Advertisement
E-Paper

বৃষ্টির চরিত্র বদলের মূলে কি দূষণকণা

আকাশে মেঘের দেখা তো মিলছে। কিন্তু বৃষ্টি তেমন হচ্ছে কই! শুধু চলতি গ্রীষ্মে নয়, কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালেও এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমজনতার। মেঘ ও বৃষ্টির মধ্যে এমন আড়ি-আড়ি খেলা কেন, সেই রহস্য নিয়ে জল্পনাও চলছে সমানে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০৪:২৯
দিনের শেষে ধারাপাত শহরে। ছবি: সৌভিক দে

দিনের শেষে ধারাপাত শহরে। ছবি: সৌভিক দে

আকাশে মেঘের দেখা তো মিলছে। কিন্তু বৃষ্টি তেমন হচ্ছে কই!

শুধু চলতি গ্রীষ্মে নয়, কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালেও এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমজনতার। মেঘ ও বৃষ্টির মধ্যে এমন আড়ি-আড়ি খেলা কেন, সেই রহস্য নিয়ে জল্পনাও চলছে সমানে। সেই রহস্য ভেদ করতে নেমে পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ‘এরোসল’ বা বাতাসে ভাসমান দূষিত কণার কারসাজিতে বদলে যেতে পারে মেঘবৃষ্টির চরিত্র। এরোসলের দাপটে অনেক সময়ে মেঘ জমলেও বৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ খলনায়ক সেই দূষণই।

চলতি মরসুমে এপ্রিলে জারি করা প্রথম দফার পূর্বাভাসে দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, এ বছর দেশ জুড়ে স্বাভাবিক বর্ষা হতে পারে। কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে যে-ভাবে বাতাসে দূষণের মাত্রা বা়ড়ছে, তাতে মোট হিসেবে বর্ষা টেনেটুনে পাশ করলেও বাস্তবে কার ভাগ্যে কতটা বর্ষণ জুটবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে কলকাতা-সহ এ রাজ্যের ছোটবড় বিভিন্ন শহরে দূষণের মাত্রা এত বেশি যে, বৃষ্টির সম্ভাব্য কৃপণতা নিয়ে আশঙ্কা ঘোরালো হচ্ছে।

বোস ইনস্টিটিউটের শতবর্ষ উপলক্ষে সম্প্রতি দার্জিলিঙে আয়োজিত এরোসল এবং জলবায়ু বদল সংক্রান্ত আলোচনাসভাতেও উঠেছিল এই প্রসঙ্গ। সেখানেও বেশির ভাগ বিজ্ঞানী এই বিষয়ে একমত হন যে, বাতাসে দূষণের বাড়বাড়ন্তের ফলেই বদলে যাচ্ছে বৃষ্টির চরিত্র। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিরিওলজির বিজ্ঞানী আর কৃষ্ণন বলেন, ‘‘কোনও এলাকার বাতাসে এরোসলের মাত্রা যত বাড়বে, সেখানে বৃষ্টির পরিমাণ ততই কমতে থাকবে।’’ কেন? বোস ইনস্টিটিউটের পরিবেশবিজ্ঞানী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, এরোসল, বিশেষ করে কার্বনকণা সূর্যের তাপ শোষণ করে। মেঘের মধ্যে সেগুলো ঢুকে পড়লে ক্রমাগত তাপ শোষণ করে গরম বাড়িয়ে তোলে। মেঘের ভিতরে জলীয় বাষ্পকে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি নামতে দেয় না। ফলে মেঘ জমে ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টি আর হয় না। বাতাসে এরোসলের মাত্রা বেশি থাকলে মেঘের আকারও ছোট হয়।

এই পরিস্থিতির জন্য মানুষকেই দায়ী করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, প্রাকৃতিক ভাবেও বাতাসে নানা ধরনের ভাসমান কণা থাকে। কিন্তু এই যে বৃষ্টির অভাব, তার পিছনে মানুষের তৈরি করা দূষিত কণাই দায়ী। পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানান, ছোট আকারের কণা (যার ব্যাস এক মাইক্রোমিটার বা তার কম)-ই মেঘের চরিত্র নষ্ট করে দেয়। মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বা কাঠ-ঘুঁটে পোড়ানোর ঘটনা থেকেই এই ধরনের ক্ষতিকর কণা তৈরি হয়।

এই দূষিত কণার মাত্রা পরিবেশের ভারসাম্যকেও নষ্ট করে দিতে পারে। কী ভাবে সেই বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, তার ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানান, দিনভর আকাশ মেঘলা থাকলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পুরোপুরি পৌঁছতে পারবে না। আবার মাটির গরমও রাতের বেলা বিকিরিত হয়ে আকাশে ফিরে যেতে পারবে না। ফলে পুরো প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিগড়ে যাবে।

তা হলে উপায় কী?

পরিবেশবিজ্ঞানীদের দাওয়াই, বর্ষার চরিত্র বদল আটকাতে মানুষের সৃষ্টি করা দূষণে রাশ টানতে হবে প্রশাসনকে। তা না-হলে ক্রমশই ঘনিয়ে আসবে বিপদ। কিন্তু ওই দূষণে আদৌ রাশ টানা যাবে কী ভাবে, বড় হয়ে উঠছে সেই প্রশ্নটাই।

Pollution Rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy