অশান্ত: ছাত্র-বিক্ষোভের মুখে সুরঞ্জন দাস। বুধবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
এক বার ৪৪ ঘণ্টার ধর্না-বিক্ষোভ হয়ে গিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের প্রবেশিকার প্রশ্নে বুধবার আবার শুরু হয় ঘেরাও। বেশি রাত পর্যন্ত আটকে থাকেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ও অন্য কর্তারা।
প্রবেশিকায় বাইরের শিক্ষকদের হস্তক্ষেপ কেন, তা নিয়ে ঘোর বিতর্কের মধ্যে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, এ বছর কলা বিভাগের ছ’টি বিষয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা হচ্ছে না। নম্বরের ভিত্তিতেই ভর্তি নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই উপাচার্যকে ঘেরাও করেন পড়ুয়ারা। শিক্ষক সমিতি জুটা-ও এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে। পড়ুয়া এবং জুটার অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের ইচ্ছাতেই সিলমোহর দিলেন।
কলা বিভাগে গত বছর চারটি বিষয়ে ভর্তি-পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তার সঙ্গে এ বার বাংলা, ইতিহাসেও প্রবেশিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় বিতর্ক। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বরাবরই প্রবেশিকার বিরুদ্ধে। ১৪ জুন কর্মসমিতির বৈঠকে উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধি মনোজিৎ মণ্ডল জানান, প্রবেশিকার সংস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই। অ্যাডভোকেট জেনারেলের মত নেন কর্তৃপক্ষ। এজি জানান, প্রবেশিকা হোক। কিন্তু তাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজের কোনও ভূমিকা থাকবে না। ভর্তি কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাইরের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এক সেট প্রশ্নপত্র নেওয়া হবে। খাতা দেখার দায়িত্বও দেওয়া হবে বিভাগের বাইরের পরীক্ষকদের।
এর বিরোধিতা করেন শিক্ষকেরা। শঙ্খ ঘোষ, সুকান্ত চৌধুরী-সহ ১২ জন শিক্ষাবিদও ভর্তি-পরীক্ষায় বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বুধবার কর্মসমিতির বৈঠকে ছ’জন প্রবেশিকার পক্ষে এবং ন’জন বিপক্ষে মত দেন। তার পরেই প্রবেশিকা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্মসমিতি।
আরও পড়ুন: ভর্তি হবেন? নেতারা চলে যাচ্ছেন বাড়িতে
ওই সিদ্ধান্তের পরে দু’দফায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেন উপাচার্য। কিন্তু পড়ুয়ারা বেরোতে দেননি। মেজাজ হারিয়ে গলা চড়িয়ে উপাচার্য বলেন, ‘‘এ ভাবে আটকানো যায় না। এটা বেআইনি।’’ রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য পড়ুয়াদের বোঝাতে গেলে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। পড়ুয়াদের বক্তব্য, প্রবেশিকার যে-প্রক্রিয়া বছরের পর চলে আসছে, তা শিক্ষামন্ত্রীর ইচ্ছায় বদলে দেওয়া হয়েছে। এর যথাযথ ব্যাখ্যা চান তাঁরা। প্রবেশিকা ফিরিয়ে আনতে হবে। কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের সহ-সম্পাদিকা ঊষসী পাল বলেন, ‘‘বারবার এমন পরিবর্তনে পড়ুয়ারা বিভ্রান্ত। সরকারের ইচ্ছাকে মান্যতা দিল কর্মসমিতি।’’ তবে রেজিস্ট্রার জানান, ভর্তি-পরীক্ষা নিয়ে যে-আইনি প্রশ্ন উঠেছে, তা কাটিয়ে, পড়ুয়াদের স্বার্থ দেখে এবং শিক্ষকদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। ভর্তি প্রক্রিয়ায় বর্তমান পড়ুয়াদের কোনও ভূমিকা নেই। শিক্ষামন্ত্রীর ইচ্ছাকেই মর্যাদা দেওয়া হল কি না, সেই প্রশ্ন উঠলে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘এমন যদি হয়ে থাকে, তবে সেটা কাকতলীয়।’’
জুটার সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘কর্মসমিতিতে উচ্চশিক্ষা সংসদের সদস্যকে দিয়ে কর্তৃপক্ষকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করাল রাজ্য সরকার। এর প্রতিবাদে কর্মসূচি ঠিক করা হবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে।’’
রেজিস্ট্রার জানান, ভর্তির আবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হবে। তবে ভর্তি এবং ক্লাস শুরুর দিন কোনও ভাবেই পিছোনো হবে না। এই নিয়ে দু’বার ভর্তির আবেদনপত্র জমা দেওয়ার দিন বদল করা হচ্ছে। আজ, বৃহস্পতিবার ভর্তি কমিটি পরবর্তী ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy