Advertisement
E-Paper

চর্মশিল্পে বিশ্বে চতুর্থ, কর্মসংস্থানের সুযোগ

চামড়া রফতানিতে ভারত বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ আসে এই শিল্প থেকে। শুধু বাইরেই নয়, দেশেও চর্মজাত দ্রব্যের ব্যবহার বিপুল। ব্যাগ, জুতো, বেল্ট, পার্স, জ্যাকেট—নানা ক্ষেত্রে চামড়ার ব্যবহার নানা ভাবে। কলকাতা ছাড়াও কানপুর, আগ্রা, চেন্নাই ও মুম্বই চর্মশিল্পের কেন্দ্র বহু দিন ধরে। কাজের সুযোগ বাড়ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০০

চামড়া রফতানিতে ভারত বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ আসে এই শিল্প থেকে। শুধু বাইরেই নয়, দেশেও চর্মজাত দ্রব্যের ব্যবহার বিপুল। ব্যাগ, জুতো, বেল্ট, পার্স, জ্যাকেট—নানা ক্ষেত্রে চামড়ার ব্যবহার নানা ভাবে। কলকাতা ছাড়াও কানপুর, আগ্রা, চেন্নাই ও মুম্বই চর্মশিল্পের কেন্দ্র বহু দিন ধরে। কাজের সুযোগ বাড়ছে।

এমনিতে এই শিল্পে মোটামুটি তিন ধরনের কাজ রয়েছে— ডিজাইনিং, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং মার্কেটিং। ডিজাইনিং এর মধ্যে টেকনিক্যাল ডিজাইনার যেমন রয়েছে, তেমনই স্টাইলিস্ট ডিজাইনারও আছে। সোজা কথায় এই শিল্পে দু’টো দিক আছে—একটা টেকনিক্যাল আর একটা ডিজাইনিং।

চামড়ার জিনিসের ডিজাইন করার প্যাশন মনে থাকলে ব্যাচেলর অফ ডিজাইন কোর্স করতে পারেন লেদার ডিজাইনের উপর। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজির (নিফট) দিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই শাখায় এই কোর্স পড়ানো হয়। এই প্রতিষ্ঠান এর জন্য ভর্তি পরীক্ষা নেয়। আরও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লেদার ডিজাইনের উপরে কোর্স করায়। বৃত্তিমূলক শিক্ষার চেয়ে শৈল্পিক মনটাই এখানে বড় কথা।

কিন্তু ম্যানুফ্যাকচারিং-এর টেকনিক্যাল দিকটিতে প্রশিক্ষিত হতে চাইলে লেদার টেকনোলজির বি টেক কোর্স করতে হবে। এর জন্য অবশ্যই দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে হবে। বিশেষ করে রসায়নে ভাল জ্ঞান থাকা দরকার। কারণ এই কোর্সে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের রসায়ন ও পদ্ধতি সম্পর্কে শেখানো হয় তিনটে ভাগে—প্রাথমিক পর্ব, ট্যানিং, ক্রাস্টিং। প্রাথমিক পর্বে কাঁচা চামড়াকে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল দিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করে প্রসেসিং-এ পাঠানো হয়। ট্যানিং করা হয় কাঁচা চামড়ার প্রোটিন লেভেলের সঙ্গে মিলিয়ে। ক্রাস্টিং মানে ফাইন করা— চামড়াকে থিনিং, রি-থিনিং, লুব্রিকেটিং ইত্যাদি রয়েছে এর মধ্যে।

বি টেক পড়ানো হয় যে প্রতিষ্ঠানগুলিতে তার মধ্যে অন্যতম কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লেদার টেকনোলজি। দীর্ঘ দিনের এই প্রতিষ্ঠানটির আগে নাম ছিল ‘ক্যালকাটা রিসার্চ ট্যানারি’। সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালে এর প্রতিষ্ঠা ট্যাংরায়। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আসে প্রতিষ্ঠানটি এবং বিএসসি (টেক) কোর্স শুরু হয়। এখন অবশ্য ই এম বাইপাসের উপরে উঠে এসেছে এই প্রতিষ্ঠান। ডব্লুবিইউটি-র অাওতায় এখন লেদার টেকনোলজি-তে চার বছরের বিটেক কোর্স পড়ানো হয়। দু’বছরের মাস্টার কোর্সও চালু হয়েছে বছর দশেক। ব্যাচেলর কোর্সে ৩০টি আসন। ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। এছাড়াও ‘শু অ্যান্ড লেদার গুডস মেকিং’এর উপরে দু’বছরের একটা অ্যাডভান্সড সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয়, যেটা মাধ্যমিক বা সমতুল্য পাশ হলেই হবে। এর ভর্তি পরীক্ষা নেয় কলেজ নিজে।

সর্বভারতীয় স্তরে লেদার টেকনোলজি পড়ার জন্য চেন্নাইয়ের সেন্ট্রাল লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট বেশ নামকরা। এই প্রতিষ্ঠানটিরও বয়স অনেক। ১৯৪৮ সালে এর প্রতিষ্ঠা চর্মশিল্পের সঙ্গে টেকনোলজি ও রিসার্চের কাজের যোগসূত্র তৈরি করার কথা মাথায় রেখে। এখানে বি টেক কোর্স করানো হয় অণ্ণা ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায়। ১০+২ ক্লাসে অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান ও রসায়ন থাকা আবশ্যিক। ভর্তি পরীক্ষা নেয় ইউনিভার্সিটি। চার বছরের কোর্স ৮টা সেমিস্টারে ভাগ করা। বি টেক করার পরে এখানে এম টেক, পিএইচডি-ও করা যায়। এছাড়াও লেদার প্রসেসিং-এ ডিপ্লোমা ও পিজি ডিপ্লোমা করা যায়। এমনিতে ডিপ্লোমাতে দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকলেই হয়। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করতে চাইলে বিজ্ঞানে স্নাতক স্তরে ৫০ শতাংশের উপরে নম্বর থাকতে হবে (রসায়ন আবশ্যিক)। পাশাপাশি লেদার গুডস, লেদার গারমেন্টস ও ফুটওয়্যারে ডিপ্লোমা করা যায়।

দেশের অন্যত্রও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে জুতো তৈরিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেমন আগ্রার সেন্ট্রাল ফুটওয়্যার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, দিল্লির নয়ডার ফুটওয়্যার ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। মুম্বইয়ের গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক কলেজে লেদার গুডস ও ফুটওয়্যার টেকনোলজির উপরে ডিপ্লোমা কোর্স করা যায়। কেএআর পলিটেকনিক কলেজের বেঙ্গালুরু ও ভেলোর শাখায় ডিপ্লোমা করা যায়।

লেদার টেকনোলজিতে বি টেক করার পরে এম টেক করতে পারেন। এম টেক করা থাকলে শিক্ষকতা করা যায়। বি টেক, এম টেক করে কাজ পাওয়া যায় চর্ম প্রস্তুতকারক কোম্পানি, এক্সপোর্ট হাউসগুলিতে কোয়ালিটি কন্ট্রোল চেকার, লেদার টেকনোলজিস্ট, সুপারভাইজর, প্রোডাকশন ম্যানেজার ইত্যাদি পদে। নিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে—অর্ক লেদারস লিমিটেড, বাটারফ্লাই লেদারস, কেএআর গ্রুপ, লেদার ক্র্যাফটস (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেড, এম বিলাল হুসেন অ্যান্ড কো, মারসন লেদার হাউস, প্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, জৈন ট্যানার্স, মির্জা ট্যানার্স, বাটা ইন্ডিয়া লিমিটেড, ভারতীয় ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, এ ভি থমাস লেদার অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রোডাক্টস লিমিটেড, রাবিয়া লেদার ইন্ডাস্ট্রিস প্রাইভেট লিমিটেড, কে এইচ লেদার ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড, ইন্ডিয়ান লেদার ইন্ডাস্ট্রি ফাউন্ডেশন, কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্ট, ইন্ডিয়ান শু ফেডারেশন, ইন্ডিয়ান ফিনিশড লেদার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, অল ইন্ডিয়া স্কিন হাইড ট্যানার্স মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি।

Leather industry Employment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy