ওএমআরে গলদ থাকায় ‘যোগ্য’দের তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে নাম। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে পৃথক অবস্থানে বসেছেন ‘অযোগ্যেরা’। অন্য দিকে, এখনও এসএসসি দফতরের সামনে অবস্থানে বসে রয়েছেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের একাংশ। বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনে পা দিয়েছে তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। বিকেলে এসএসসি দফতরের সামনে উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লেন সেই ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ চাকরিহারারা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র ৫০০ মিটারের ব্যবধানে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলনের দুই ভিন্ন ছবি দেখা যাচ্ছিল। ওএমআরে সমস্যা থাকায় যাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এসএসসি ভবনের সামনে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, যেখানে আদালতে ওএমআরে কারচুপির বিষয়টি এখনও প্রমাণিত হয়নি, সেখানে এসএসসি কী করে তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে দাগিয়ে দিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারে? এই নিয়ে এসএসসি ভবনের অদূরেই পৃথক অবস্থানে বসেন তাঁরা। এ হেন এক ‘অযোগ্য’ শিক্ষক কমলেশ কাপাট। কমলেশের কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের ৩ এপ্রিলের রায়ে ১২১২ জনকে অযোগ্য (টেন্টেড) বলা হয়েছিল। আমাদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছিল, ৪০৯১ জনের ওএমআরে গলদ রয়েছে। অথচ কিছু মানুষের চাপে ডিআই অফিসে যে সর্বশেষ তালিকা পাঠানো হল, তাতে আমাদের নাম বাদ দেওয়া হল।’’ এমনই নানা অভিযোগ নিয়ে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান বিক্ষোভ এখনও চলছে। চতুর্থ দিনে লোকসংখ্যা আগের তুলনায় খানিক কমলেও আন্দোলনের আঁচ কমেনি। প্রবল গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছেন। বুধবার ‘যোগ্য’দের তালিকা দেখার পর বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলমুখীও হতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। চাকরিহারা এক শিক্ষিকা সঙ্গীতা মণ্ডল বলেছেন, ‘‘অযোগ্যদের যত ক্ষণ না বাদ দেওয়া হচ্ছে, তত ক্ষণ আন্দোলন চলবে।’’
আপাতত এসএসসি ভবনের অদূরে একে অপরের থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরেই বসে রয়েছেন চাকরিহারাদের দু’পক্ষ। মাঝেমধ্যেই একে অপরকে লক্ষ্য করে বাক্যবাণ চলছে। মাঝে অবশ্য ব্যারিকেড। রয়েছে পুলিশ প্রহরাও। এর নেপথ্যে যদিও পুলিশের অপরিণামদর্শিতাই দেখছেন চাকরিহারাদের একাংশ। চাকরিহারাদের প্রতিনিধি চিন্ময় মণ্ডল বলছেন, ‘‘পুলিশ কী ভাবে একই জায়গায় দু’পক্ষকে বসার অনুমতি দিল? এখন যদি কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যায়, তার দায়িত্ব কে নেবে?’’
আরও পড়ুন:
তবে কে ‘যোগ্য’, কে ‘অযোগ্য’, সে সব এখনও দিনের আলোর মতো স্পষ্ট নয়। রাজ্যের তরফে আগেই ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ নন, এমন ১৭ হাজার ২০৬ জন শিক্ষকের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই তালিকা সুপ্রিম কোর্টেও জমা দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। বুধবার সেখান থেকে আরও ১৮০৩ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র-সহ একাধিক বিষয়ে সমস্যা রয়েছে বলে জানতে পেরেছে পর্ষদ। তাঁদের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৫,৪০৩। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই শিক্ষকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং বেতন পাবেন।