পাতলা জলের মতো ডাল, পোকায় ভরা সয়াবিনের তরকারি, পাতে ভাত চাইলে ফাউ মুখঝামটা।
অনেক দিন ধরে এই পরিস্থিতি চলছে স্কুলে। কারণে-অকারণে চড়-থাপ্পড় পড়ে খুদে ছেলেমেয়েদের গালে-পিঠে।
এই সব অভিযোগেই বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিবন্ধী স্কুলের পড়ুয়ারা হস্টেল সুপারের উপরে চড়াও হয়। তিনি যে ঘরে বসেন, সেখানকার টিভি, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল তছনছ করা হয়। সুপারের বাইক আধলা ইট দিয়ে থেঁতলে দেয় উত্তেজিত ছেলেমেয়েরা। তাদের ছোড়া ইট-পাথরে মাথা ফেটেছে সুপারের। বৃহস্পতিবার স্কুলের প্রধান শিক্ষককেও ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় ছেলেমেয়ের দল।
ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের রঘুনাথপুরের প্রতিবন্ধী স্কুলের। হস্টেল সুপার মোসারেফ হোসেন বসিরহাট জেলা হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি। তাঁর অবশ্য দাবি, খাবারের মান বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আসলে ছুতো। স্কুলে-হস্টেলে মোবাইল ব্যবহারে মানা আছে। তা শোনে না অনেক ছেলেমেয়ে। তা ছাড়া, ছেলেমেয়েদের মেলামেশার উপরেও নজরদারি চলে। যা পছন্দ নয় কিছু পড়ুয়ার। এ সব নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে চাওয়ায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে স্কুলের কিছু পড়ুয়া।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সন্ধ্যা থেকে। খাবারের মান নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ওই দিন দুপুর থেকে খাবার মুখে তোলেনি পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ। সন্ধের পরে সুপারের ঘরে চড়াও হয় তারা।
হস্টেলের খাবারের মান কিংবা শিক্ষকদের আচরণ নিয়ে আগেও অভিযোগ উঠেছে স্কুলটিতে। হস্তক্ষেপ করতে হয় মহকুমাশাসককে। তিনি সাপ্তাহিক খাবারের তালিকা তৈরি করে দিয়েছিলেন মাস কয়েক আগে। কিন্তু পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাতেও হাল ফেরেনি।
তাদের বক্তব্য, ‘‘শুধু খাবারের মান নয়, আমাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়, সেটাও খতিয়ে দেখুক পুলিশ। পড়ুয়াদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: মাঝ রাতে হোটেলে ভয়াবহ আগুনে পালাতে না পেরে মারা গেলেন দু’জন
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক আগে বসিরহাটের সূর্যকান্ত পার্কের পাশে প্রতিবন্ধীদের জন্য অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলটি তৈরি হয়। পরে তা ‘বসিরহাট রিলিফ হ্যান্ডিক্যাপড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে রঘুনাথপুরে স্থানান্তরিত হয়। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলটিতে ১৯ জন শিক্ষক, ১৬৫ জন পড়ুয়া। প্রায় পঁয়তাল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী থাকে হস্টেলে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, হস্টেলের ছাত্রছাত্রীরা আগেও একবার সুপারকে মারধর করেছিল। আসলে মোবাইলের সিম আনা নিয়ে বিবাদ। স্কুলে এবং হস্টেলে মোবাইল রাখা নিষেধ। ছাত্রছাত্রীরা তা শোনে না। এ নিয়ে প্রতিবাদ করাতেই হস্টেল সুপারকে মারধর করা হয়েছে।
এসডিও নীতেশ ঢালি বলেন, ‘‘কিছু অভিযোগ আগেও উঠেছিল। খাবারের তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়। তারপরেও সমস্যা মেটেনি বলে শুনছি। বিডিও ওই স্কুলে গিয়েছিলেন। দু’পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy