Advertisement
E-Paper

শিশুদের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল মাত্রা ছাড়াচ্ছে, বাংলার গড় দেশে সর্বোচ্চ! ঝুঁকি বাড়তে পারে পুজোর ভোজনে!

ভারতের পাঁচ থেকে ন’বছর বয়সি শিশুদের এক তৃতীয়াংশের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কোলেস্টেরলও উদ্বেগের পর্যায়ে। আর দেশের বিচারে এই হিসাবে সবচেয়ে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০২
Indian kids aged 5 to 9 years have high triglycerides with West Bengal at top

পুজোয় শিশুদের খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। —ফাইল চিত্র।

ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়়ছে শিশুদের শরীরেও। কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের পাঁচ থেকে ন’বছর বয়সি শিশুদের এক তৃতীয়াংশের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কোলেস্টেরলও উদ্বেগের পর্যায়ে। আর দেশের বিচারে এই হিসাবে সবচেয়ে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের শিশুদের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রার গড় সারা দেশের গড়ের দ্বিগুণ! পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। চলছে দেদার ঘোরাঘুরি, খাওয়াদাওয়া। বিশেষজ্ঞেরা তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। পুজোয় শিশুদের খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। এ বিষয়ে কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্‌থের অধিকর্তা চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘শিশুদের খাবারের দিক নজর রাখতে হবে। কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। ফাইবারের আধিক্য রয়েছে এমন খাবার খাওয়ানো অভ্যাস করাতে হবে।’’

শিশুর শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের ক্ষেত্রে এগিয়ে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। বাংলার নাম তালিকায় সবচেয়ে উপরে রয়েছে। কোলেস্টেরল এবং লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (এলডিএল)-এ আবার দেশের মধ্যে শীর্ষে কেরল। সেখানকার পাঁচ থেকে ন’বছর বয়সি ১৬ শতাংশ শিশুর শরীরে এলডিএল-এর মাত্রা বেশি রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এই পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের কমপ্রিহেনসিভ ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভে (২০১৬-১৮)-তে দেশের শিশুদের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলে হৃদ্‌যন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যার আশঙ্কা বেড়ে যায়। চিকিৎসক ঘোষ বলেন, ‘‘উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের ফলে ওই শিশুরা কৈশোরে পা দেওয়ার পর তাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবিটিস ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’

পরিসংখ্যান বলছে, ট্রাইগ্লিসারাইড-সমস্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিশুদের মধ্যে। শতাংশের বিচারে বাংলার পাঁচ থেকে ন’বছর বয়সি ৬৭ শতাংশ শিশু এই সমস্যায় ভুগছে। তালিকায় এর পরে রয়েছে সিকিম (৬৪.৬ শতাংশ), অসম (৫৭ শতাংশ), নাগাল্যান্ড (৫৫.৫ শতাংশ) এবং মণিপুর (৫৪.৭ শতাংশ)। এই তালিকায় আবার কেরলের স্থান সবচেয়ে নীচে (১৬.৬ শতাংশ)। ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণে সারা দেশের গড় ৩৪ শতাংশ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের গড় দেশের প্রায় দ্বিগুণ। এই পরিসংখ্যানকে উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের শিশুদের মধ্যে ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধির পিছনে জিনের ভূমিকাও থাকতে পারে।’’

কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের সমস্যা কিন্তু ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে তুলনামূলক অনেক কম। সমীক্ষা বলছে, এই বয়সেই ট্রাইগ্লিসারাইড রয়েছে ১৬ শতাংশ কিশোরের শরীরে। কোলেস্টেরলের (এলডিএল) সমস্যায় ভুগছে ৪ শতাংশ বা তার কম কিশোর। এলডিএল-এর নিরিখে কিশোর প্রজন্মে শীর্ষে কেরল এবং গোয়া।

কিশোর প্রজন্মের ক্ষেত্রেও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার ৪২.৫ শতাংশ কিশোরের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে সিকিম (৩৯.৪ শতাংশ) এবং মণিপুর (৩৮ শতাংশ)। এই তালিকায় সবচেয়ে নীচে রয়েছে মহারাষ্ট্র (৬.৪ শতাংশ)। কৈশোরে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে দিল্লির বাসিন্দারা। সেখানকার ১০ শতাংশ কিশোরের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তালিকায় এর পর উত্তরপ্রদেশ (৮.৬ শতাংশ) এবং মণিপুর (৮.৩ শতাংশ)।

১০ বছর বা তার কমবয়সি শিশুদের পক্ষে উচ্চ মাত্রায় এলডিএল অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে ধমনীতে মেদ জমে এবং রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে হৃদ্‌যন্ত্রের নানারকম রোগ হতে পারে। স্ট্রোকের সম্ভাবনা এতে অনেক বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, আগেভাগে এই ধরনের রোগ চিহ্নিত করে তার নিরাময় প্রয়োজন। পাল্টে ফেলা দরকার খাদ্যাভ্যাস। দেরি হয়ে গেলে বিপদ বাড়তে পারে।

ওবেসিটি বা জিনগত কারণেও শিশুদের শরীরে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড বা কোলেস্টেরল থাকতে পারে। তবে এর নেপথ্যে মূলত রয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া। অতিরিক্ত ফ্যাট এবং মিষ্টিযুক্ত খাবার খেলে ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শৈশব থেকেই তা নিয়ে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন।

কোন কোন খাবারে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে

পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, মিষ্টিযুক্ত, ফ্যাটযুক্ত খাবার ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়তে পারে। যে কোনও ঠান্ডা পানীয়, অধিকাংশ ফাস্টফুড, ল়জেন্স, কিছু বিস্কুট, পাস্তা, ভাজাভুজি, চর্বিযুক্ত মাংস এবং মাখনে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

কোন কোন খাবারে কোলেস্টেরল বাড়ে

চর্বিযুক্ত মাংস (রেড মিট), প্রক্রিয়াজাত মাংস, ফ্যাটযুক্ত দুধের বিভিন্ন উপাদান, ভাজা খাবার এবং কেক-পেস্ট্রি-কুকিজ়ের মতো বিভিন্ন খাবার এলডিএল কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

Triglyceride Cholesterol Control High Cholesterol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy