উদ্ধার হওয়া পুরনো নোট নিয়ে আয়কর অফিসাররা। ছবি: সুমন বল্লভ।
পরিবারের লোকজনকে নিয়ে এক ব্যবসায়ী ব্যাঙ্কে যাচ্ছিলেন। ব্রেবোর্ন রোডে ব্যাঙ্কের সামনে গাড়ি থামতেই ঘিরে ধরলেন কিছু লোক। গাড়িতে চালক ছাড়া বাকি যে-চার জন ছিলেন, নামিয়ে আনা হল তাঁদের সকলকেই। সেই সঙ্গে নামানো হল পাঁচ-পাঁচটি ব্যাগ। গাড়িতে চাপিয়ে আগন্তুকেরা নিয়ে গেলেন ব্যবসায়ী এবং তাঁর সঙ্গীদের। সঙ্গে গেল পাঁচটি ব্যাগও।
কোনও ডাকাতি বা রাহাজানির ঘটনা নয়। ওই ব্যবসায়ীর জন্য ব্যাঙ্কের সামনে ওত পেতেছিলেন আয়কর অফিসারেরা। শুধু ফাঁদ পাতা নয়, ব্যবসায়ীর গাড়ির পিছনে পিছনে ধাওয়া করছিল আয়করের একটি গাড়ি। যদি ব্যাঙ্কে না-গিয়ে ব্যবসায়ী অন্য কোথাও চলে যান, সেই জন্যই এই সাবধানতা। আয়কর দফতর জানাল, গাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা পাঁচটি ব্যাগে ওই ব্যবসায়ী তিন কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার বাতিল নোট নিয়ে যাচ্ছিলেন। আগে থেকে খবর পেয়ে ব্যবসায়ীকে নজরে রেখেছিলেন আয়কর দফতরের অফিসারেরা।
আয়কর অফিসারদের দাবি, শুক্রবার দুপুরে ব্রেবোর্ন রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে পাঁচটি ব্যাগ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া এই টাকাই এ বারের নোট-পর্বে এখনও পর্যন্ত কলকাতায় পাওয়া সব চেয়ে বড় অঙ্কের কালো ধন। ওই ব্যবসায়ী ওই হিসেব-বহির্ভূত আয়ের পুরো টাকাটাই প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় দিয়ে দিয়েছেন। ওই যোজনার শর্ত অনুযায়ী তিন কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার ৫০ শতাংশ চলে যাবে সরকারের ঘরে। যা ব্যয় হবে গরিব-কল্যাণে। ২৫ শতাংশ টাকা জমা পড়বে ব্যাঙ্কে। সেই টাকা চার বছরের আগে তুলতে পারবেন না ওই ব্যবসায়ী। ওই টাকা ব্যাঙ্কে রাখার জন্য তিনি কোনও
সুদও পাবেন না। বাকি ২৫ শতাংশ টাকা অবশ্য এখনই তুলে নিতে পারবেন তিনি।
আয়কর দফতর সূত্রের খবর, ওই ব্যবসায়ী এলগিন রোডের বাসিন্দা, করেন কাপড়ের ব্যবসা। তাঁর কাছে যে হিসেব-বহির্ভূত টাকা রয়েছে, সেই খবর কয়েক দিন আগেই পেয়েছিল আয়কর দফতর। তাই তাঁর উপরে নজর রাখা হচ্ছিল। এ দিন সকাল থেকে তাঁর বাড়ির কাছে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন আয়কর অফিসারেরা। বেলা ১টা নাগাদ তিনি সপরিবার গাড়ি নিয়ে বেরোন। খবর আসে, ব্রেবোর্ন রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর গাড়ি ছাড়তেই পিছনে ধাওয়া করেন অফিসারেরা। তত ক্ষণে ব্যাঙ্কের সামনে পৌঁছে যায় আয়করের অন্য একটি দলও।
আয়কর দফতরের হিসেব, ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাঁচশো আর হাজার টাকার পুরনো নোট বাতিল করার পরে এই রাজ্য থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৪ কোটি টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুরনো নোট ছাড়াও তার মধ্যে রয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকার নতুন নোট। ৩৫ কোটি টাকার হিসেব-বহির্ভূত আয়ের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy