Advertisement
০৯ মে ২০২৪

Illegal constructions: জেল থেকেই আসছে হুমকি, তিনতলার অনুমোদন নিয়ে অবাধে দশতলা উঠছে শহরে

৬৬টি ওয়ার্ডের জন্য হাওড়া পুরসভার বাড়ি ভাঙার দল রয়েছে মাত্র একটি!

বেআইনি: কালী কুণ্ডু লেনে নিয়ম না মেনে তৈরি হচ্ছে বহুতল।

বেআইনি: কালী কুণ্ডু লেনে নিয়ম না মেনে তৈরি হচ্ছে বহুতল। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৯
Share: Save:

ভূত রয়েছে সর্ষের মধ্যেই। তাই বছরের পর বছর হাওড়া জুড়ে চলে বেআইনি নির্মাণের রমরমা। অসাধু প্রোমোটার, পুলিশ, পুরকর্মী থেকে তোলাবাজ দুষ্কৃতী— লাভের গুড় জুটে যায় সকলেরই। তাই কি বদলায় না কিছু?

ঘটনা এক: রাত তখন ১২টা। মোবাইল বেজে ওঠায় ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তপন স্বর্ণকারের (নাম পরিবর্তিত)। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এসেছিল প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি থাকা, হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী রোমি জানা ওরফে ‘ভাগ্না’র হাড় হিম করা হুমকি— পাঁচ লক্ষ টাকা চাই।

ঘটনা দুই: দাবি মতো টাকা না পাওয়ায় হাওড়ারই এক প্রোমোটারকে খুনের ছক কষেছিল সেই প্রেসিডেন্সি জেলেরই বিচারাধীন বন্দি কানহাইয়া কাহার। সে-ও হাওড়ার আর এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শিবপুর ঘাটে জড়ো হওয়া তার তিন শাগরেদ শেখ আকবর, মহম্মদ সাজিদ ও মিঠু যাদবকে পুলিশ ধরে ফেলায় সে যাত্রায় ভেস্তে গিয়েছিল প্রোমোটারকে খুনের পরিকল্পনা।

ওলাবিবিতলায় নিয়ম না মেনে তৈরি হচ্ছে বহুতল।

ওলাবিবিতলায় নিয়ম না মেনে তৈরি হচ্ছে বহুতল। নিজস্ব চিত্র।

উপরের দু’টি ঘটনাই অতি সাম্প্রতিক কালের। গত বছরই শালিমারে রানি রাসমণির জমিতে প্রোমোটিংকে কেন্দ্র করে আন্দুল রোডে খুন হয়েছিলেন প্রোমোটার ধর্মেন্দ্র সিংহ। বর্তমানে হাওড়া জুড়ে নির্মাণ শিল্প বা প্রোমোটিং ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় প্রোমোটারেরাই এখন তোলাবাজ দুষ্কৃতীদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছেন। এর পাশাপাশি আবার হাওড়া পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে মাত্রাছাড়া ভাবে। তৈরি হয়েছে অসাধু প্রোমোটারদের চক্র, যাঁদের দাপটে পিছিয়ে পড়ছেন আইন মেনে চলা প্রোমোটারেরা। বাড়ি বা জমির মালিকদের মধ্যেও অনেকে বেশি মুনাফার লোভে অসাধু প্রোমোটারদের দিয়ে কাজ করাতে চান।

পুরসভা সূত্রের খবর, এই চক্রের মধ্যে কিছু অসাধু প্রোমোটার যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন পুরসভার বিল্ডিং দফতরের দু’-এক জন আধিকারিক, কয়েক জন পুরকর্মী এবং বিভিন্ন থানার পুলিশকর্মীদের একাংশ। যাঁদের প্রত্যক্ষ মদতে তিনতলা বাড়ির অনুমোদন নিয়ে বিপজ্জনক ভাবে আট বা ন’তলা বহুতল তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ছাড়া হচ্ছে না যথেষ্ট জমিও। পুর আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই নির্মাণের জন্য যত্রতত্র বোজানো হচ্ছে পুকুর। অগ্নিসুরক্ষা বিধির পরোয়া না করে চার ফুট গলির মধ্যেও তৈরি হচ্ছে
উঁচু বহুতল।

হাওড়া পুরসভা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২১-এর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত (শুধু সদর দফতরের হিসাবে, সাতটি বরো অফিস বাদে) মোট ৩২০৯টি বাড়িকে আংশিক বা পুরোপুরি বেআইনি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে বহু বাড়ির ক্ষেত্রেই কাজ বন্ধের নোটিস জারি করা হয়েছে। পুরসভার ওই হিসাবই বলছে, প্রতি বছর গড়ে পাঁচশোর মতো ফ্ল্যাট বা বহুতল গড়ে উঠেছে হাওড়ায়। ছোট বাড়ির অনুমোদন নেওয়ার পরে বিধি উড়িয়ে অবাধে তৈরি করা হয়েছে আট-দশতলার অসংখ্য বহুতল। অথচ, ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ির ক্ষেত্রে। কারণ, ৬৬টি ওয়ার্ডের জন্য হাওড়া পুরসভার বাড়ি ভাঙার দল রয়েছে মাত্র একটি!

পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, সব থেকে বেশি বহুতল তৈরি হয়েছে ২০১৬-’১৭ সালে। সে সময়ে ৬২৫টি বেআইনি বাড়ি চিহ্নিত করেছিল পুরসভা। ২০১৫-’১৬ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৫৪৬, ২০১৭-’১৮ সালে ৪৯৮, ২০১৮-’১৯ সালে ৬২২, ২০১৯-’২০ সালে ৩৭৩, ২০২০-’২১ সালে ৩৪১ এবং ২০২১-’২২ সালে এখনও পর্যন্ত ২০১টি বাড়িকে আংশিক বা পুরোপুরি বেআইনি তকমা দিয়েই দায় সেরেছে পুরসভা। হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বললেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার
বিল্ডিং রুলস ও আমাদের বিল্ডিং রুলস একই আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। তিনতলা বাড়ির নকশা অনুমোদনের ফি দিয়েই গড়া হচ্ছে দশতলা বহুতল। যার ফলে পুরসভা হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব।’’

পুর আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, জমিতে ছাড়-সহ নানা ক্ষেত্রেই নিয়ম না মানার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে হাওড়া পুরসভার বিল্ডিং দফতরের আয় তলানিতে এসে ঠেকেছে। কর্মীদের বেতন দিতে গিয়ে বা উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুরকর্তাদের। কিন্তু এই ধারা পরিবর্তনের কোনও লক্ষণ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE