E-Paper

শিক্ষকদের ‘মাথায় বাজ’, নানা প্রশ্ন বিরোধীদেরও

চাকরিহারাদের প্রশ্ন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে পারলেন না কেন। তাঁদের আরও বক্তব্য, নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেছিলেন, এক জনেরও চাকরি যাবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ০৮:০৩
মাথায় বাজ পড়ল বলে মনে করছে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’।

মাথায় বাজ পড়ল বলে মনে করছে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছেন, তাতে মাথায় বাজ পড়ল বলে মনে করছে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’! মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে সরব হয়েছে বিরোধীরাও।

শিক্ষকদের তরফে রাকেশ আলম, হাবিবুল্লা, বৃন্দাবন ঘোষেরা সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয়েছে সরকার তাঁদের পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। ‘রিভিউ পিটিশনে’র মাধ্যমে যোগ্যদের চাকরি ফেরানোর বিষয়ে সরকারের যে ‘গাফিলতি’ ছিল, তা থেকেই যাবে বলে আশঙ্কা। পরীক্ষা সবাই দেবেন, না কি শুধু নতুনেরা দেবেন, ওবিসি সংরক্ষণের কী হবে— এগুলি ঘোষণায় স্পষ্ট হয়নি বলে মনে করছেন চাকরিহারাদের একাংশ। কয়েক জনের আরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী জানালেন যে সব গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-দের চাকরি গিয়েছে এবং যে সব শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না, তাঁদের জন্য অন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তা হলে যাঁরা অযোগ্য, তাঁদের চাকরিটাই কি মুখ্যমন্ত্রী আবার নিশ্চিত করতে চাইছেন?” চাকরিহারাদের প্রশ্ন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে পারলেন না কেন। তাঁদের আরও বক্তব্য, নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেছিলেন, এক জনেরও চাকরি যাবে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যে সেই কথা পাওয়া যায়নি। রাকেশের সংযোজন, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) পরীক্ষা ও রিভিউ, এই দু’টি বিকল্পের কথা বলেছেন। দ্বিতীয় বিকল্পটি সফল করার জন্য সরকারকে চেষ্টা করুক।”

নদিয়ার ধানতলায় ‘তিরঙ্গা যাত্রা’য় যোগ দিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন, “এসএসসি একটি স্বশাসিত সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী কী করে পরীক্ষার দিনক্ষণ এবং বিস্তারিত-সহ বিজ্ঞপ্তির কথা ঘোষণা করতে পারেন? যতই হোক, তিনি এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব!” শুভেন্দুর দাবি, “সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এসএসসি-র স্বশাসিত ক্ষমতাকে শেষ করা হল আজ।” মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, “মুখ্যমন্ত্রী চাইলে অযোগ্যদের জন্য কর্মসংস্থান করতে পারেন। তাঁকে বলব 'চৌর্যশ্রী' নামে নতুন একটি প্রকল্প আনুন! সিভিক শিক্ষক নিয়োগ করুন।”

সিপিএমের আইনজীবী-সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘সব জেনেশুনে আবার পরিকল্পনা করে ছেলেমেয়েগুলিকে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ধাপ্পা দিচ্ছেন! নতুন পরীক্ষা নিতে হবে এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে দুর্নীতিগ্রস্তদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যাবে না। তাঁদের থেকে টাকা উদ্ধার করতে হবে, নইলে সুপ্রিম কোর্ট ছেড়ে দেবে না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শুধু নতুন পরীক্ষা বা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করলেই সরকারের রেহাই নয়। সর্বোচ্চ আদালতের সম্পূর্ণ রায়টাই কার্যকর করতে হবে।’’ আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, ‘অযোগ্য’দের আলাদা না-করে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো নতুন প্রক্রিয়া শুরু করলে যোগ্য প্রার্থীদের (শুধু চাকরিহারা নন, চাকরিপ্রার্থী যাঁরা দীর্ঘ দিন অপেক্ষায় আছেন, তাঁরাও) কেউ না কেউ ফের আদালতে যাবেন এবং তাতে সরকারের এই পদক্ষেপও আবার ধাক্কা খাবে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে নানা রকম কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করছেন বলে অভিযোগ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের। বর্ধমানে এ দিন তাঁর দাবি, ‘‘চাকরি দেওয়ার নামে খুড়োর কল দেখাচ্ছেন। যে সব প্রশ্ন উঠছে, তার উত্তর দিচ্ছেন না। কেন দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকা বার হল না? কেন এক জন ধরা পড়ল না? চিট ফান্ডের মতো সবটাই ধামা চাপা দিতে চাইছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নৈতিক অধিকার নেই কে উচিত আর কে অনুচিত কাজ করবেন, তা বলার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই উচিত কাজ করেননি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের দাবি, ‘‘যাদের জন্য এত বড় কেলেঙ্কারি হল এবং এত লোকের চাকরি গেল, তাদের হাতেই আবার নিয়োগের পরীক্ষার দায়িত্ব রাখলে নানা গোলমাল, বিভ্রান্তি হবেই। এই জায়গাটা সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিলে ভাল হত। চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম, তখনও আমরা বলেছিলাম রাজ্য সরকার এবং প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা মোটেও ভরসা রাখার মতো নয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC West Bengal SSC Scam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy