জানলার পর্দা নামানো ছিল না। সেটা দেখিয়ে প্রশ্ন ধেয়ে এল, ‘আশপাশের বাড়ি থেকে কেউ দেখতে পেলে কী হবে?’ সঙ্গে সঙ্গে সব ক’টা জানলার পর্দা নামিয়ে দিলেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ-র গোয়েন্দারা। তার পরেই সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট জঙ্গি মুসার সঙ্গে মার্কিন মুলুক থেকে আসা গোয়েন্দারা কথা শুরু করলেন।
সল্টলেকের আইবি ব্লকের ১৬৩ নম্বর বাড়ি। চার তলা ওই বাড়িটাই এনআইএ-র কলকাতা শাখা অফিস। তার চার তলার কনফারেন্স রুমে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধে ও শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল মুসার সঙ্গে কথা বলেন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর অফিসাররা।
শুক্রবার মুসার সঙ্গে এফবিআইয়ের কথা শেষ হয়েছে বলে এনআইএ সূত্রের খবর। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, মুসার সঙ্গে এফবিআইয়ের কথোপকথন, দোভাষীর তর্জমা— পুরোটারই ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখা হয়েছে। মুসার সঙ্গে কথা বলার সময়ে তিন মহিলা-সহ এফবিআইয়ের ওই সাত সদস্যের দলের হাতে ছিল ল্যাপটপ, ক্যামেরা। কাজ করার ফাঁকে মাঝেমধ্যে ঠান্ডা, নরম পানীয়ের ক্যানে চুমুক। কলকাতার নামী রেস্তোরাঁ থেকে এনআইএ অফিসে এফবিআইয়ের অফিসারদের জন্য শুক্রবার দুপুরের খাবারও আনা হয়। বেশির ভাগই কম মশলাদার কন্টিনেন্টাল আমিষ খাবার, স্যালাড, সঙ্গে অল্প কিছু চিনা পদ।
কিন্তু বীরভূমের লাভপুরের যুবক মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে মুসা আইএসের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হলেও সে কোনও হামলা বা খুন করার আগেই ৪ জুলাই বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়ে। তা হলে এফবিআইয়ের এত কাঠখড় পোড়ানো কেন? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কলকাতা শহর তথা এই রাজ্যে থাকা মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন পর্যটকদের কাছে আইএস কতটা বিপদ, সেটা জানতে চাওয়া তো আছেই। সেই সঙ্গে আইএসের সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ যারা, এফবিআই তাদের এক-এক জনকে খুঁজে বার করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসার অবাধ গতিবিধি, ভাব বিনিময় থেকে আইএসের ওই চাঁইদের কাছে পৌঁছতে চায় এফবিআই। ইতিমধ্যেই এফবিআইয়ের দেওয়া তথ্য পেয়ে আইএসের ‘সাইবার সেল’-এর ডজন খানেক সদস্যকে আমেরিকা ও তার সহযোগী দেশগুলি খতম করেছে। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের কয়েক জন যুবক এখন ওই মিডিয়া সেলের সদস্য বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
গোয়েন্দাদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আইএসের ওই বাহিনীর গত বছর মার্চ মাসে করা একটি পোস্ট-এর সঙ্গে মুসার একটি বার্তা আবার অনেকটা মিলে যাচ্ছে।
আইএসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের ওই পোস্টটা ছিল— ‘মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর যাদের হাতের কাছে পাবে, তাদের খতম করো। গলা কেটে, ছুরি মেরে তাদের হত্যা করো।’ মুসার কাছে সামাজিক মাধ্যম মারফত আসা একটি বার্তাতেও মার্কিন নাগরিকদের গলা কেটে খুন করার কথা বলা হয়।
এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, মুসাকে ওই বার্তা পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিক আবু সুলেমান। ওই আবু সুলেমান সাইবার দুনিয়ায় আইএসের এক জন বড় প্রচারক বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। এমনকী, আইসের মুখপত্র হিসেবে গণ্য, অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দাবিক’, ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে সুলেমান। মুসার মাধ্যমে সুলেমানদের কাছেই পৌঁছতে চান গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy