টগরি সাহা এবং জীবনকৃষ্ণ সাহা। নিজস্ব চিত্র।
ক্লান্ত। বিধ্বস্ত চেহারা। চিকচিক করছে চোখের কোণ। ট্রাউজ়ার্স আর টিশার্ট পরিহিত জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গাড়িতে তুলছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জওয়ান। পিছনে ফিরে এক পলকে দেখে নিলেন স্ত্রী এবং সন্তানকে। সিবিআইয়ের গাড়ির দরজা বন্ধ হতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন জীবনের স্ত্রী টগরি সাহা। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘এ কোন জীবন! এই জীবনকে তো আগে কখনও দেখিনি।’’
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার থেকে টানা ৬৪ ঘণ্টা ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার ভোরে গ্রেফতার হয়েছেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। তার মাঝে তুমুল নাটকীয়তার সাক্ষী থাকল বড়ঞার আন্দি। জিজ্ঞাসাবাদ ‘এড়াতে’ পুকুরে দু’টি মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেওয়া, পাম্প বসিয়ে পুকুর ছেঁচে একটি মোবাইল উদ্ধার— অনেক কিছুই ঘটেছে। এর পর রবিবার রাতেই জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতারির প্রক্রিয়া শুরু করে সিবিআই। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছন আরও ৪ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। রাত ২টো ৩৫ মিনিট নাগাদ কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থার ৪ জন উচ্চপদস্থ আধিকারিকও যান বিধায়কের বাড়িতে। সেখানে আরও এক দফা জীবনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ভোর ৪টে ৫০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। সেই মেমোতে স্বাক্ষর করেন বিধায়কের স্ত্রী টগরি সাহা।
এর পর ভোর সওয়া ৫টায় জীবনকে নিয়ে দুর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সেই সময় বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন টগরি। কেঁদেও ফেলেন। স্বামীকে নিয়ে সিবিআই কর্তারা চলে যাওয়ার পর তাঁকে আর বেরোতে দেখা যায়নি। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, রবিবার পুকুর থেকে যে মোবাইলটি উদ্ধার হয়, সেটি আসলে টগরিরই। সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে টগরির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে পরিবার সূত্রে খবর, স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ঠায় টিভির সামনে বসে রয়েছেন টগরি। জীবনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের লাইভ কভারেজ থেকে তা জানছেন। পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘বাড়ির কেউই এখন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না।’’
জীবন গ্রেফতার হওয়ার পর শাসক তৃণমূলকে বিঁধতে শুরু করেছে বিজেপি। মুর্শিদাবাদের বিজেপির বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির ভরকেন্দ্র মুর্শিদাবাদ। আর এই দুর্নীতি আবর্তিত হয়েছে জীবন সাহাকে কেন্দ্র করে। তাই তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে সহানুভূতির কোনও প্রশ্নই নেই।’’ এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘দল কাউকে অপরাধ করতে নির্দেশ দেয় না। তাই এতে দলের কোনও দায় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy