Advertisement
E-Paper

বিনিয়োগ বিনা গতি নেই, বার্তা জেটলির

লগ্নি টানতে না-পারলে, রাজ্যের আয়ের সমস্যা মিটবে না কখনও। শুক্রবার কলকাতায় প্রথম ‘সুরেশ নেওটিয়া স্মারক বক্তৃতা’ দিতে এসে স্পষ্ট জানিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর মতে, রাজ্যে সরকার বদলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৬
শহরের একটি অনুষ্ঠানে অরুণ জেটলি। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

শহরের একটি অনুষ্ঠানে অরুণ জেটলি। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

লগ্নি টানতে না-পারলে, রাজ্যের আয়ের সমস্যা মিটবে না কখনও।

শুক্রবার কলকাতায় প্রথম ‘সুরেশ নেওটিয়া স্মারক বক্তৃতা’ দিতে এসে স্পষ্ট জানিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর মতে, রাজ্যে সরকার বদলেছে। কিন্তু পিছনের সারি থেকে সামনে উঠে আসতে গেলে নীতিও বদলাতে হবে। যেটা দরকার সেটা হল, লগ্নি টানা এবং তা ধরে রাখার মানসিকতা। সে জন্য শিল্প সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তৈরি করতে হবে লগ্নিবান্ধব পরিবেশ।

এ দিন অনুষ্ঠান শেষে শিল্পমহলের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জেটলি। সেখানে তিনি বলেন, ওড়িশা বা ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্য আয়ের ঘাটতি দূর করে ফেলেছে। কিন্তু এখনও যে দু’টি প্রধান রাজ্য এই রোগে আক্রান্ত তারা হল পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল। এবং এই দুর্দশার জন্য নাম না করে আগের বাম শাসনকেই দুষেছেন জেটলি। তাঁর কথায়, ‘‘এই দুই রাজ্যেই দীর্ঘদিন শাসন করেছে এমন দল, যারা শিল্পকে উৎসাহ দেয়নি। স্বাগত জানায়নি বেসরকারি বিনিয়োগকে। বরং ক্রমাগত বাড়িয়েছে সরকারি ভর্তুকি ও খরচ। ফলে অনেক শিল্প রাজ্য ছেড়েছে। মুষড়ে পড়েছে অর্থনীতি।’’

এর পরেই পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পরের সরকারও যদি সেই একই পথে হাঁটে, তা হলে রাজ্যের অবস্থার বদল হবে না।’’ রাজ্যকে পাল্টাতে চাইলে পুরনো নীতি বাতিল করতে হবে। আঁকড়ে ধরতে হবে নতুন শিল্পবান্ধব নীতি। পরামর্শ জেটলির। তাঁর মতে, লগ্নি এলে তবেই কাজের সুযোগ তৈরি হবে। বাড়বে সরকারের আয়। সহজ হবে গরিবগুর্বোদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্পে টাকার সংস্থানও।

অনুষ্ঠানে এক বারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তাঁর সরকারের নাম মুখে আনেননি জেটলি। কিন্তু কলকাতায় দাঁড়িয়ে শিল্পবান্ধব ও লগ্নি টানার উপযুক্ত নীতি তৈরির এই আহ্বানকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ না-করার ব্যাপারে মমতার সরকারের জেদের জেরে বড় মাপের লগ্নি আসছে না এ রাজ্যে। শহর ও গ্রামাঞ্চলে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন তুলে দিতেও ঘোর অনীহা মুখ্যমন্ত্রীর। দেশের প্রায় কোনও রাজ্যেই এমন আইন না থাকলেও। বিশেষ আর্থিক অঞ্চল ঘিরে মমতার আপত্তি নিয়েও বিস্মিত শিল্পমহল। সেই আপত্তির জেরে থমকে রয়েছে ইনফোসিসের লগ্নি।

নীতিগত এই সব বাধার পাশাপাশি রয়েছে তোলাবাজি ও সিন্ডিকেটের উৎপাত। এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর আহ্বান তাই স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্ব পেয়েছে শিল্পমহলের কাছে। সৌজন্য বজায় রেখেও যে শিল্পমহল ইদানীং সরকারি নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম দু’দিন আগেই বলেছে, রাজ্যে যে হেতু বড় জমি মিলছে না, তাই বড় শিল্পের আশাও নেই। আর বড় শিল্প না হলে যে আর্থিক উন্নয়ন হবে না, তা-ও সম্প্রতি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

জেটলি এ দিন বলেন, রাজনীতির জটে যাতে প্রকল্প আটকে না-থাকে, তার জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং শ্রম সংক্রান্ত আইন রাজ্যগুলির হাতেই ছেড়েছেন তাঁরা। অর্থাৎ, নীতি বদলের দায় একান্ত ভাবে রাজ্যেরই। একই সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, যে রাজ্যে সুযোগ-সুবিধা পাবেন, শিল্পপতিরা সেখানেই চলে যাবেন।

অর্থমন্ত্রীর মতে, বিনিয়োগ টানতে রাজ্যগুলির মধ্যে এখন যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে, দেশের অর্থনীতির পক্ষে তা স্বাস্থ্যকর। তাঁর কথায়, ‘‘লগ্নি টানতে সম্মেলন গুজরাত আগেই করত। এখন করছে পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, হরিয়ানা, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশও।’’ সুনির্দিষ্ট ও ধারাবাহিক শিল্প-নীতি না থাকলে এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কোনও রাজ্যের পক্ষেই লগ্নি টানা ও ধরে রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

শিল্প-নীতির ধারাবাহিকতা যে কত জরুরি, তা বারবার বলেছেন জেটলি। তাঁর মতে, অনেক সময়ই তার তাল কেটে দেয় সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়োনোর চেষ্টা। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের নাম মুখে আনেননি তিনি। কিন্তু জেটলি না-বললেও, এই কথাকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে অনেকের। কারণ, বিপুল দেনার বোঝা ঘাড়ে থাকলেও মেলা-উৎসব, ক্লাবকে অনুদান, বা যথেচ্ছ ভাতা দেওয়ায় কখনও কার্পণ্য করেননি মমতা। বরং ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে খয়রাতির পরিমাণ। তাতে আরও হাঁড়ির হাল হচ্ছে কোষাগারের।

রাজ্যে শিল্প টানার দাওয়াই দেওয়ার পাশাপাশি এ দিন বাজেট অধিবেশনের জন্যও তাল ঠুকেছেন জেটলি। তাঁর দাবি, সকলেই মেনে নিচ্ছে যে, এখন বিশ্ব অর্থনীতির উজ্জ্বল বিন্দু ভারত। চিনে বৃদ্ধি ঝিমিয়ে পড়েছে। পুরোদস্তুর চাঙ্গা হয়নি মার্কিন অর্থনীতি। ইউরোপ তথৈবচ। তাতেও ৭%-র বেশি বৃদ্ধির সড়কে দৌড়চ্ছে ভারত।

মন্ত্রীর দাবি, তেলের দর তলানিতে ঠেকার সুবিধা তোলা সম্ভব হচ্ছে। বাড়ছে পরিকাঠামোয় লগ্নি। চিনের সমস্যার আঁচ গায়ে লাগলেও তা নাড়িয়ে দেয়নি ভারতকে। তবে বৃদ্ধির হারকে উঁচু তারে বেঁধে রাখতে জরুরি শিল্পমহলের আস্থা অর্জন। তার জন্য সংস্কার দরকার কর-ব্যবস্থায়, দ্রুত ব্যবসা গোটানোর নিয়মে। কিন্তু এমন অনেক বিলই আটকে রয়েছে সংসদে। এই ছবি বদলাতে এ বার শুধু ঝগড়ার জন্য ঝগড়া ছেড়ে ‘ভাল রাজনীতি’র আহ্বান জানিয়েছেন জেটলি।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy