করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান হল সংক্ষিপ্ত। স্বল্প সময়ের সেই অনুষ্ঠানে বেশি গুরুত্ব পেল কোভিড যোদ্ধাদের সংবর্ধনা। রেড রোডে শনিবার সকালে ওই অনুষ্ঠানের পরেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি চলে গেলেন রাজভবনে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ডাকা বিকালের চা-চক্রে তিনি থাকবেন না বলে আচমকাই এই সাক্ষাৎ।
পরে রাজভবনের চা-চক্রও হল ৩৫ জন অতিথির উপস্থিতিতে। রাজ্যপালের প্রেস সচিবের বক্তব্য, ‘‘সমস্ত প্রোটোকল মেনেই আয়োজন হয়েছে। অনুষ্ঠানের আয়োজন ঘিরে আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ আগেও ছিল না, এ দিনও তেমন কিছু ঘটেনি।’’
চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মচারী, পুলিশ-সহ অন্য কর্মী-আধিকারিকদের অনেকেই একেবারে সামনে থেকে কোভিড মোকাবিলা করতে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরে তাঁরা ফের কোভিড-লড়াইয়ে যুক্ত হন। রেড রোডে এ দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রের এমন ২৫ জন কোভিড-যোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে রাজ্য সরকার। আবার রাজভবনেও কয়েক জন করোনা-যোদ্ধাকে আপ্যায়ন করেছিলেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: বারো বছর ধরে পতাকা কুড়িয়ে বাক্সে রাখছেন মনু
রেড রোডে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান সেরে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা গিয়েছিলেন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় রাজভবনে ছিলেন তিনি। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিকালের অনুষ্ঠানে আসতে পারব না, তাই আমরা আগে ঘুরে গেলাম। আড্ডা দিয়ে গেলাম। রাজ্যপালকে স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন জানিয়েছি।’’
আমন্ত্রিত হয়ে রাজ্যপালের চা-চক্রে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তাদের রাজভবনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘আমরা এসেছিলাম সৌজন্যের কারণে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যেতেই পারেন। কিন্তু মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি-রা প্রমাণ করে দিলেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পিছনে ঘোরার বাহিনী! স্বাধীন অফিসার নন। তাঁদের আমন্ত্রণ ছিল বিকালে। কিন্তু তাঁরা দেখালেন, মুখ্যমন্ত্রী বাঁ দিক বা ডান দিক যে দিকে যাবেন, তাঁরাও তা-ই করবেন!’’ রাজভবনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ থাকলেও সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র, তৃণমূলের সুব্রত বক্সী বা বিজেপির দিলীপ ঘোষকে অবশ্য দেখা যায়নি।
তার আগে রেড রোডে এ দিন নিয়ন্ত্রণ বিধি মেনে জমায়েত ছিল নামমাত্র। কোভিড-যোদ্ধারা একে একে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছতেই তাঁদের কুর্ণিশ জানায় পুলিশ ব্যান্ড। ওড়ানো হয় পায়রা। কোভিড-যোদ্ধাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করে একটি গানও বাজানো হয়। শেষে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কোভিড-যোদ্ধাদের হাতে সরকারি মানপত্র-উপহার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে তিনটি ট্যাবলো ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথমটি কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বিষয় নিয়ে। বাকি দু’টি কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের ট্যাবলো। সেখানে সামনের সারিতে কোভিড-লড়াকুদের মাস্ক বিতরণ করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। দু’টি ক্ষেত্রেই যুক্ত ছিল রাজ্যের মাঝারি, ক্ষুদ্র শিল্প দফতর।