পোড়া বই নিয়ে নাড়াচাড়া। —নিজস্ব চিত্র।
আধপোড়া ঘরের আনাচ কানাচে হাতড়ে বেড়াচ্ছিল বছর পনেরোর মেয়েটি। মাঝে মাঝে চোখ মুছছে। কী খুঁজছো? উত্তর নেই মুখে। খানিকক্ষণ পরে কয়েকটা ঝলসে যাওয়া কাগজ হাতে তুলে বলল, ‘‘অঙ্ক বইয়ের পাতা। পরশু থেকে মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু।’’
জয়নগরের চালতাবেড়িয়া হাই স্কুলের ছাত্রী আলিমা লস্কর পড়াশোনায় বরাবরই মনোযোগী। এ বার মাধ্যমিক দেওয়ার কথা তার। প্রস্তুতি চলছিল। শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে টেস্ট। আলিমা বলে, ‘‘খুঁজে দেখছিলাম, কোনও বই আস্ত আছে কি না। দু’চারটে পাতা উদ্ধার করতে পারলাম। তবে সে সব আর পড়ার মতো অবস্থায় নেই।’’
সোমবার জয়নগরের গ্রামে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুনের পরে স্থানীয় দলুয়াখাকি গ্রামে বেশ কিছু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় কিছু লোক। ভাঙচুর, লুটপাট চলে। পালিয়ে প্রাণরক্ষা করেন বাড়ির পুরুষেরা। মহিলা-শিশুরা আশ্রয় নেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। অনেকে যান সিপিএমের কার্যালয়ে। বুধবার সেখান থেকেই বাড়ি ফিরেছেন আলিমাদের মতো অনেকে। কিন্তু ঘরদোর সব ছারখার হয়ে গিয়েছে। আলিমা জানায়, সিপিএম পার্টি অফিস থেকে কিছু বইয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আলিমার মা মর্জিনা বলেন, “দর্জির কাজ করে অনেক কষ্টে মেয়েটাকে পড়িয়েছি। বইপত্র কিনে দেওয়াটা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে সহজ ছিল না। মেয়েটা যদি এ বার মাধ্যমিকে বসতে না পারে, এত দিনের সব চেষ্টা, সব লড়াই বিফলে যাবে!” আলিমার প্রতিবেশী আফসানা চালতাবেড়িয়া স্কুলেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আগুনে পুড়েছে তার বইপত্রও। আফসানার কথায়, “সামনের মাসে পরীক্ষা। বন্ধুরা সকলে পড়াশোনা করছে। আমার বইপত্র নেই। ঘর-বাড়ি ভাঙা। কী হবে, জানি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy