Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

TMC: ঠিকাদারি আগে, তাই দলত্যাগ

লিখিত ইস্তফাপত্রে তাঁর স্পষ্ট ব্যাখ্যা, ঠিকাদারি আর তৃণমূলের মধ্যে ঠিকদারিটাই বাছলেন তিনি। কারণ ওটাই রোজগারের পথ।

ফাইল চিত্র।

রঞ্জন পাল
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২২ ০৫:৪৬
Share: Save:

তৃণমূলটা তিনি করতেন দলের জন্মলগ্ন থেকে। আর ঠিকাদারিতে হাত পাকান ২০১১-য় দল ক্ষমতায় আসার পরে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইস্তফা দিলেন জঙ্গলমহলের ওই তৃণমূল বুথ সভাপতি। লিখিত ইস্তফাপত্রে তাঁর স্পষ্ট ব্যাখ্যা, ঠিকাদারি আর তৃণমূলের মধ্যে ঠিকদারিটাই বাছলেন তিনি। কারণ ওটাই রোজগারের পথ।

শনিবার হলদিয়ায় তৃণমূলের শ্রমিক সমাবেশের মঞ্চ থেকে অভিষেক ঘোষণা করেছেন, ‘‘দলের পতাকা কাঁধে নিয়ে ঠিকাদারি করা চলবে না। হয় ঠিকাদারি করুন, না হয় তৃণমূল।’’ এই নীতি যে রাজ্য জুড়ে প্রযোজ্য হবে, তা-ও স্পষ্ট করে দেন অভিষেক। এ কথা জানার পরই খানিক দোটানায় পড়েন ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি অঞ্চলের ভেদাকুই সংসদের সিমলা বুথের তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দত্ত। তবে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি তিনি। রবিবারই লিখিত ভাবে নেতৃত্বের কাছে দল ও পদ ছাড়ার কথা জানিয়েছেন।

অভিজিৎ বলছেন, ‘‘তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আমি এই বুথের সভাপতি। দীর্ঘদিন ঠিকাদারিও করছি। সংসার চালাতে তো টাকা লাগে। তাই ঠিকাদারিটাই করব।’’ বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বুবাই মাহাতো মানছেন, ‘‘অভিজিৎ পদ ও দল ছাড়ার কথা লিখিত ভাবে হোয়াটসআ্যপে জানিয়েছেন। দলে আলোচনা করে ওই সংসদে নতুন বুথ সভাপতি করা হবে।’’ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে জানান জেলা তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা।

তৃণমূলের জন্ম থেকে দল করলেও অভিজিৎ ঠিকাদারি শুরু করেছেন তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই। ২০১১-র আগে তিনি নিজের চারচাকা গাড়ি ভাড়ায় চালাতেন। পালাবদলের পরে ঠিকাদারির কল্যাণে শ্রীবৃদ্ধিও হয়েছে তাঁর। জানা যাচ্ছে, সর্বাধিক ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন অভিজিৎ। বছরে কম করে ১২টি কাজের বরাত পান। বেলপাহাড়ি অঞ্চলের সিমলা গ্রামে দোতলা বাড়ি। যৌথ পরিবার অভিজিতের আয়ের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। অভিজিতের সাফ কথা, ‘‘ঠিকাদারির কাজে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্যই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে দল ছাড়লাম।’’ ঝাড়গ্রাম জেলায় অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ঠিকাদারির পাশাপাশি তৃণমূলও করেন। অরণ্যশহরে এমন নেতা বেশি। তাঁদের কী হবে? জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবনাথের স্পষ্ট বার্তা, ‘‘নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। যাঁরা এ রকম করেন তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে, যে কোনও একটি ছাড়তে হবে।’’

এ সব নিয়ে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য নেতা সুখময় শতপথীর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের আসল মধু ঠিকাদারি, তোলাবাজিতেই। একটা ছাড়তে হলে লোকে দলই ছাড়বে।’’ সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার আবার বলছেন, ‘‘তৃণমূল এ রকম নির্দেশ কার্যকর করলে দলটাই শেষ হয়ে যাবে। তৃণমূল করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

TMC leader Resign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE