E-Paper

নজরদারির অভাবে হাজিরায় কারচুপি

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের বায়োমেট্রিক উপস্থিতির পাশাপাশি এখনও রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে হাজিরা খাতা রয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রতি দিন সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসে এবং বিকেল ৪টেয় বেরনোর সময় ওই খাতায় সই করতে হয়।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ০৫:৩১

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

নিয়মিত চিকিৎসকেরা আসছেন কি না, কিংবা এলেও পুরো সময় থাকছেন কি না, তার দেখার দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। কিন্তু আদৌ কি রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সেই দায়িত্ব পালন করা হয়? খোদ স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, নজরদারিতে বিস্তর ফাঁক রয়েছে। সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন এক শ্রেণির চিকিৎসক।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের বায়োমেট্রিক উপস্থিতির পাশাপাশি এখনও রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে হাজিরা খাতা রয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রতি দিন সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসে এবং বিকেল ৪টেয় বেরনোর সময় ওই খাতায় সই করতে হয়। ওই হাজিরা খাতা অনুযায়ী প্রতি মাসে বেতন হয়। কিন্তু এই গোটা ব্যবস্থার মধ্যেই ফাঁক ও কারচুপি রয়েছে বলে অভিযোগ খোদ চিকিৎসকদেরই।

শহরের এক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সকাল সাড়ে ১০টার সময় প্রতিটি বিভাগ থেকে হাজিরা খাতা নিয়ে আসা হয়। কত জন হাজিরায় সই করেছেন তা খতিয়ে দেখা হয়। আবার দুপুরে সেই খাতা সমস্ত বিভাগে ফেরত পাঠানো হয়। যাতে বিকেলে ছুটির সময় সই করতে পারেন। যদিও রাজ্যের বেশির ভাগ মেডিক্যাল কলেজেই সেই পদ্ধতি মানা হয় না। যার ফলে টানা তিন দিন অনুপস্থিত থেকেও, চতুর্থ দিন হাসপাতালে এসে এক সঙ্গে সমস্ত সই করে দেন এক শ্রেণির চিকিৎসক। আবার অভিযোগ, একাংশ চিকিৎসক সকালে সই করে বেরিয়ে যান। বিকেল ৪টা নাগাদ আবার এসে সই করেন। এ হেন কারচুপি দেখার দায়িত্ব কার?

এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘চিকিৎসক হাসপাতালে সই করে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাইরে চেম্বার করতে চলে গিয়েছেন কি না, সেটা দেখতে বিভাগীয় প্রধান বা কর্তৃপক্ষের আচমকা পরিদর্শন বা নজরদারির প্রয়োজন।’’ কিন্তু বাস্তবে এমন কোনও নজরদারিই নেই রাজ্যের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজে। হাজিরা খাতা মাসে এক বারও খতিয়ে দেখা হয় না বলেও অভিযোগ। যার সুযোগে শুধু জেলা নয়, খাস কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের বাইরেও রমরমিয়ে চলছে চেম্বার।

ডিউটি আওয়ার্সের মধ্যে বাইরে চেম্বার করার পাশাপাশি জেলার মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ সপ্তাহে দুই বা তিন দিন সেখানে থাকেন। এবং সেই দিনগুলি মিলিয়ে ৪২ ঘণ্টা ডিউটি করে দেন। অবশ্য তেমনটা নিয়ম নয়। জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশিকায় বলা আছে, প্রত্যেক চিকিৎসককে প্রতি সপ্তাহে (রবিবারের রোটেশন ডিউটি-সহ) ৪২ ঘণ্টা ডিউটি করতেই হবে। তবে সেটি সোম থেকে শনিবার— এই ছ’দিনে সাত ঘণ্টার হিসাবে। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসক তা না করেই বাকি দিনগুলি কলকাতায় কাটান। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই ফাঁকিবাজি চলে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। এক প্রাক্তন সিনিয়র চিকিৎসক জানাচ্ছেন, জেলার বাসিন্দা চিকিৎসকেরা ডিউটি আওয়ার্সে বাইরে চেম্বার করেন। সেই সময় তাঁর কোনও রোগীর সমস্যা হলে কলকাতার বাসিন্দা চিকিৎসকেরা সামলে দেন। আবার, যখন ওই চিকিৎসকেরা কলকাতায় চলে আসেন তখন তাঁদের রোগীদের সামাল দেন জেলার বাসিন্দা চিকিৎসকেরা।

কলকাতার বাসিন্দা চিকিৎসকদের বড় অংশের অভিযোগ, জেলার মেডিক্যাল কলেজে তাঁদের যে কোয়ার্টার্স দেওয়া হয়, তা থাকার উপযুক্ত নয়। এক চিকিৎসকের কথায়, “পরিবার তো দূর অস্ত, একাও ঠিকমতো থাকা যায় না। অনেকেরই পরিবারে বিভিন্ন অসুবিধা রয়েছে। তাই সপ্তাহে বাড়ি আসতেই হয়।” এই সমস্যা দূর করতে হলে বদলি নীতি ঠিক করা প্রয়োজন বলে দাবি চিকিৎসকদের। এই যুক্তি বা দাবি নিয়ে বিতর্ক আগেও ছিল। কিন্তু ডিউটি আওয়ার্সে চিকিৎসকদের হাসপাতালে না থাকার বিষয়টিতে স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব নজরদারি নেই কেন? স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের কথা সর্বত্র বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সিনিয়র চিকিৎসকেরা যদি না-ই থাকেন, তা হলে শুধু পরিকাঠামো বাড়িয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক হাল ফেরানো সম্ভব?

(শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Medical Colleges Doctors West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy