খড়্গপুরে রেলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে প্রথম থেকেই সরব মৃতের পরিজনেরা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও খড়্গপুর ডিভিশনে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ কুমারের মৃত্যুর ঘটনার বিচার চেয়ে সরব মৃতের বন্ধুরা। তার উপরে, রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সাঁড়াশি চাপের মুখে পড়ে এ বার খড়্গপুর শহরের গোলবাজার মসজিদ সংলগ্ন সৌরভের কোয়ার্টারে তল্লাশি চালাল পুলিশ। সোমবার সকালে ওই কোয়ার্টারে যান খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল-সহ পুলিশ আধিকারিকেরা। ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখে পুলিশ। ঘর থেকে অবসাদ কাটানোর ওষুধের কৌটো উদ্ধার হয়। ওই কৌটোর পাশেই একটি প্যাকেটে পাউডার জাতীয় কিছু পাওয়া যায়। ঘরের দরজার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় কার্বলিক অ্যাসিডের একটি বোতলও। কিন্তু, এখনও হদিস মেলেনি সৌরভের মোবাইলের। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “তল্লাশিতে পাওয়া সামগ্রী পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।”
২২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই রেল কোয়ার্টার থেকেই উদ্ধার হয় সৌরভের পচাগলা দেহ। বিহারের হাজিপুরের আখিলাবাদের বাসিন্দা সৌরভ গত দেড় বছর খড়্গপুর রেল ওয়ার্কশপের চিফ ডিপো মেটেরিয়াল সুপারিন্টেনডেন্ট পদে ছিলেন। গোড়ায় পুলিশের দাবি ছিল, মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়। সেই মতো প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু হলেও গত শুক্রবার সৌরভের পরিবারের দাবি মেনে তাতে খুনের ধারা যোগ করে পুলিশ। তবে, পুলিশি তদন্তে আর ভরসা রাখতে পারছেন না মৃতের দাদা বিপিন কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার সিবিআই তদন্তের জন্য স্থানীয় সাংসদ রামবিলাস পাসোয়ানের কাছে আবেদন জানিয়েছি।”
প্রশ্ন উঠছে, অবসাদ কাটানোর ওই ওযুধ অতিমাত্রায় খেলে কি কারও মৃত্যু হতে পারে? খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “অতিমাত্রায় এই ওষুধ খেলে কারও মধ্যে ঝিমুনি আসতে পারে। তবে কেউ একসঙ্গে ৪০-৫০টি ওই জাতীয় ট্যাবলেট না খেলে মৃত্যুর সম্ভাবনা কম।’’ এ দিন ফোনে বিপিনও বলেন, ‘‘বাড়িতে ভাইকে কোনওদিন ওই ওযুধ খেতে দেখিনি। তবে বাবাকে ও প্রায়ই মানসিক চাপের মধ্যে থাকার কথা বলত।’’
রেল সুরক্ষা বাহিনীর ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের এক সূত্রের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে সৌরভের এক সহকর্মী জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুপুরে দীর্ঘক্ষণ সৌরভ ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতেন। গত ১-৬ সেপ্টেম্বর ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পর থেকেই সব সময় মনমরা হয়ে থাকতেন। তবে, বিপিন বলেন, ‘‘আমার ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে গত ১ সেপ্টেম্বর ভাই বাড়িতে এসেছিল। তখনও ওর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখিনি। ১৯ সেপ্টেম্বর শেষবার ফোনে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়।’’
সৌরভ কাকে ফোন করতেন, তা জানতে তাঁর মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ।
সৌরভের এক সহকর্মীর দাবি, ঝাড়খণ্ডের কারও সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক ছিল। বিপিনের কথায়, ‘‘ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর খড়্গপুরে যাই। তখনই সৌরভের এক বন্ধু বলে, ১৯ সেপ্টেম্বর ওর ঝাড়খণ্ডে় যাওয়ার কথা ছিল। তবে এর কারণ জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy