রাজ্যের জেলে বসে জঙ্গি নেটওয়ার্ক চালানোর প্রমাণ এক বছর আগেই পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। এ বার দিল্লি বিস্ফোরণের পর তাই আগেভাগে সতর্ক হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন জেলে বন্দি থাকা জঙ্গিদের সম্পর্কে খোঁজ করতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলে গিয়ে জঙ্গিদের জেরাও করবেন গোয়েন্দারা। একইসঙ্গে ওই জঙ্গিদের উপরে নজরদারি বাড়াতেও বলা হয়েছে কারা দফতরকে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতিটি সংশোধনাগারে সপ্তাহে একবার করে তল্লাশি করা হয়। তাতে অনেক সময় বন্দিদের কুঠুরি থেকে মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোন ঢোকার পথ যাতে নিশ্ছিদ্র করা হয় তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
গত বছরের শেষে অসম পুলিশেরহাতে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’ বা এবিটি (আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখা)-রচাঁই মহম্মদ শাদ রাডি ওরফে শাবশেখ-সহ তিন জন গ্রেফতার হয়েছিল।তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করেরাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা জানতেপারেন, বহরমপুর সংশোধনাগারে বসে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি জেএমবি জঙ্গি তারিকুল ইসলাম ওরফে সুমন জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। তার হাত ধরেই এ রাজ্যে সংগঠনকে ফের সক্রিয় করতে চাইছে এবিটি। গোয়েন্দাদের দাবি, জেলে অন্য মামলায় বন্দি হয়ে আসা লোকজনকে ‘জিহাদি’ আদর্শে অনুপ্রাণিত করে সুমন। এবিটি চক্রের সন্ধানে নেমে তার প্রমাণও মিলেছে।
সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে দমদম জেলে মাদক মামলার বিচারাধীন বন্দি সাবির আহমেদ ওই সংশোধনাগারেই বন্দি লস্কর-ই-তৈবার সদস্য ইদ্রিশ ওরফে মুন্নাকে একটি চিরকুট দিতে গিয়ে ধরা পড়ে। সেই চিরকুটে সাঙ্কেতিক ভাষায় কিছু লেখা ছিল। চিরকুটে কী লেখা ছিল, তা উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ। গোয়েন্দাদের দাবি, এই ধরনের কাজকর্ম নিয়েই ফের মাথা ব্যথা তৈরি হয়েছে।
সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন জেলে প্রায় ৩০ জন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বন্দি আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানের বাসিন্দাও আছে। এ ছাড়াও, কলকাতায় আমেরিকান সেন্টার মামলাও খাদিম কর্তা অপহরণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আফতাব আনসারিও আছে।যদিও কারা সূত্রের দাবি, গত কয়েক বছরে আফতাবের আচরণে তেমন কিছু সন্দেহজনক ধরা পড়েনি। এ ছাড়া,খাগড়াগড় ও বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত বোমারু মিজান ওরফে কওসর, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ইজাজ, খাগড়াগড়ের আর এক সাজাপ্রাপ্ত জেএমবি ইউসুফ মৌলালা, জেএমবির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জামাইফারুক, আইএস জঙ্গি মুসা ও পাক নাগরিক শাহবাজ ইসমাইলও এ রাজ্যের জেলে বন্দি আছে।
এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘জেলে নজরদারি ঠিক মতো না-হলে গরাদের আড়ালে থেকে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি লাগাম পরানো যাবে না। তা ছাড়া, জেলে বসেও জিহাদি আদর্শ বিস্তারের ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কারা দফতরের সমন্বয় বৃদ্ধিও প্রয়োজন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)