Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
International Women's Day

আমার কোর্টে যেতে আর ভাল লাগে না

দিনটা ছিল ২০১২ সালের ২৬ মে। তখন আমি মাত্র ১৭। ভলিবলের স্বপ্নের সেখানেই ইতি। অ্যাসিডে বাঁ চোখটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ডান চোখেও কম দেখি।

ঋতু সাইনি, অ্যাসিড আক্রান্ত

ঋতু সাইনি, অ্যাসিড আক্রান্ত

ঋতু সাইনি
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

স্বপ্ন ছিল, ভলিবল খেলব। হরিয়ানার হয়ে রাজ্য স্তরে খেলতামও। সে দিন প্র্যাক্টিসে যাব বলেই বেরিয়েছিলাম বাড়ি থেকে। পথে হঠাৎ চলন্ত মোটরবাইক থেকে মুখে এসে পড়ল অ্যাসিড। দিনটা ছিল ২০১২ সালের ২৬ মে। তখন আমি মাত্র ১৭। ভলিবলের স্বপ্নের সেখানেই ইতি। অ্যাসিডে বাঁ চোখটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ডান চোখেও কম দেখি।

হরিয়ানার রোহতকের মেয়ে আমি। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সব চেয়ে ছোট। সে দিন যখন মুখে অ্যাসিড নিয়ে রাস্তায় আর্ত চিৎকার করছি, আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক জনও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। শুধু মজা দেখেছিল। ভাগ্যিস, সেখান দিয়ে তখন আমার দাদা যাচ্ছিল। না-হলে যে কী করে হাসপাতালে পৌঁছতাম...!

আমার এক তুতো ভাই আমাকে পছন্দ করত। এক বার বলেছিল, ‘‘তুই মামার মেয়ে না হলে তোকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম।’’ পাত্তা দিইনি। সেই রাগেই অ্যাসিড মারার জন্য লোক লাগিয়েছিল সে। ঘটনার সময়ে দূরে গাড়িতে বসে বসে দেখেওছিল। ২০১৪ সালে নিম্ন আদালতে তিন জন অভিযুক্তের যাবজ্জীবন আর দু’জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে আজ ওরা সকলেই জামিনে মুক্ত। বিচার পেতে গেলে এখন সুপ্রিম কোর্ট যেতে হবে। কিন্তু আমার কোর্টে যেতে আর ভাল লাগে না। আইনি লড়াই লড়তে লড়তেই কি জীবন ফুরিয়ে যাবে?

হামলার পরে অন্যদের মতো আমার জীবনটাও বদলে গিয়েছে। ঠিক যেমন দেখিয়েছে ‘ছপাক’ সিনেমায়। মুখে-চোখে কয়েক দফায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি। আমার মতো কয়েক জনকে নিয়েই আগরায় শুরু হয়েছিল ‘শিরোজ হ্যাংআউট’ কাফে। প্রথম প্রথম লোকে আমাদের হাতে তৈরি খাবার খেতে চাইত না। মেয়েরাও অদ্ভুত ভাবে দেখত। এখন অবশ্য আমার আর খারাপ লাগে না। এখন ওই সংস্থার পুনর্বাসন কেন্দ্রের দেখভাল করি। অন্য জায়গা থেকে আসা আক্রান্তদের রাখা, দেখাশোনা করা— ভালই লাগে।

এখন দেশে অ্যাসিড-হামলার ঘটনা অনেক বেড়েছে। অপরাধীদের মনে ভয়ডর নেই। দ্রুত শাস্তি না হলে এটা চলতেই থাকবে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে অ্যাসিড সংক্রান্ত মামলা চলার কথা থাকলেও সাজা কিন্তু ‘ফাস্ট’ হচ্ছে না। সেই সঙ্গে অ্যাসিড বিক্রিও বন্ধ হচ্ছে না।

নারী দিবস উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে অনেক উদ্‌যাপন দেখছি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কোনও একটা দিনে বিশ্বাস করি না। চাই অ্যাসিড নিয়ে, ধর্ষণ-নারী নির্যাতন নিয়ে একটা দিনেই নয়, কথা হোক রোজ। এ নিয়ে লোকে আরও ভাবুক, কিছু করুক। প্রতিটা দিনই হোক নারী দিবস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

International Women's Day Woman Acid Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE