Advertisement
০২ মে ২০২৪
Gender Discrimination

Women's Day Special: কঠিন যুদ্ধে অস্ত্র বাড়তি জেদ

গত পাঁচ-ছ'বছরের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় মুসলিম ছাত্রদের থেকে ছাত্রীরাই এগিয়ে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ০৬:৩৬
Share: Save:

অর্ধেক আকাশ হওয়ার লড়াইয়ে তাঁরাও শামিল পুরোদমে। তবে অর্ধেক পথ এগিয়েই যেন মহাভারতের কর্ণের মতো ডুবে যাচ্ছে রথের চাকা। ক্যালকাটা মুসলিম অরফ্যানেজের এগারো-বারো ক্লাসের পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাস নিতে নিতে ভাবছিলেন নওশিন বাবা খান।

একটি ছাত্রীর ঘরে থেকে থেকে টিভির আওয়াজ কিংবা স্টোভে রান্নার ছ্যাঁক--ছ্যাঁক শব্দ। একটা ছোট ঘরেই যে সপরিবার গাদাগাদি করে বসবাস। আর একটি মেয়েকে ক্লাসে কোনও দিন দেখেনইনি শিক্ষিকা। আগে কেন ক্লাস করনি? জবাব মিলেছে, বাড়িতে একটাই স্মার্টফোন। তাতে ভাইয়েরই অগ্রাধিকার। সেটা রবিবার বলেই দিদি ফোনে ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে।

ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের প্রতি বৈষম্য এ দেশে সার্বিক ভাবেই প্রকট। তবু গত পাঁচ-ছ'বছরের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় মুসলিম ছাত্রদের থেকে ছাত্রীরাই এগিয়ে। ২০১৯-২০ সালের মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৩৩ এবং ২৭ শতাংশ সফল পরীক্ষার্থীই মুসলিম কন্যা। তবে স্নাতক স্তর থেকে ছিটকে যাচ্ছে এই মেয়েদের বড় অংশ। স্নাতকে ৬.৬ শতাংশ থেকে পিএইচ ডি স্তরে তাঁরা ১.১ শতাংশে এসে ঠেকেছেন। অনেকেরই অকালে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তবে শিক্ষাবিদ তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের ব্যাখ্যা, “মুসলিম মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণ আসলে আর্থ-সামাজিক দুরবস্থা। এর শ্রেণিগত বিশ্লেষণই যথাযথ হবে।”

সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ বলছেন, তলিয়ে দেখলে আরও নানা সামাজিক দিক উঠে আসবে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম মেয়েরা বেশির ভাগই গ্রামে থাকেন। সেখানে সুযোগ-সুবিধা কম। কলেজের সংখ্যাও অপ্রতুল। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে মুসলিমেরা বেশি শহরে থাকেন। আপাত ভাবে সে-রাজ্যে মুসলিম ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার হার তুলনায় ভাল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা এ রাজ্যের থেকে ভাল বলা যায় না।

সাঁতরাগাছির একটি কলেজে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম ছাত্রীদের শিক্ষার মূলস্রোতে নিয়ে আসার কাজ করছেন শেখ হায়দর আলি। তিনি আবার বলছেন, “কোরানে নানা ধর্মীয় আচার পালনের মতো জ্ঞানার্জন করাটাও ফরজ বলা হয়েছে। তাতে মেয়ে, পুরুষে ফারাক নেই। অনগ্রসর মুসলিম সমাজে শিক্ষা নিয়ে এ কথাগুলোও বোঝানো দরকার।” খ্রিস্টান মিশনারিদের আদলে জেলায় জেলায় মুসলিম মিশনারি স্কুলও বেড়েছে ইদানীং। কিন্তু হায়দর সাহেবের মতে, মুসলিম প্রধান অঞ্চলে সরকারি স্কুলে পঠনপাঠন, বিশেষত বিজ্ঞান শিক্ষার পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া দরকার।

দুই সন্তানের মা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি নওশিনের মতো মেয়েরা অবশ্য প্রতিকূলতার সামনে হাল ছাড়েননি। স্বামীবিচ্ছিন্না একলা মায়ের সন্তান নাজনিন মল্লিক ঝাড়গ্রামের কলেজে সংস্কৃতের শিক্ষিকা। বাচ্চা সামলে পিএইচ ডিও করছেন। নাজনিন বলছেন, “গ্রামে মুসলিম ঘরে ছেলেরা ভাবে পড়াশোনার থেকে দরজি বা হাটের কাজ করাই ভাল। আমিও ভাবতাম, বড়জোর মাধ্যমিক দেব। মা এবং মাস্টারমশাইদের জন্যই এটুকু পেরেছি।” আজকের প্রজন্মের লড়াকু মেয়েদের দেখে শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারের মনে পড়ছে, বাদুড়িয়ায় তাঁর স্কুলে মুসলিম মেয়েই ছিল হাতে গোনা। তিনি বলেন, “দেশভাগের পরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলিমের বড় অংশই পূর্ববঙ্গে সরে যায়। গরিব মুসলিম ঘরে অভিভাবকদের লেখাপড়া নিয়ে অনভিজ্ঞতা! কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভুল ধারণাতেও মুসলিম মেয়েদের সমস্যা হয়। কিন্তু এটা মুসলিমদের নয়, সার্বিক ভাবে সমাজেরই সমস্যা।" তাঁর আক্ষেপ, হিজাব নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি না-করে মুসলিম মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোই জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gender Discrimination international women’s day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE