Advertisement
E-Paper

সভাপতি বাছতে ফর্মুলা বদলে ফেলল বিজেপি, বঙ্গে আর ‘সর্বসম্মতি’ নয়, এখন ‘অনাপত্তি’ খুঁজছেন নেতৃত্ব

প্রস্তাবিত সব নামেই কম-বেশি বিরোধিতা রয়েছে বলে খবর। তাই বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী সভাপতির নাম ঘোষণা করার আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দশ বার ভাবতে হচ্ছে ।

It’s difficult to reach unanimity, BJP’s central leadership now seeks ‘No Objection’ candidate to find out President for Bengal BJP

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫৭
Share
Save

বিধানসভা নির্বাচন এক বছর পরেই। রাজ্য সভাপতি পদে কাকে বসিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হবে, সে সিদ্ধান্ত যত শীঘ্র সম্ভব নিতে হবে বিজেপিকে। কিন্তু দিল্লিকে ভাবাচ্ছে রাজ্য দলের ‘অভ্যন্তরীণ সমীকরণ’। তাই রাজ্য সভাপতি বেছে নেওয়ার ‘ফর্মুলা’ বদলে গিয়েছে পদ্মশিবিরে। আপাতত ‘সর্বসম্মতি’র অপেক্ষা ছেড়ে ‘অনাপত্তি’র খোঁজ শুরু করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বিজেপিতে সভাপতি বদল হলে সংগঠনেও আমূল বদল চলে আসে। দলে যে নেতা বা নেতৃবর্গ নতুন ক্ষমতাসীন হন, তাঁর বা তাঁদের বেছে নেওয়া ‘টিম’-এর হাতেই সব স্তরের দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয়। বিজেপি নেতারা অবশ্য এতে কোনও ‘অস্বাভাবিকতা’ দেখেন না। তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘‘যাঁর উপর দলের সাফল্য বা ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায় বর্তাবে, তাঁকে তো তাঁর নিজের টিম বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতেই হবে। ক্যাপ্টেন পছন্দমতো টিম বানাতে না পারলে ম্যাচ জেতা তো কঠিন হবেই।’’

কিন্তু বিজেপির সাংগঠনিক গতিবিধির সেই ‘স্বাভাবিক’ ছন্দ পশ্চিমবঙ্গে ছন্দপতন ঘটাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনও ছন্দপতন ঘটলে এক বছরে তা কাটিয়ে উঠে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করা যাবে কি না, সে প্রশ্ন আরও বেশি দুশ্চিন্তার।

আপাতত যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সর্বোচ্চ নেতা, তাঁদের পারস্পরিক ‘সমীকরণ’ দলের অন্দরে সুবিদিত। কিন্তু টানাপড়েন থাকলেও পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে তাঁরা কিছুটা অভ্যস্তও হয়ে গিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা। বঙ্গ বিজেপির দুই সর্বোচ্চ নেতা সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পরস্পরের সঙ্গে কাজ করছেন। সাংগঠনিক গতিবিধির শীর্ষে যে নেতা, তিনি ওই পদে এসেছেন তারও এক বছর আগে। অর্থাৎ, গত তিন বছর ধরে তিনিও সুকান্ত-শুভেন্দুর সঙ্গে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছেন। বিজেপির একাংশের বক্তব্য, সম্পর্কের সমীকরণ যেমনই হোক, নেতাদের দীর্ঘ সহাবস্থানের সুবাদে সংগঠনে একটা ‘স্থিতাবস্থা’ অন্তত এসেছে। ২০২৬ সালের ভোটযুদ্ধের এক বছর আগে সেই ‘স্থিতাবস্থা’ নষ্ট হোক, তা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চান না। তাই শীর্ষ স্তরে রদবদল হলেও গোটা সাংগঠনিক কাঠামোকে ওলট-পালট করে দেওয়ার পথে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা এখন রাজি নন।

রাজ্য সভাপতি পদে সুকান্তের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু তিনি এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাই তাঁকে সভাপতিত্বে বহাল রাখা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে কঠিন। কারণ, প্রথমত ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতিই বিজেপিতে অনুসৃত হয়। দ্বিতীয়ত, দিল্লির মন্ত্রিত্ব এবং বাংলার মতো কঠিন জমিতে দলের সভাপতিত্ব একসঙ্গে সামলানো অসম্ভব না হলেও কঠিন। বিজেপি সূত্রের খবর, শুভেন্দুর ক্ষেত্রেও বাধা হতে পারে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি। কারণ তিনি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। তাই পরবর্তী রাজ্য সভাপতি পদে চর্চায় একাধিক নাম উঠে আসছে।

বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্যের শীর্ষনেতাদের তরফে অন্তত তিনটি নাম জমা পড়েছে দিল্লি দরবারে। বঙ্গ আরএসএসের পছন্দ হিসেবে আবার অন্য একটি নাম পৌঁছেছে বলে খবর। দিল্লির নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দও রয়েছে। তাই রাজ্য থেকে যে সব নাম প্রস্তাবিত হয়েছে, সেগুলির মধ্যে একটি নাম শুরুতেই বাদ পড়েছে বলে সূত্রের দাবি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কারও কারও ভাবনায় বরং এক দিল্লিবাসী বাঙালি নেতার নাম রয়েছে। কিন্তু ওই সব নামের একটিতেও ‘সর্বসম্মতি’ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী সভাপতির নাম ঘোষণা করার আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দশ বার ভাবতে হচ্ছে। রাজ্য দলের অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও কাউকে মাথার উপরে ‘চাপিয়ে’ দেওয়া হল, এমন অভিযোগের ভাগীদার হতে চাইছে না দিল্লি। বিশেষত, বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে।

এই পরিস্থিতিতেই জন্ম নিয়েছে ‘অনাপত্তি’ ফর্মুলা। অর্থাৎ, এমন কেউ যাঁর নাম কারও পছন্দের তালিকায় না থাকলেও আপত্তির তালিকাতেও নেই। এমনকি, বঙ্গ বিজেপির বিভিন্ন ‘লবি’ আবর্তিত হয় যে চার-পাঁচ জনকে ঘিরে, তাঁদেরও কারও আপত্তি থাকবে না। তেমন অন্তত দু’টি নাম পাওয়া গিয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। তবে তাঁদের কতটা ‘গুরুদায়িত্ব’ সামলানোর অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে, সে বিষয়টিও নেতৃত্বকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। অর্থাৎ, বর্তমানের ‘স্থিতাবস্থা’ যদি বদলাতেই হয়, তা হলে সভাপতি বাছা হবে ‘অনাপত্তি’ বা ‘নো অবজেকশন’-এর ভিত্তিতেই। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলের তত্ত্বাবধানে এ বার বুথ, মণ্ডল, জেলা স্তরে সাংগঠনিক নির্বাচনের ব্যবস্থা ‘কার্যকর’ ভাবে চালু হয়েছে বলে বিজেপির একাংশের দাবি। সেই ব্যবস্থার মাধ্যমে সংগঠনের যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, নতুন সভাপতিও যাতে তা-ই বহাল রাখেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেই বনসলেরা এগোতে চাইছেন। কারণ, নতুন সভাপতি নিজের ‘টিম’ বাছতে গিয়ে সদ্য তৈরি টিমগুলিকে বাতিল করতে থাকলে নির্বাচনের আগে আবার এলাকায় এলাকায় নতুন নতুন ‘লবি’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা।

BJP Bengal West Bengal Politics Sukanta Majumdar Suvendu Adhikari

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}