Advertisement
E-Paper

অক্ষয় তৃতীয়া আজও সৌভাগ্যের প্রতীক

বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি অক্ষয় তৃতীয়া নামে পরিচিত। হিন্দু ও জৈন ধর্মের মানুষের কাছে দিনটি নানা কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অক্ষয় মানে যার ক্ষয় নেই।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৪৮

বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি অক্ষয় তৃতীয়া নামে পরিচিত। হিন্দু ও জৈন ধর্মের মানুষের কাছে দিনটি নানা কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অক্ষয় মানে যার ক্ষয় নেই। হিন্দু ধর্মের প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে পবিত্র এই তিথিতে কোনও শুভ কাজ আরম্ভ বা সম্পন্ন করলে তা অনন্তকাল পর্যন্ত অক্ষয় হয়ে থাকে।

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে এ দিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। ঠিক পয়লা বৈশাখের মতোই ব্যবসায়ীরা এই দিনটিতে হালখাতা উপলক্ষে লক্ষ্মী ও গণেশের পুজো করেন। এ ছাড়াও শাস্ত্রে এই দিনটিতে গৃহপ্রবেশ, ভূমিপুজোর বিধান রয়েছে।

বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ দিনটির বিশেষ গুরুত্ব বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জম্মতিথি হিসেবে। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে এই দিনটিতে গণেশ ব্যাসদেবের মুখ নিসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেছিলেন। এ ছাড়াও প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এ দিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গাকে মর্তে নিয়ে এসেছিলেন।

শ্রী ক্ষেত্র পুরীতে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে প্রতিবছর জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার নতুন রথ তৈরির সূচনা হয়। তেমনই কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীতে প্রবল শীতের জন্য ছ’মাস বন্ধ থাকার পরে এই দিনে যখন মন্দিরের দরজা খোলা হয় তখন দেখা যায় ছ’মাস আগে জ্বালিয়ে আসা অক্ষয়দীপ তখনও জ্বলছে।

বর্তমানে এই দিনটিতে অনেকেই সৌভাগ্যের প্রতীকী হিসেবে সোনা, রুপোর অলঙ্কার এবং মূল্যবান রত্ন কেনেন। কলকাতার বউবাজারের পাশাপাশি গরানহাটায় এই দিনটিতে চোখে পড়ে বিশেষ চমক। পাইকারি রুপো কেনাবেচার অন্যতম ঠিকানা গরানহাটা। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ব্যবসায়ী আসেন অসম, ওড়িশা এবং বিহার থেকেও। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে বদলে যায় পাড়ার দৈনন্দিন ছবিটা। আলোর রোশনাই এবং অসংখ্য মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা থাকে না।

এ কথা ঠিক দেশ ভাগের পরে কমেছে অক্ষয় তৃতীয়ার জৌলুস। এখন অনেক দোকানে অক্ষয় তৃতীয়ায় নয়, বরং পয়লা বৈশাখেই ধুমধাম করে সারা হয় হালখাতা।

কলকাতার বেশ কিছু বনেদি পরিবারে এই দিনটিতে দেখা যায় ব্যতিক্রমী আচার অনুষ্ঠান। গৃহদেবতার বিশেষ পুজোর পাশাপাশি অতীতে এই দিনে সদ্‌ ব্রাহ্মণকে সোনা, রুপোর মুদ্রা, দক্ষিণা ছাড়াও পিতল, কাঁসা তামার বাসন এবং বস্ত্র দান করার রীতি ছিল।

আরও পড়ুন: অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেনার সময় মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো

মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মার্বেল প্যালেসে এ দিন এস্টেটের হিসেবের খাতার শুভ সূচনা হয়। এস্টেটের অন্তর্গত নতুন বাজার ও পোস্তা বাজারের হিসেবের খাতার পুজো করা হয় ঠাকুর দালানে দেবী লক্ষ্মীর ঘরের সামনে। দুই বাজারের হিসাব রক্ষকরা এ দিন লাল শালুমোড়া খাতা ঠাকুর দালানে নিয়ে এলে তাতে স্বস্তিক এঁকে বিশেষ পুজো করা হয়। অতীতের প্রথা মেনে আজও তুলোট কাগজে সে দিন বাজারের আয় লেখা হয়। এ ছাড়াও হয় বিশেষ স্তোত্রপাঠ, ফল ভোগ, লাড়ুভোগ (দরবেশ)। এর পরে বাড়ির পুরোহিত পরিবারের সদস্যদের বছরের উল্লেখযোগ্য পুজো-পার্বণের আভাস দেন। তেমনই চোরবাগান শীলবাড়িতে এ দিনের বউরা নতুন পাটভাঙা শাড়ি পরে গৃহদেবতা নারায়ণ শিলা দর্শন করতে যান। এ দিন পুজার্চনার পাশাপাশি হয় বিশেষ ভোগ। অতীতে অবশ্য পুরোহিত মশাই অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য পাঠ করে শোনাতেন।

Akshaya Tritiya Akshaya Tritiya 2017 Akshaya Tritiya Rituals
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy