একে কর্মী নিয়োগ থমকে গিয়েছে। সঙ্গে দোসর, দফতরের কোষাগারে টানাটানি।
জোড়া প্রতিকূলতার জাঁতাকলে, জঙ্গল থেকে বার বার লোকালয়ে হানা দেওয়া হস্তিকুল সামাল দিতে যেমন হিমসিম অবস্থা বন দফতরের, তেমনই লোকবলের অভাবে বিপদে পড়া বন্যপ্রাণী উদ্ধারের ব্যাপারেও তৎপর হতে পারছেন না বনকর্মীরা। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘গত চব্বিশ ঘণ্টায় বন দফতরের সেই অসহায় চেহারাটা সামনে এসে পড়েছে।’’
উত্তর থেকে দক্ষিণ—মঙ্গলবার দিনভর, কোথাও লোকবলের অভাবে নালায় আটকে পড়া হাতিকে উদ্ধারই করতে পারল না বন দফতর। কোথাও বা হুলাপার্টি জোগাড় করতে না পারায় লোকালয় থেকে জঙ্গলের ঠিকানায় ফেরত পাঠানো গেল না হাতিকে।
এ দিন দুপুরে বিন্নাগুড়ি কারবালা চা বাগানে নালায় আটকে পড়ে একটি বছর আটেকের হাতি। শ্রমিকেরা তার খোঁজ পেয়ে বন দফতরে খবর দেন। জনা কয়েক বনকর্মী এলেও পাঁকে আটকে যাওয়া হাতিটিকে টেনে তোলা তাঁদের সাধ্যের অতীত ছিল। তলব হয় জেপিসি মেশিনের। স্থানীয় একটি পশুপ্রেমী সংঠনের দাবি, জেপিসি মেশিনের ভাড়া নিয়ে দরদস্তুরের পরে সেটি যখন নিয়ে আসা হয় ততক্ষণে হাতিটি নেতিয়ে পড়েছে। জলপাইগুড়ির ডিএফও সুমিতা ঘটক অবশ্য দাবি করেছেন, হাতিটি হয়তো আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। তাই বনকর্মীদের চেষ্টা সত্ত্বেও সেটি মারা গিয়েছে।’’ বন দফতর একটি সূত্র অবশ্য বলছে, সম্ভবত দিন দুয়েক আগেই নালায় আটকে গিয়েছিল হাতিটি। কর্মীর অভাবে রেতির জঙ্গলে প্রহরাই উঠে গিয়েছে। ফলে কর্মীদের নজরেই পড়েনি হাতিটি। দু’দিন ধরে নালায় আটকে মারা গিয়েছে সে।
দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পটকা, মশাল জ্বালানোর তেল, লোকজন— সব মিলিয়ে বড়সড় হুলাপার্টি না হলে একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর জনঅয় খরচের বহরও বেশ বড়। স্থানীয় বন দফতরের সেই খরচ সামাল দেওয়ার টাকা কোথায়?’’
এ দিন সকাল থেকে তাই কখনও নবদ্বীপ শহর কখনও বা লাগোয়া গ্রামে দাপিয়েছে হাতিটি। বিকেলে হাতি-সামাল দিতে কলকাতা থেকে পাঠানো হয়েছে দফতরের টেকনিক্যাল অ্যসিস্ট্যান্ট সুব্রত পালচৌধুরীকে।
বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে হাতিটি আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট হয়ে ঢুকে পড়েছিল কাটোয়ায়। রবিবার দুপুরে সেটি মুকসিম পাড়া দিয়ে পূর্বস্থলীর দিকে চলে আসে। তার পর, বেলার দিকে ঢুকে পড়ে নবদ্বীপ শহরে। বন দফতরের শঙ্কা, নদী পেরিয়ে সে আবার মুর্শিদাবাদের পথ ধরে বাংলাদেশে পাড়ি না দেয়। যার পরিণতি মাস কয়েক আগেই দেখেছে সারা দেশ। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল সেই হাতিটি।
বাঁকুড়ার মেজিয়ার জঙ্গলে বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছে আরও একটি হাতি। সে দিকেও নজর দিতে পারছেন না বন দফতর। বন দফতরের এই নুন আনতে পান্ত ফুরানোর অবস্থা চলছে বছর চারেক ধরেই।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে পালাবদলের পরে ট্রেজারি-বিধি চালুর পরে, অস্থায়ী বনকর্মীদের দৈনিক ভাতা থেকে জঙ্গলে চারা লাগানো, গাড়ির তেলের খরচ, খাঁচা-জাল-হাতি খেদানোর পটকা কিনতেও ট্রেজারি ঘুরতে হত। খরচের পরে তার যথাযথ হিসেব দিলে তবেই বন দফতরের সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে সে টাকা ফিরিয়ে দিত ট্রেজারি। এই খরচ এত দিন এলওসি-র মাধ্যমে মেটানো হচ্ছিল। বরাদ্দ টাকা অর্থ দফতরের অনুমোদন মতো খরচ করার সেই এলওসি পদ্ধতির উপরেও এ বার খাঁড়া নেমে আসায় মাথায় হাত পড়েছে বনকর্তাদের। এ অবস্থায় হস্তি-সমস্যা মেটাতে ওড়িশার বারিপদা যাচ্ছেন চার শীর্ষ বনকর্তা। এ দিন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন খড়্গপুরের হিজলিতে বনকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। মন্ত্রী বলেন, “ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে আসা হাতি ওড়িশার দিকে যেতে বাধা পাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সঙ্গে সৌহার্দ্য গড়তে আলোচনার জন্য বনকর্তারা যাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy