এপ্রিলের শুরুর দিনে বৃষ্টি পেয়েছিল কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। তার পর থেকে শুকনো গরমের দাপাদাপি চলছে। আগামী কয়েক দিনে স্বস্তির ঝড়বৃষ্টি মিলবে, এমন আশাও দেখাতে পারছে না আলিপুর হাওয়া অফিস। তার জেরে প্রশ্ন উঠেছে, এ বার এপ্রিলে গাঙ্গেয় বঙ্গকে তবে শুকিয়ে কাঠ হতে হবে? অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এ বারের মতো শুকনো গরমের দাপট সাম্প্রতিক অতীতে না-মিললেও এপ্রিলে বৃষ্টি কম হওয়া কিন্তু এই প্রথম নয়। বরং গত কয়েক বছর ধরেই তার ইঙ্গিত মিলেছে।
হাওয়া অফিসের হিসাবে, এপ্রিলে কলকাতায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৫ মিলিমিটার। ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সাল ব্যতীত কোনও বছরেই গড় বৃষ্টিপাতের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি কলকাতা। ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে এপ্রিলে শূন্যের কাছাকাছি বৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিসংখ্যান গ্রীষ্মের বৃষ্টি-চরিত্রে কোনও বদলের প্রমাণ কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। তেমনই অনেকে এ-ও বলছেন, বৃষ্টির ঘাটতি হলে গ্রীষ্মে ভূগর্ভের জলের ভাঁড়ারেও টান পড়বে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের মতে, বৃষ্টির চরিত্রে বদল কি না, তার জন্য কয়েক দশকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ প্রয়োজন। তাই বদল হচ্ছে কি না, তা এ ভাবে বলা সম্ভব নয়। তিনি এ-ও বলছেন, ‘‘এখনও এপ্রিলের অর্ধেক বাকি। শেষ বেলায় কয়েকটি জোরালো কালবৈশাখী পেলেই বৃষ্টির পরিমাণ কিন্তু অনেকটা পূরণ হয়ে যেতে পারে।’’ হাওয়া অফিসের খবর, গত ১ এপ্রিল যে কালবৈশাখী হয়েছিল তাতে কলকাতায় ৮.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
তীব্র এবং শুষ্ক গরমের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই গাঙ্গেয় বঙ্গের কিছু জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে গিয়েছে বলে খবর। খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় চাষের খেতে জলের জোগান দিতেও ভূগর্ভের উপরে চাপ বাড়বে। তাতেও জলস্তরের ভাঁড়ারে টান পড়ার আশঙ্কা ষোলো আনা।
এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টির ঘাটতি এবং জলস্তর নেমে যাওয়ার বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়-এর অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘জলস্তর যত নামবে ততই ভূগর্ভে থাকা আর্সেনিক, ফ্লুয়োরাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক জলের সঙ্গে উঠে আসতে পারে। বৃষ্টির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে জলস্তরের ঘাটতি পূরণ হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে রাসায়নিকের বিপদও এড়ানো যায়।’’ তাঁর সংযোজন, শুধু জলস্তরের ঘাটতি পূরণ নয়, বৃষ্টির ধারাবাহিকতা কৃষি উৎপাদন, জনস্বাস্থ্য-সহ সামগ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেও জরুরি। তা-ও এ ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)