E-Paper

বিয়ে রুখেছেন, দেশরক্ষা মেয়ের

বিয়ে রোখা সে মেয়ে আজ জওয়ান। এক সময়ে যে হাত ধান রুইত, ইট বইত, গোয়াল পরিষ্কার করত— সে হাতেই এখন একে-৪৭।

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫ ১০:০০
মায়ের সঙ্গে চুমকি। দাঁড়িয়ে তাঁদের নির্মীয়মাণ বাড়ির সামনে।

মায়ের সঙ্গে চুমকি। দাঁড়িয়ে তাঁদের নির্মীয়মাণ বাড়ির সামনে। DAYAL SENGUPTA

রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। পরিবারের বিরুদ্ধে দু-দু’বার। এক বার অষ্টম শ্রেণিতে, এক বার উচ্চ মাধ্যমিকের আগে। দু’বারই ধনুকভাঙা পণ ছিল— ‘‘আগে লেখাপড়া। তার পরে বিয়ে।’’ সে কারণেই বিয়ের দিন ঠিক করতে পাত্রপক্ষ যে দিন বাড়িতে এসেছিল, পালিয়েছিলেন বাড়ি থেকে!

বিয়ে রোখা সে মেয়ে আজ জওয়ান। এক সময়ে যে হাত ধান রুইত, ইট বইত, গোয়াল পরিষ্কার করত— সে হাতেই এখন একে-৪৭। আজ কাশ্মীরে সীমান্ত পাহারার কাজে যাচ্ছেন চুমকি বাউড়ি। বীরভূমের সিউড়ি ১ ব্লকের পাথরচাপুড়ি উপরপাড়ার বছর উনতিরিশের চুমকি আসাম রাইফেলসের জওয়ান। সম্প্রতি কর্মস্থল থেকে ছুটিতে ফিরেছেন বাড়িতে। তাঁর মতে, ‘‘কেউ যদি মনে-প্রাণে কিছু চায়, পরিশ্রম করে, তা হলে স্বপ্নকে ছোঁয়া যায়।’’

স্বপ্ন ছোঁয়ার পথ মসৃণ ছিল না। বাবা মধু বাউড়ি দিনমজুর। মা মীরা, বাড়ির কাজকর্ম সামলান। তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ টানা সম্ভব ছিল না মধুর পক্ষে। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় চুমকি যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, তখনই বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। চুমকি মানেননি। কারণ, ততদিনে পাথরচাপুড়ি স্কুলের খেলাধুলোয় ‘তুখোড়’ মেয়ে পুলিশ বা সেনায় চাকরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

২০১২ সালে গ্রাম থেকে দূরে, মাধাইপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যালয়ে একাদশে ভর্তি হন চুমকি। পড়ার খরচ তুলতে ধান রোয়া, কাটা, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ, গোয়াল পরিষ্কার— যা জুটেছে, করেছেন। পাশে পেয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সহ-শিক্ষকদের। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার খরচ, বই কেনার অর্থ আর মানসিক সাহস দিয়েছেন তাঁরা।

২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের আগে ফের বিয়ের প্রস্তাব আসে। চুমকির কথায়, ‘‘পরীক্ষার দিন কুড়ি আগে পাত্রপক্ষের বিয়ের তারিখ ঠিক করতে এসেছিল। সে দিন সিউড়িতে পিসির বাড়ি পালাই। সেখান থেকেই পরীক্ষা দিই। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরেও বাবা কথা বলা বন্ধ করেছিলেন। দমে যাইনি।’’

দমে না যাওয়া সে মেয়ে এর পরে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হন। সঙ্গে পুলিশ বা সেনায় যোগ দেওয়ার পরীক্ষাও দিচ্ছিলেন। ২০২১ সালে আসাম রাইফেলসে চাকরি পান। চুমকি বললেন, ‘‘২০১৮-র শেষ দিকে আসাম রাইফেলসের পরীক্ষা ছিল। কোভিড না হলে ’২০ সালেই নিয়োগপত্র পেতাম।’’ প্রশিক্ষণের পরে, তিন বছর নাগাল্যান্ডে ছিলেন। সদ্য জম্মু-কাশ্মীরে পোস্টিং পেয়েছেন।

নাগাল্যান্ডের পরে জম্মু-কাশ্মীর। ভয় করেনি? চুমকি বলছেন, ‘‘একেবারেই না। প্রশিক্ষণ পেয়েছি। আর হাতে একে-৪৭, ভয় কিসের!’’ জানান, বাবা-মায়ের জন্য বাড়ি বানাচ্ছেন। এখন গর্বিত বাবাও। মধুর কথায়, ‘‘অর্থকষ্টের জন্যই মেয়েকে বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ ও যে জায়গায় পৌঁছেছে, সে জন্য বাবা হিসেবে খুব গর্ব হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy