Advertisement
E-Paper

জেহাদে টাকা পেতে ডাকাতি দিলওয়ারদের

তদন্তকারী গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এই লুট বা ‘গনিমত’ নিয়ে পুরনো জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র সঙ্গে নব্য জেএমবি নেতাদের মতপার্থক্য রয়েছে। লুটপাট-ডাকাতি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। মতপার্থক্য শুধু লুটের সময় নিয়েই।

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৬:৩৪

তদন্তকারীদের তৎপরতা তো বেড়ে চলেছিলই। তার উপরে পুরনো সংগঠনের চাঁইদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতায় শুরু হয়ে গিয়েছিল ভাটার টান। তাই জেহাদের জন্য টাকা জোগাড় করতে গত মার্চ-এপ্রিলে কর্নাটকে অন্তত তিনটি গয়নার দোকানে ডাকাতি করেছিল নব্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গিরা। ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের হাতে ধরা পড়া দিলওয়ার হোসেনকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

এখানে-ওখানে বিস্ফোরণ, ত্রাস সৃষ্টি এবং নিরীহ মানুষের নির্বিচার রক্তপাতের মধ্য দিয়ে যারা জেহাদ চালিয়ে যেতে চায়, তাদের মুখে ডাকাতি-লুণ্ঠনের ‘নৈতিক যুক্তি’ শুনে তদন্তকারীরাও তাজ্জব! দিলওয়ার তদন্তকারীদের জানিয়েছে, জেহাদের রীতি অনুযায়ী এই ধরনের লুটপাট বা ডাকাতিকে বলা হয় ‘গনিমত’। শত্রুদের সম্পত্তি লুট করার মধ্যে কোনও অন্যায় রয়েছে বলে মনেই করে না তারা। সেই জন্যই টাকা জোগাড় করতে নির্দ্বিধায় সোনার দোকান লুট করেছে তারা। ওই সব দোকানে ডাকাতির ঘটনা নিয়ে কর্নাটক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

তদন্তকারী গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এই লুট বা ‘গনিমত’ নিয়ে পুরনো জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র সঙ্গে নব্য জেএমবি নেতাদের মতপার্থক্য রয়েছে। লুটপাট-ডাকাতি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। মতপার্থক্য শুধু লুটের সময় নিয়েই। পুরনো জেএমবি-র নেতারা মনে করে, জেহাদ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে লুটপাট চলে। কিন্তু কওসরের মতো নব্য জেএমবি-র প্রতিনিধিরা বিশ্বাস করে, জেহাদ শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে লুট-ডাকাতি করলে অন্যায় হবে না। বরং লুটের টাকাতেই জেহাদের তীব্রতা বা়ড়ানো যাবে। দিলওয়ার জেরায় জানায়, কওসরের নির্দেশ অনুসারে ওই তিনটি গয়নার দোকানে ডাকাতি করা হয়। কয়েক লক্ষ টাকার সোনা ও হিরের গয়না লুট করা হয়েছিল। পরে আরও কিছু জায়গায় ডাকাতির ছক ছিল। কিন্তু কওসর, তুহিন গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় তা ভেস্তে গিয়েছে।

২০১৪ সালে খাগড়াগ়ড়ে বিস্ফোরণের পরে এ দেশে জেএমবি-র সংগঠন বিস্তারের প্রকাশ্যে আসে। জানুয়ারিতে বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের পরে জানা যায়, এ দেশেই তৈরি হয়েছে নব্য জেএমবি। খাগড়াগড় কাণ্ডে অভিযুক্ত কওসর, সালেহিন, তুহিনেরাই তার মাথা। সংগঠনে ভিড়েছে মালদহ, মুর্শিদাবাদের কিছু নতুন মুখও। ইতিমধ্যে বেঙ্গালুরুতে কওসর এবং কেরলে তুহিনকে গ্রেফতার করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র অফিসারেরা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, খাগড়াগ়ড়ের পরে নজরদারি জোরদার হওয়ায় এবং বাংলাদেশে পুরনো জেএমবি নেতাদের সঙ্গে মতপার্থক্য বেড়ে যাওয়ায় সে-দেশ থেকে আসা টাকার জোগানে ঘাটতি পড়েছিল। তার ফলে এ দেশে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিল কওসরেরা। টাকা জুটিয়ে নাশকতা চালাতে তাই লুটের ছক কষে তারা। সেই লুট নিয়ে মতপার্থক্য বা়ড়ে। এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, ‘‘পুরনো জেএমবি ছিল আল কায়দার ঘনিষ্ঠ। কওসরেরা ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত। ফলে এরা অনেক বেশি আগ্রাসী।’’

JMB Terrorist Robbery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy