নিথর দেহ পড়ে চা বাগানেই। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
কিছু দিন আগে চা বাগানের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। সোমবার সকালে গণেশ ঠাকুরের (৪৫) ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা গেল নিজের কোয়ার্টারের সামনে। এ দিন সকালে বাগানে কাজে যাওয়ার সময় শ্রমিকরা দেহটি দেখতে পান। তাঁরাই পুলিশকে খবর দেন। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, অজস্র গভীর আঘাতে চিহ্ন গণেশের দেহে। এমনকী, ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলটিও কেটে নেওয়া হয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলার ভান্ডিবাড়ি লাম্বাবালা চা বাগানের এই ঘটনার তদন্তে গিয়েছিলেন স্বয়ং জেলার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি। ছিলেন ডিআইজি রাজেশ যাদবও। এমন নৃশংস খুন দেখার পরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা চা বাগানে। পুলিশ এর মধ্যেই জেরা করেছে কোয়ার্টারের চৌকিদার টলকেশ্বর রায়কে। তিনি জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে, পালানোরও চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। তাঁর বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকায় পুলিশ তাঁকে টানা জেরা করছে। আরও চার শ্রমিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্ভবত রবিবার রাত একটা থেকে দেড়টার মধ্যে গণেশের কোয়ার্টারে চড়াও হয় খুনিরা। তারা সংখ্যা বেশ কয়েক জন ছিল বলেই মনে করছে পুলিশ। তিনি বেরিয়ে এলে তাঁকে অনেকে মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে বলেই প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে। তখন চৌকিদার সেখানে ছিলেন বলেও ধারণা পুলিশের। কেন তিনি পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে এখনও সন্দেহ যায়নি তাদের।
গণেশের কোয়ার্টারের পাশেই বাগানের অফিস। সকাল ৭টা নাগাদ সেখানে কাজে যাওয়ার সময় শ্রমিকরা দেখেন, কোয়ার্টারের সামনে গণেশের ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে রয়েছে। চার দিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আতঙ্কিত শ্রমিকরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন। পরে শ্রমিকদের অনেকেই বলেছেন, ম্যানেজার খুবই ভাল মানুষ ছিলেন ৷ তার পরও তার সঙ্গে কেন এমনটা ঘটল বুঝতে পারছি না ৷
এই বাগানের যিনি ম্যানেজার ছিলেন, তাঁকে নানা কারণে অগস্টেই কাজ থেকে সরিয়ে দেন মালিক পরমেশ্বরলাল কেজরীবাল। সেই দায়িত্ব এখন ভাগাভাগি করে পালন করছিলেন গণেশ ও আর এক সহকারী ম্যানেজার। বিহারের মধুবনীর বাসিন্দা গণেশকে কেন হঠাৎ খুন হতে হল, তার পিছনে একাধিক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জেনেছে, দু’সপ্তাহ আগে বাগানের এক শ্রমিকের সঙ্গে গোলমাল হয় গণেশের। সেই শ্রমিক তাঁর কলার ধরে চড়ও মেরেছিলেন বলে দাবি গণেশবাবুর এক ভাইয়ের। পুলিশের এক অফিসার জানান, দু’জন লোক বিহার থেকে মাঝেমধ্যেই ওই কোয়ার্টারে গিয়ে টাকার জন্য গণেশবাবুকে তাগাদা দিতেন। ফলে, কোন ঘটনার জেরে গণেশবাবু খুন হয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘‘আমরা কিছু সূত্র পেয়েছি। সব খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy