Advertisement
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Saumitra Khan

মদ্যপায়ীদের কাছে বিপুল ব্যবধানে গঞ্জিকাসেবীদের হার, সৌমিত্রকে জবাব দিয়ে রাজ্যকে নিশানা কেন্দ্রের

আসক্তদের জেলাভিত্তিক হিসাব চেয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ। কেন্দ্রীয় সরকার সেই প্রশ্নের উত্তর দিল মঙ্গলবার। সেখানে মদ-মাদকে আসক্তের রাজ্যভিত্তিক যে সংখ্যা রয়েছে, তা চোখ কপালে তোলার মতো।

Overwhelming majority of alcoholics in Bengal over other addicts, Says GOI’s reply to BJP MP Saumitra Khan in Lok Sabha

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৫
Share: Save:

বিপুল সংখ্যাধিক্যে গঞ্জিকাসেবীদের হারিয়ে দিলেন মদ্যপায়ীরা। সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্যেই স্পষ্ট হল এই ফলাফল। রাজ্যে ‘গাঁজাখোরের’ সংখ্যা কত? সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন এ রাজ্যের বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। অন্যান্য নেশায় আসক্তদের সংখ্যাও জানতে চেয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সেই প্রশ্নের জবাবই লিখিত আকারে দিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বিএল বর্মা। মদ, গাঁজা, মাদক— সব রকম আসক্তির হিসাবই পেশ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের দেওয়া হিসাব ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে দাবি করেছেন সৌমিত্র।

আসক্তদের জেলাভিত্তিক হিসাব চেয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ। সৌমিত্রের এই অভিনব প্রশ্নের খবর আনন্দবাজার অনলাইনেই প্রথম প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার সেই প্রশ্নের যে উত্তর মঙ্গলবার দিয়েছে, তাতে অবশ্য জেলাভিত্তিক হিসাব নেই। বিজেপি সাংসদকে সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক জানাল যে, সরকারের হাতে ২০১৯ সালের সমীক্ষা রিপোর্ট রয়েছে। সেখানে মদ-মাদকে আসক্তদের রাজ্যভিত্তিক সংখ্যা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা কেমন? মদ, গাঁজা এবং বিভিন্ন মাদক মিলিয়ে আসক্তের সংখ্যা প্রায় ৩৪ লক্ষ বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। তবে গাঁজায় নয়, সবচেয়ে বেশি আসক্তি মদ্যপানেই, এমন হিসাবও ধরা পড়েছে কেন্দ্রের পেশ করা সমীক্ষা রিপোর্টে।

গত ডিসেম্বরে আর এক বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের করা এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বাংলায় মাদক বাজেয়াপ্ত হওয়ার হিসাব তুলে ধরেছিল। ২০১৮ থেকে ২০২২— পাঁচটি অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ হিসাব দিয়েছিল অমিত শাহের মন্ত্রক। সেই হিসাব অনুযায়ী রাজ্যে গাঁজা বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরিমাণই ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১৮ সালে বাংলায় গাঁজা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ২৭ হাজার কেজির বেশি। বাজেয়াপ্ত হওয়া অন্য সব মাদকের সম্মিলিত পরিমাণ ছিল চার হাজার কেজির কিছুটা বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে মাদক ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল, ইঞ্জেকশন ভায়াল, কাশির সিরাপ ইত্যাদিও বাজেয়াপ্ত হয়। ২০২২ সালে গিয়ে বাজেয়াপ্ত হওয়া গাঁজার পরিমাণ মেনে আসে সাড়ে ১৮ হাজার কেজির কাছাকাছি। আর বাজেয়াপ্ত হওয়া অন্য সব মাদকের সম্মিলিত পরিমাণ কিছুটা বেড়ে হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কেজির মতো। মাদক ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল, ইঞ্জেকশন ভায়াল, কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যায়। মঙ্গলবার সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক যে হিসাব দিল, তা মাদক দ্রব্য বাজেয়াপ্ত হওয়ার হিসাব নয়, মাদকে আসক্তির হিসাব। কিন্তু সেই হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, গাঁজায় আসক্তের সংখ্যার চেয়ে অন্যান্য মাদকে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। গাঁজা, আফিম, কোকেন-সহ সব নেশাকে ১০ গোল দিয়েছে মদ। সব আসক্তির সম্মিলিত পরিমাণও মদ্যপানের ধারেকাছে নেই।

সৌমিত্রকে কেন্দ্রের দেওয়া জবাব অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে সুরাসক্তের সংখ্যা ২৭ লক্ষ। গঞ্জিকাসেবীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৪ হাজার। আফিম-ভিত্তিক নেশায় আসক্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার। এ ছাড়া ইনহেল্যান্টে আসক্ত ৯২ হাজার। সিডেটিভে (ঘুমের ওষুধ জাতীয়) আসক্ত ১ লক্ষ ১২ হাজার। কোকেন, অ্যামফেটামাইন, হ্যালুসিনোজেন জাতীয় নেশায় আসক্তের মোট সংখ্যা হাজার তিনেকের বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪ লক্ষ।

শুধু এই হিসাব তুলে ধরেই শেষ হয়নি কেন্দ্রের উত্তর। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক গোটা দেশে যে ‘নেশামুক্ত ভারত অভিযান’ চালাচ্ছে, সে অভিযানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহযোগিতা করছে না বলেও কেন্দ্র দাবি করেছে। সংসদে পেশ করা উত্তরে লেখা হয়েছে, প্রথমে দেশের ২৭২টি জেলাকে ‘বিপন্ন’ হিসাবে চিহ্নিত করে ২০২০ সালের ১৫ অগস্ট এই অভিযান শুরু করা হয়। পরে দেশের সব জেলাকেই নেশামুক্ত ভারত অভিযানের আওতায় আনা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এখনও পর্যন্ত কোনও জেলায় এই প্রকল্প রূপায়ণ করেনি বলে কেন্দ্র সংসদে মঙ্গলবার জানিয়েছে। নেশামুক্ত ভারত অভিযানের আওতায় একটি টোল ফ্রি নম্বরও ঘোষণা করা হয়েছিল— ১৪৪৪৬। বঙ্গ থেকে সেই নম্বরে ১৫ হাজারের বেশি কল পৌঁছেছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু কল পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক কোনও পদক্ষেপ করেছে কি না, তার কোনও উল্লেখ সরকারি জবাবে নেই।

নিজের প্রশ্নের জবাব পেয়ে সৌমিত্র বলছেন, ‘‘শুধু গাঁজা নয়, সঙ্গে অন্যান্য নেশায় আসক্তদের কথাও জানতে চেয়েছিলাম। মদ এবং মাদক, সব নেশার হিসাবই কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে। আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে, প্রায় ৩৪ লক্ষ মানুষ আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন!’’ কেন্দ্রের নেশামুক্তি প্রকল্প বাংলার সরকার কার্যকরী কেন করেনি, সে প্রশ্ন তুলে সৌমিত্রর তোপ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কী চাইছে? আমাদের রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কি রাজ্য সরকার অন্ধকার করে দিতে চাইছে? মদ খাওয়া কী রকম বেড়ে গিয়েছে, তা রিপোর্টে দেখতেই পাচ্ছেন। তার পরেও প্রত্যেক পঞ্চায়েতে রাজ্য সরকার মদের দোকান খোলার লাইসেন্স দিচ্ছে।’’ বিষ্ণুপুরের সাংসদের কথায়, ‘‘নেশার প্রশ্নে আমি কোনও রাজনৈতিক দলকে নিশানা করতে চাই না। আমি সাধারণ ভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে চিন্তিত। এ ভাবে প্রতি পঞ্চায়েতে একটা করে মদের দোকান খুলে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Saumitra Khan BJP MP Lok Sabha West Bengal BJP West Bengal Politics drug addiction Drug Addicts Alcoholic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy