে দেখেছেন, গভীর নিম্নচাপটি অতিগভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ফিরে আসছে দক্ষিণবঙ্গের দিকেই!
অতিগভীর নিম্নচাপ ফিরে আসায় কতটা বিপদ হতে পারে বাংলার?
ঘুরে দাঁড়ানো নিম্নচাপের দাপটে আজ, বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতাতেও, জানাচ্ছেন আলিপুর আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনেকে বলছেন, সাগর থেকে স্থলভূমিতে ঢোকার পরে নিম্নচাপ সাধারণ ভাবে একটি সরলরেখা বরাবর এগিয়ে যায় এবং বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। স্থলভূমিতে ঢোকার পরেও নিম্নচাপের শক্তি বাড়ানো এবং এমন অভিমুখ বদল সচরাচর দেখা যায় না। সেই জন্যই এ বারের নিম্নচাপটির মতিগতি বিশেষ ভাল ঠেকছে না তাঁদের।
এ বারের নিম্নচাপটির এই ভাবে উল্টোরথে সওয়ার হওয়ার কারণ কী?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, স্থলভূমিতে ঢোকার পরে নিম্নচাপের অভিমুখ বদলের ব্যাপারটা পরিমণ্ডলে বায়ুচাপের তারতম্য এবং বায়ুপ্রবাহের অভিমুখের উপরে নির্ভর করে। সেই সব আবহজনিত কারণেই যশোরের উপরে থাকা অতিগভীর নিম্নচাপটির অভিমুখ আবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে ঘুরে গিয়েছে।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, অতিগভীর নিম্নচাপটি নদিয়া-মুর্শিদাবাদ হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসছে ঠিকই। তবে সে আর শক্তি বাড়াবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই সে এতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, তার প্রভাবে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমানে অতিভারী বৃষ্টি হবে। পরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে ঝাড়খণ্ড-বিহারেও। তাতেও বাংলায় বিপদের আশঙ্কা ষোলো আনা। কেন?
এক আবহবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, ঝাড়খণ্ড ও বিহারে ভারী বৃষ্টি হলে সেই জল দামোদর উপত্যকায় নেমে আসবে। তাতে বিপাকে পড়তে পারে বাংলা। সেই জন্য সম্ভাব্য অতিবৃষ্টির ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষকেও। পাঞ্চেত ও মাইথন বাঁধে জলস্তর বৃদ্ধির ফলে ডিভিসি-র তরফেও বুধবার সন্ধ্যায় বন্যা-সতর্কতা জারি করা হয়। তারা সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে রাজ্য সরকারের কাছেও।
লাইনে ফাটল, বিপর্যস্ত ট্রেন
দমদম ও দমদম ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে লাইনে ফাটল ধরায় বুধবার রাতে বনগাঁ শাখায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। চলাচল বিপর্যস্ত হয় মেন ও ডানকুনি লাইনেও। সারি সারি দাঁড়িয়ে যায় ট্রেন। বৃষ্টির মধ্যে এই বিভ্রাটে ঘরমুখী যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। কিছু যাত্রীর অভিযোগ, ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার পরেও শিয়ালদহ স্টেশনে কোনও ঘোষণা হয়নি। ফলে অনেকেই বিকল্প ব্যবস্থা না-করে ট্রেনের আশায় দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করেন। রাত বাড়তে থাকায় লাইন ধরে হেঁটে গিয়ে বাস বা অন্য যানবাহন ধরার চেষ্টা করেন বহু যাত্রী। রেল সূত্রের খবর, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও তাপমাত্রার হঠাৎ বদলের জেরেই রেললাইনে ফাটল ধরেছে। মেরামতির পরে রাত সওয়া ১০টা নাগাদ ফের শুরু হয় ট্রেন চলাচল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy